মাঠে ফিরেছেন আগের মাশরাফিই
এমন বিশাল ছক্কা এর আগে কেউ দেখেনি মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। মোহামেডানের বাঁহাতি স্পিনার অমিতাভ নয়নের বলে সেই ছক্কা উড়ে গিয়ে লাগল গ্র্যান্ড স্টান্ডের ছাদের কার্নিশে। খেলা শেষে মাশরাফি বিন মুর্তজাও বললেন, ‘এত বড় ছক্কা আগে মারিনি।’
১৬ বলে ৮ রান—১৪তম বলে ওই ছক্কাটায় যেন চোটমুক্ত মাশরাফির আগমনবার্তা। এরপর নতুন বল হাতে টানা চার ওভার বল করেও জানিয়ে দিলেন, বল তার পথ ভোলেনি। মাঠের বাইরে বসে নির্বাচক হাবিবুল বাশারের প্রশংসা, ‘এত দিন পর ফিরে যেটা করা উচিত সেটাই করছে, লাইন-লেংথ ঠিক রাখছে।’
বিমানের ৩৯.১ ওভারের ইনিংসের চার ওভারের মতো বাইরে ছিলেন, বাকি সময়টা মাঠে। বোলিংয়ে নতুন বলে ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে কোনো উইকেট নেই। ওই ২০ রানের ১৮-ই বাউন্ডারি থেকে। মাশরাফির দ্বিতীয় ওভারের ছয়টি বলই খেললেন মোহামেডানের ওপেনার ইমরুল কায়েস। চতুর্থ ও পঞ্চম বলে লং অন ও স্কয়ার লেগ দিয়ে দুটি ৪ মারলেন। তৃতীয় ওভারটাও হলো মাশরাফি বনাম ইমরুল, পঞ্চম বলে বাউন্ডারি। মাশরাফির শেষ ওভারটাও খেললেন ইমরুল, পঞ্চম বলে ছক্কা মারলেন স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে। ম্যাচে মাশরাফি যে ২৪টি বল করেছেন, তার ২১টিই খেলেছেন ইমরুল। বাকি তিন বল আরেক ওপেনার ইমতিয়াজ হোসেন।
মনে হতে পারে, মাশরাফিকে বুঝি উড়িয়ে দিয়েছেন ইমরুল। দারুণ ফর্মে থাকা জাতীয় দলের ওপেনার নিজে কিন্তু বলছেন না সেটা, ‘খুবই অবাক হয়েছি আমি...এত দিন পর খেলায় ফিরে একটা মানুষ এত ভালো বল কীভাবে করতে পারে! প্রথম ওভারে পেস একটু কম থাকলেও এখনো ওনার সেই আগের মতো লাইন-লেংথ। পরে পেসও বেড়েছে। চার-ছক্কা তো মেরেছি জোর করে। কী করব, সিঙ্গেল নিতে পারছিলাম না!’
অস্ত্রোপচারের প্রায় সাড়ে আট মাস পর মাঠে ফিরে ভালো লাগছে মাশরাফির। চার ওভারের স্পেলটা ঠিকঠাক মতো করতে পেরেছেন, সুস্থ থেকে মাঠ ছাড়তে পেরেছেন—এসবই বড় তাঁর কাছে। খেলা শেষে নিজেও বলেছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার দিকে না গিয়ে ঠিক জায়গায় বল ফেলার চেষ্টাই বেশি করেছেন, ‘প্র্যাকটিসে অনেক বড় বড় নো বল হচ্ছিল, এখানে এসে সেগুলো অ্যাডজাস্ট করতে পেরেছি। নো বল করিনি। বেশি কিছু না করে শুধু জায়গায় বল ফেলতে চেয়েছি। রান আপ থেকে শুরু করে ডেলিভারি, ফলো থ্রু সবকিছু আগের মতো ফিরিয়ে আনার দিকেই খেয়াল ছিল বেশি।’
শারীরিক অবস্থা দেখে জাতীয় দলের ফিজিও বিভব সিংই ঠিক করে দেবেন, বিমানের হয়ে পরের ম্যাচটা কীভাবে খেলবেন মাশরাফি। তবে মাশরাফি আশাবাদী। আত্মবিশ্বাসটাও নাকি অনেক বেশি এবার, ‘আমার সমস্যা ছিল পিকআপে। ওটাতেই আমি ইনজুরিতে পড়ি। তখন থেকে আত্মবিশ্বাসও কমে যায়। ওটা ঠিক করলে আমার মনে হয় বোলিংয়ের অনেক কিছু ঠিক হয়ে যাবে। আগের ফেরাগুলোর চেয়ে এবার আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি। হয়তো রিহ্যাবটা ভালো হয়েছে।’
তার পরও খেলার আগে ভয় ছিল। সেই ভয়, যেটা এর আগে জয় করেছেন বহুবার। কালও মাঠে নামার আগে মনকে সাহস দিয়ে বলেছেন, ‘ম্যাচের আগে একবার মনে হয়েছিল, যদি ব্যথা পাই...। পরে ভাবলাম, ব্যথা তো আগেও পেয়েছি, যা হওয়ার হবে।’
এটাও বোধহয় জানান দিচ্ছে, মাঠে ফিরেছেন আগের মাশরাফিই।
No comments