কলকাতার চিঠি-লন্ডন, সুইজারল্যান্ড ও কলকাতার কথা by অমর সাহা
২০১০ সালের কথা। কলকাতা পৌর করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য কোমর বেঁধে একদিকে মাঠে নেমেছে পৌর করপোরেশনের ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট আর অন্যদিকে বিরোধী তৃণমূল এবং জাতীয় কংগ্রেস। ইতিমধ্যে ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আশাতীত ফলাফল করে কলকাতা করপোরেশন ফের দখল করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে তৃণমূল।
মাঠেও নেমে পড়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সভা-সমিতি করছেন পৌর এলাকাজুড়ে। এই নির্বাচনী জনসভায় মমতা নতুন করে ঘোষণা দেন, তাঁর দল ক্ষমতায় গেলে তিনি কলকাতাকে লন্ডন বানাবেন। অর্থা ৎ লন্ডনের ধাঁচে সাজিয়ে তুলবেন কলকাতাকে। এই ঘোষণায় সাড়াও দেন পৌরবাসী। মমতার দল নির্বাচনে জয়ী হয়। মেয়র হন তাঁর দলের নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়। হেরে যায় বামফ্রন্ট।
এরপর ২০১১ সালের কথা। এসে যায় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচন। পঞ্চায়েত, লোকসভা এবং পৌরসভা নির্বাচনে ব্যাপক সাফল্যের পর মমতা স্বপ্ন দেখেন বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে তাঁর দলের ক্ষমতা দখলের। সেই লক্ষ্য নিয়ে বিধানসভা নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়েন মমতা। এই নির্বাচনে মমতা কলকাতাকে লন্ডন বানানোর পাশাপাশি আরেকটি নতুন ঘোষণা যোগ করেন। দ্বিতীয় ঘোষণাটি হলো উত্তরবঙ্গকে তিনি সুইজারল্যান্ড বানাবেন। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গই হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক নৈসর্গিক অঞ্চল। আছে এখানে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি আর ডুয়ার্সের মতো প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর অঞ্চল। পাহাড়, নদী, জঙ্গল, অভয়ারণ্য আর বরফের হাতছানি। এবারও মমতার এই ঘোষণাকে লুফে নেন উত্তরবঙ্গের মানুষজন। মমতা নির্বাচনী ময়দানে নেমে ঘোষণা দেন, তাঁর দল ক্ষমতায় এলে কলকাতাকে লন্ডন আর উত্তরবঙ্গকে সুইজারল্যান্ড বানাবেন। ফল, মমতা বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হন। এখন তিনি এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। হর্তাকর্তা।
গত ২০ মে মমতা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন পশ্চিমবঙ্গের। তারপর শুরু করেন কলকাতা এবং উত্তরবঙ্গকে লন্ডন ও সুইজারল্যান্ড বানানোর কাজ।
কিন্তু কেমন শহর লন্ডন বা কেমন সুইজারল্যান্ড সে কথা এখনো অধিকাংশ মানুষ জানেন না। শুধু জানেন লন্ডন এবং সুইজারল্যান্ড স্বপ্নের দেশ। তাই কলকাতা ও উত্তরবঙ্গকে সেই স্বপ্নের দেশ হিসেবে দেখার জন্য প্রহর গুনতে থাকে রাজ্যবাসী।
মমতাও ঘোষণা দেন নতুন করে সাজাতে হবে কলকাতা ও উত্তরবঙ্গকে। উত্তরবঙ্গের গৌরব দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির চা ও কমলা লেবু, শিলিগুড়ির আনারস, দুই দিনাজপুরের সুস্বাদু চাল এবং মালদহের আমের গৌরবকে সামনে রেখেই নতুনভাবে সাজবে উত্তরবঙ্গ।
আর কলকাতা? মমতা চাইছেন বদলে দেবেন কলকাতাকে। ঝা চকচকে শহর হবে কলকাতা। আলোর রোশনাই ছড়িয়ে থাকবে কলকাতাজুড়ে। টেমস নদীর আদলে হাওড়া নদীর দুই তীর সাজবে। পাকা করা হবে দুই তীর। সংস্কার হবে নদীর ১৪টি ঘাট। নদীর তল দিয়ে চলবে পাতাল ট্রেন। নদীর ওপর দিয়ে রোপওয়েতে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। নদীর বুকে থাকবে ভাসমান জলযান। পর্যটকদের জন্য। থাকবে নদীর বুকে ওয়াটার স্পোর্টস। থাকবে লন্ডনের ‘লন্ডন আই’-এর ধাঁচে ‘কলকাতা আই’। এতে চড়ে গোটা কলকাতাকে দেখা যাবে ওপর থেকে। সাজানো হবে গোটা শহর আলো দিয়ে। রাস্তাঘাট উন্নত করা হবে। উন্নত করা হবে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো। ঐতিহাসিক স্থাপনা। শহরজুড়ে চলবে নতুন নতুন যানবাহন। শহরের মাঝে লন্ডনের মতো তৈরি হবে ‘ফিনান্সিয়াল হাব’। উত্তরবঙ্গও সাজবে নতুন রূপে। যেমনটা রয়েছে সুইজারল্যান্ডে। ইতিমধ্যে মমতা এই লক্ষ্যে কাজও শুরু করেছেন। বিশেষজ্ঞ দিয়ে তৈরি করছেন শহরের নতুন নকশা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। ইতিমধ্যে কলকাতায় এসে ঘুরেও গেছে লন্ডনের বাণিজ্যিক এলাকার প্রধান ডেভিড বিয়ারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। এই প্রতিনিধিদলও আশ্বাস দিয়ে গেছে রাজ্য সরকারকে, তারা কলকাতাকে লন্ডন বানানোর সার্বিক সাহায্য ও সহযোগিতা করবে।
আর লন্ডনের ধাঁচে কলকাতা হচ্ছে এতে সন্তুষ্ট হলেও আক্ষেপ করেছে ফ্রান্স। ফ্রান্সের কনসাল জেনারেল জি লুইস রিস্তো রাজ্য সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করে মহাকরণে সাংবাদিকদের কাছে আক্ষেপ করে বলেছেন, কেন কলকাতা প্যারিস হতে পারবে না? এদিন তিনি কলকাতাকে আলো দিয়ে সৌর্ন্দযায়নে ফ্রান্সের প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তাবও দেন। তিনি আরও বলেছেন, ফ্রান্স এখন দিল্লি এবং মুম্বাই শহরকে আলো দিয়ে সাজানোর দায়িত্ব নিয়েছে। আমরাও চাই প্যারিসের ধাঁচে হোক কলকাতার আলোর সৌন্দর্যায়ন। যদিও তিনি এ কথাও বলেছেন তাঁর সরকার কলকাতাকে লন্ডন বানানোর জন্য সার্বিক সহযোগিতা করবে।
এদিকে মমতা তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য এবার আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। যদিও বিরোধীরা মমতার কলকাতাকে লন্ডন বানানোর এবং উত্তরবঙ্গকে সুইজারল্যান্ড বানানোর প্রতিশ্রুতিকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। তাদের কথা, মুখে বলা যত সহজ কাজে বাস্তবায়িত করা তত কঠিন। কলকাতার মতো ঘিঞ্জি শহরকে বস্তিমুক্ত করে লন্ডন বানানো যেমন কঠিন হবে, তেমনি কলকাতার পুরোনো কাঠামো বদলে নতুন কাঠামোয় রূপান্তরিত করাও কঠিন কাজই। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গকে সুইজারল্যান্ড করা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তবুও বিরোধীরা অপেক্ষা করছে মমতার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দিকে।
অন্যদিকে মমতার শরিক খোদ কংগ্রেস কিন্তু মমতার এই লন্ডন আর সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্নকে কটাক্ষ করতে পিছপা হয়নি। কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী তো বলেই দিয়েছেন, এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারলে রাজ্যবাসীর কাছে জবাবদিহি করতে হবে মমতাকে। যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা পালন করতে হবে। কলকাতাকে লন্ডন বানাতে না পারলে বা উত্তরবঙ্গকে সুইজারল্যান্ড বানাতে না পারলে তার জবাব দিতে হবে। সুইজারল্যান্ড না হয়ে যদি ‘গোর্খাল্যান্ড’ হয়ে যায় তারও জবাব দিতে হবে। অধীর চৌধুরী ইঙ্গিত দিয়েছেন, মমতা যেভাবে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ‘গোর্খাল্যান্ড’ আন্দোলনের ব্যাপারে জনমুক্তি মোর্চাকে পরোক্ষভাবে ‘সাহায্য’ করছেন, তাতে শেষ পর্যন্ত এই উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং শেষ পর্যন্ত ‘গোর্খাল্যান্ড’ রাজ্য না হয়ে যায়?
তাই মমতা লন্ডন ও সুইজারল্যান্ড বানানোর যে স্বপ্ন দেখছেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হোক, সেটাই চাইছেন রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ। তবে টাকা কোথায়? এই বিপুল আর্থিক খরচ জোগানো যে কঠিন হবে সেটি ভেবে কিন্তু মমতা পিছপা হচ্ছেন না। মাঠে নেমেছেন। লক্ষ্য একটাই তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণের। পারবেন কি পারবেন না, সেটি পরের কথা। তবুও এ কথা বলা যায় মমতার এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। সাহসী উদ্যোগ।
অমর সাহা: প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি।
এরপর ২০১১ সালের কথা। এসে যায় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচন। পঞ্চায়েত, লোকসভা এবং পৌরসভা নির্বাচনে ব্যাপক সাফল্যের পর মমতা স্বপ্ন দেখেন বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে তাঁর দলের ক্ষমতা দখলের। সেই লক্ষ্য নিয়ে বিধানসভা নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়েন মমতা। এই নির্বাচনে মমতা কলকাতাকে লন্ডন বানানোর পাশাপাশি আরেকটি নতুন ঘোষণা যোগ করেন। দ্বিতীয় ঘোষণাটি হলো উত্তরবঙ্গকে তিনি সুইজারল্যান্ড বানাবেন। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গই হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক নৈসর্গিক অঞ্চল। আছে এখানে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি আর ডুয়ার্সের মতো প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর অঞ্চল। পাহাড়, নদী, জঙ্গল, অভয়ারণ্য আর বরফের হাতছানি। এবারও মমতার এই ঘোষণাকে লুফে নেন উত্তরবঙ্গের মানুষজন। মমতা নির্বাচনী ময়দানে নেমে ঘোষণা দেন, তাঁর দল ক্ষমতায় এলে কলকাতাকে লন্ডন আর উত্তরবঙ্গকে সুইজারল্যান্ড বানাবেন। ফল, মমতা বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হন। এখন তিনি এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। হর্তাকর্তা।
গত ২০ মে মমতা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন পশ্চিমবঙ্গের। তারপর শুরু করেন কলকাতা এবং উত্তরবঙ্গকে লন্ডন ও সুইজারল্যান্ড বানানোর কাজ।
কিন্তু কেমন শহর লন্ডন বা কেমন সুইজারল্যান্ড সে কথা এখনো অধিকাংশ মানুষ জানেন না। শুধু জানেন লন্ডন এবং সুইজারল্যান্ড স্বপ্নের দেশ। তাই কলকাতা ও উত্তরবঙ্গকে সেই স্বপ্নের দেশ হিসেবে দেখার জন্য প্রহর গুনতে থাকে রাজ্যবাসী।
মমতাও ঘোষণা দেন নতুন করে সাজাতে হবে কলকাতা ও উত্তরবঙ্গকে। উত্তরবঙ্গের গৌরব দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির চা ও কমলা লেবু, শিলিগুড়ির আনারস, দুই দিনাজপুরের সুস্বাদু চাল এবং মালদহের আমের গৌরবকে সামনে রেখেই নতুনভাবে সাজবে উত্তরবঙ্গ।
আর কলকাতা? মমতা চাইছেন বদলে দেবেন কলকাতাকে। ঝা চকচকে শহর হবে কলকাতা। আলোর রোশনাই ছড়িয়ে থাকবে কলকাতাজুড়ে। টেমস নদীর আদলে হাওড়া নদীর দুই তীর সাজবে। পাকা করা হবে দুই তীর। সংস্কার হবে নদীর ১৪টি ঘাট। নদীর তল দিয়ে চলবে পাতাল ট্রেন। নদীর ওপর দিয়ে রোপওয়েতে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। নদীর বুকে থাকবে ভাসমান জলযান। পর্যটকদের জন্য। থাকবে নদীর বুকে ওয়াটার স্পোর্টস। থাকবে লন্ডনের ‘লন্ডন আই’-এর ধাঁচে ‘কলকাতা আই’। এতে চড়ে গোটা কলকাতাকে দেখা যাবে ওপর থেকে। সাজানো হবে গোটা শহর আলো দিয়ে। রাস্তাঘাট উন্নত করা হবে। উন্নত করা হবে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো। ঐতিহাসিক স্থাপনা। শহরজুড়ে চলবে নতুন নতুন যানবাহন। শহরের মাঝে লন্ডনের মতো তৈরি হবে ‘ফিনান্সিয়াল হাব’। উত্তরবঙ্গও সাজবে নতুন রূপে। যেমনটা রয়েছে সুইজারল্যান্ডে। ইতিমধ্যে মমতা এই লক্ষ্যে কাজও শুরু করেছেন। বিশেষজ্ঞ দিয়ে তৈরি করছেন শহরের নতুন নকশা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। ইতিমধ্যে কলকাতায় এসে ঘুরেও গেছে লন্ডনের বাণিজ্যিক এলাকার প্রধান ডেভিড বিয়ারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। এই প্রতিনিধিদলও আশ্বাস দিয়ে গেছে রাজ্য সরকারকে, তারা কলকাতাকে লন্ডন বানানোর সার্বিক সাহায্য ও সহযোগিতা করবে।
আর লন্ডনের ধাঁচে কলকাতা হচ্ছে এতে সন্তুষ্ট হলেও আক্ষেপ করেছে ফ্রান্স। ফ্রান্সের কনসাল জেনারেল জি লুইস রিস্তো রাজ্য সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করে মহাকরণে সাংবাদিকদের কাছে আক্ষেপ করে বলেছেন, কেন কলকাতা প্যারিস হতে পারবে না? এদিন তিনি কলকাতাকে আলো দিয়ে সৌর্ন্দযায়নে ফ্রান্সের প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তাবও দেন। তিনি আরও বলেছেন, ফ্রান্স এখন দিল্লি এবং মুম্বাই শহরকে আলো দিয়ে সাজানোর দায়িত্ব নিয়েছে। আমরাও চাই প্যারিসের ধাঁচে হোক কলকাতার আলোর সৌন্দর্যায়ন। যদিও তিনি এ কথাও বলেছেন তাঁর সরকার কলকাতাকে লন্ডন বানানোর জন্য সার্বিক সহযোগিতা করবে।
এদিকে মমতা তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য এবার আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। যদিও বিরোধীরা মমতার কলকাতাকে লন্ডন বানানোর এবং উত্তরবঙ্গকে সুইজারল্যান্ড বানানোর প্রতিশ্রুতিকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। তাদের কথা, মুখে বলা যত সহজ কাজে বাস্তবায়িত করা তত কঠিন। কলকাতার মতো ঘিঞ্জি শহরকে বস্তিমুক্ত করে লন্ডন বানানো যেমন কঠিন হবে, তেমনি কলকাতার পুরোনো কাঠামো বদলে নতুন কাঠামোয় রূপান্তরিত করাও কঠিন কাজই। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গকে সুইজারল্যান্ড করা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তবুও বিরোধীরা অপেক্ষা করছে মমতার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দিকে।
অন্যদিকে মমতার শরিক খোদ কংগ্রেস কিন্তু মমতার এই লন্ডন আর সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্নকে কটাক্ষ করতে পিছপা হয়নি। কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী তো বলেই দিয়েছেন, এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারলে রাজ্যবাসীর কাছে জবাবদিহি করতে হবে মমতাকে। যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা পালন করতে হবে। কলকাতাকে লন্ডন বানাতে না পারলে বা উত্তরবঙ্গকে সুইজারল্যান্ড বানাতে না পারলে তার জবাব দিতে হবে। সুইজারল্যান্ড না হয়ে যদি ‘গোর্খাল্যান্ড’ হয়ে যায় তারও জবাব দিতে হবে। অধীর চৌধুরী ইঙ্গিত দিয়েছেন, মমতা যেভাবে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ‘গোর্খাল্যান্ড’ আন্দোলনের ব্যাপারে জনমুক্তি মোর্চাকে পরোক্ষভাবে ‘সাহায্য’ করছেন, তাতে শেষ পর্যন্ত এই উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং শেষ পর্যন্ত ‘গোর্খাল্যান্ড’ রাজ্য না হয়ে যায়?
তাই মমতা লন্ডন ও সুইজারল্যান্ড বানানোর যে স্বপ্ন দেখছেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হোক, সেটাই চাইছেন রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ। তবে টাকা কোথায়? এই বিপুল আর্থিক খরচ জোগানো যে কঠিন হবে সেটি ভেবে কিন্তু মমতা পিছপা হচ্ছেন না। মাঠে নেমেছেন। লক্ষ্য একটাই তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণের। পারবেন কি পারবেন না, সেটি পরের কথা। তবুও এ কথা বলা যায় মমতার এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। সাহসী উদ্যোগ।
অমর সাহা: প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি।
No comments