পবিত্র কোরআনের আলো-ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে আহরণ করা ও পুঞ্জীভূত করে রাখার শাস্তি ভয়াবহ
৩৩. হুয়াল্লাযী আরছালা রাসূলাহূ বিল্হুদা- ওয়া দীনিল্ হাক্কি লিইউয্হিরাহূ আলাদ্ দীনি কুলি্লহী ওয়া লাও কারিহাল মুশরিকীন। ৩৪. ইয়া-আইয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানূ ইন্না কাছীরাম্ মিনাল্ আহ্বা-রি ওয়ার্রুহ্বা-নি লাইয়া'কুলূনা আমওয়া-লান না-ছি বিল্বা-তি্বলি ওয়া ইয়াসুদ্দূনা আ'ন ছাবীলিল্লা-হি্; ওয়াল্লাযীনা ইয়াক্নিযূনায্ যাহাবা ওয়াল্ফিদ্দাতা ওয়া লা ইউনফিক্বূনাহা ফী ছাবীলিল্লাহি ফাবাশ্শিরহুম বিআ'যা-বিন আলীম।
৩৫. ইয়াওমা ইউহ্মা আ'লাইহা ফী না-রি জাহান্নামা ফাতুকওয়া বিহা জিবা-হুহুম্ ওয়া জুনূবুহুম ওয়া যুহূরুহুম; হা-যাম, মা কানায্তুম লিআনফুছিকুম ফাযূক্বূ মা কুনতুম তাক্নিযূন।
৩৬. ইন্না ই'দ্দাতাশ্ শুহূরি ই'নদাল্লা-হি ইছ্না- আ'শারা শাহ্রান ফী কিতাবিল্লাহি ইয়াওমা খালাক্বাস সামা-ওয়াতি ওয়াল্আরদ্বা মিনহা- আরবাআ'তুন হুরুমুন; যা-লিকা দ্বীনুল ক্বায়্যিমু ফালা তায্লিমূ ফীহিন্না আনফুছাকুম ওয়াক্বা-তিলুল মুশরিকীনা কা-ফ্ফাতান কামা- ইউক্বা-তিলূনাকুম কা-ফ্ফাহ্; ওয়া'লামূ আন্নাল্লা-হা মাআ'ল মুত্তাক্বীন। [সুরা : আত্ তাওবা, আয়াত : ৩৩-৩৬]
অনুবাদ : ৩৩. তিনিই তো হিদায়াত ও সত্য ধর্মসহ তাঁর রাসুলকে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি অন্য সব ধর্মের ওপর একে জয়যুক্ত করে দিতে পারেন; মুশরিকরা এটাকে যতই অপ্রিয় মনে করুক না কেন। ৩৪. হে মুমিনরা, (ইয়াহুদি) আহবার ও (খ্রিস্টান) রাহিবদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে, যারা অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভোগদখল করে এবং মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে। যারা সোনা-রুপা পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও।
৩৫. (এমন একদিন আসবে) যেদিন সে ধন-সম্পদ জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, তারপর এ দিয়ে তাদের কপালে, পাঁজরে ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) এই হচ্ছে সেই সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং যা তোমরা পুঞ্জীভূত করতে তার স্বাদ ভোগ করো। ৩৬. প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারোটি, যা তিনি তার প্রকৃতিতে সেই দিন থেকে চালু করে দিয়েছেন যে দিন থেকে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে চারটি মাস বিশেষ মর্যাদায় নিষিদ্ধ মাস। এটাই চির প্রতিষ্ঠিত ধর্ম। সুতরাং তোমরা সেসব মাসে নিজেদের ওপর অবিচার কোরো না। তোমরা দলবদ্ধ হয়ে মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করো, যেমন তারা দলবদ্ধ হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। জেনে রেখো, আল্লাহ নিশ্চিতভাবে দায়িত্বনিষ্ঠদের সঙ্গে আছেন।
ব্যাখ্যা : ৩৩ নম্বর আয়াত আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এসেছে। এতে ইসলাম ধর্ম যে সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এসেছে এবং মিথ্যা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইসলাম যে জয়যুক্ত হবে এর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আগের কয়েকটি আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের ধর্মকে অনেকাংশেই বিকৃত করে ফেলেছিল। আর এই বিকৃত করার কাজটা মূলত করেছে তাদের ধর্মগুরুরা তথা আহবার ও রাহিবরা। তারা যে শুধু মনগড়াভাবে বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাত ও ইঞ্জিলকে ব্যাখ্যা করত তা-ই নয়, তারা এর মধ্যে নিজেদের মনগড়া বিধিবিধানও ঢুকিয়ে দিত। ৩৪ নম্বর আয়াতে আবার সেই আহবার (ইহুদি ধর্মগুরু) ও রাহিবদের (খ্রিস্টান ধর্মগুরু) প্রসঙ্গ নিয়ে আসা হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ হাতিয়ে নিত এবং এর মধ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্তও করত। প্রধানত তারা যা করত তা হলো, মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে তাদের অন্যায়-অবিচার বা অবৈধ স্বার্থের পক্ষে ফতোয়া দিত ধর্মের মূলবাণী পাল্টে। এভাবে তারা একদিকে ধর্মের বিধিবিধানগুলোকে বিকৃত করে ফেলে, অন্যদিকে ধর্মের নামে অন্যায়-অবিচারে প্রশ্রয় সৃষ্টি করে। এর ভেতর দিয়ে তারা একদিকে ধর্মগুরুর উচ্চ সম্মানের আসনও ধরে রাখে, অন্যদিকে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল ধন-সম্পদের মালিকও হয়ে ওঠে। বলা বাহুল্য, সে যুগে ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মের ধর্মগুরুরা বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক ছিল এবং সেসব সমাজে এই ধারা দীর্ঘকাল অব্যাহত ছিল। তারা ধর্মের নাম ভাঙিয়ে সম্পদ কুক্ষিগত করত এবং ধর্মের বিধান অনুযায়ী তা ব্যয় করত না। এই আয়াতের দ্বারা তাদের সতর্ক করা হয়েছে। তবে এই আয়াতের মর্ম সর্বকালীন ও সর্বজনীন। সমগ্র মুসলিম সমাজের জন্যও এই শিক্ষা অনিবার্যভাবে প্রযোজ্য। যারা ধন-সম্পদ শুধু কুক্ষিগত করে এবং তা সৎপথে খরচ করে না ও জাকাত আদায় করে না, তাদের জন্য কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। ৩৬ নম্বর আয়াতের তাৎপর্য পরের সংখ্যায় বর্ণিত হবে ইনশাআল্লাহ।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
৩৬. ইন্না ই'দ্দাতাশ্ শুহূরি ই'নদাল্লা-হি ইছ্না- আ'শারা শাহ্রান ফী কিতাবিল্লাহি ইয়াওমা খালাক্বাস সামা-ওয়াতি ওয়াল্আরদ্বা মিনহা- আরবাআ'তুন হুরুমুন; যা-লিকা দ্বীনুল ক্বায়্যিমু ফালা তায্লিমূ ফীহিন্না আনফুছাকুম ওয়াক্বা-তিলুল মুশরিকীনা কা-ফ্ফাতান কামা- ইউক্বা-তিলূনাকুম কা-ফ্ফাহ্; ওয়া'লামূ আন্নাল্লা-হা মাআ'ল মুত্তাক্বীন। [সুরা : আত্ তাওবা, আয়াত : ৩৩-৩৬]
অনুবাদ : ৩৩. তিনিই তো হিদায়াত ও সত্য ধর্মসহ তাঁর রাসুলকে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি অন্য সব ধর্মের ওপর একে জয়যুক্ত করে দিতে পারেন; মুশরিকরা এটাকে যতই অপ্রিয় মনে করুক না কেন। ৩৪. হে মুমিনরা, (ইয়াহুদি) আহবার ও (খ্রিস্টান) রাহিবদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে, যারা অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভোগদখল করে এবং মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে। যারা সোনা-রুপা পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও।
৩৫. (এমন একদিন আসবে) যেদিন সে ধন-সম্পদ জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, তারপর এ দিয়ে তাদের কপালে, পাঁজরে ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) এই হচ্ছে সেই সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং যা তোমরা পুঞ্জীভূত করতে তার স্বাদ ভোগ করো। ৩৬. প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারোটি, যা তিনি তার প্রকৃতিতে সেই দিন থেকে চালু করে দিয়েছেন যে দিন থেকে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে চারটি মাস বিশেষ মর্যাদায় নিষিদ্ধ মাস। এটাই চির প্রতিষ্ঠিত ধর্ম। সুতরাং তোমরা সেসব মাসে নিজেদের ওপর অবিচার কোরো না। তোমরা দলবদ্ধ হয়ে মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করো, যেমন তারা দলবদ্ধ হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। জেনে রেখো, আল্লাহ নিশ্চিতভাবে দায়িত্বনিষ্ঠদের সঙ্গে আছেন।
ব্যাখ্যা : ৩৩ নম্বর আয়াত আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এসেছে। এতে ইসলাম ধর্ম যে সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এসেছে এবং মিথ্যা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইসলাম যে জয়যুক্ত হবে এর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আগের কয়েকটি আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের ধর্মকে অনেকাংশেই বিকৃত করে ফেলেছিল। আর এই বিকৃত করার কাজটা মূলত করেছে তাদের ধর্মগুরুরা তথা আহবার ও রাহিবরা। তারা যে শুধু মনগড়াভাবে বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাত ও ইঞ্জিলকে ব্যাখ্যা করত তা-ই নয়, তারা এর মধ্যে নিজেদের মনগড়া বিধিবিধানও ঢুকিয়ে দিত। ৩৪ নম্বর আয়াতে আবার সেই আহবার (ইহুদি ধর্মগুরু) ও রাহিবদের (খ্রিস্টান ধর্মগুরু) প্রসঙ্গ নিয়ে আসা হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ হাতিয়ে নিত এবং এর মধ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্তও করত। প্রধানত তারা যা করত তা হলো, মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে তাদের অন্যায়-অবিচার বা অবৈধ স্বার্থের পক্ষে ফতোয়া দিত ধর্মের মূলবাণী পাল্টে। এভাবে তারা একদিকে ধর্মের বিধিবিধানগুলোকে বিকৃত করে ফেলে, অন্যদিকে ধর্মের নামে অন্যায়-অবিচারে প্রশ্রয় সৃষ্টি করে। এর ভেতর দিয়ে তারা একদিকে ধর্মগুরুর উচ্চ সম্মানের আসনও ধরে রাখে, অন্যদিকে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল ধন-সম্পদের মালিকও হয়ে ওঠে। বলা বাহুল্য, সে যুগে ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মের ধর্মগুরুরা বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক ছিল এবং সেসব সমাজে এই ধারা দীর্ঘকাল অব্যাহত ছিল। তারা ধর্মের নাম ভাঙিয়ে সম্পদ কুক্ষিগত করত এবং ধর্মের বিধান অনুযায়ী তা ব্যয় করত না। এই আয়াতের দ্বারা তাদের সতর্ক করা হয়েছে। তবে এই আয়াতের মর্ম সর্বকালীন ও সর্বজনীন। সমগ্র মুসলিম সমাজের জন্যও এই শিক্ষা অনিবার্যভাবে প্রযোজ্য। যারা ধন-সম্পদ শুধু কুক্ষিগত করে এবং তা সৎপথে খরচ করে না ও জাকাত আদায় করে না, তাদের জন্য কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। ৩৬ নম্বর আয়াতের তাৎপর্য পরের সংখ্যায় বর্ণিত হবে ইনশাআল্লাহ।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments