দরপতনের ধারায় শেয়ারবাজার-বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
আবারও আলোচনায় শেয়ারবাজার। এখন পর্যন্ত বছরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় বোধ হয় শেয়ারবাজার। গত বছরের শেষার্ধে এসে গোঁত্তা খাওয়া ঊর্ধ্বগতির শেয়ারবাজারকে আর সেভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে না। কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না শেয়ারবাজারের ধস। আশঙ্কাজনকভাবে সূচক পড়ে যাচ্ছে। গতকাল সকালেই সূচক নেমে যায় ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে।
বাজারের এই পতনশীল অবস্থায় অনেক বিনিয়োগকারীই এখন নিজেদের পুঁজি খোয়ানোর আশঙ্কা করছেন। অনেকেই পুঁজি খুইয়ে পথে বসে গেছেন, এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের শেয়ারবাজার স্থিতিশীল করার একটা মোক্ষম উপায় খুঁজে বের করার কোনো বিকল্প যে নেই, সেটা বলাই বাহুল্য।
প্রায় এক বছর হতে চলল, দেশের শেয়ারবাজার অস্থিতিশীল। শুরুটা গত বছরের শেষের দিকে। এরপর থেকে শেয়ারবাজার আর স্থিতিশীল হয়নি। এই অস্থিতিশীল বাজারে কমেছে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। বাজারের স্ফীতি যেভাবে আশা করা গিয়েছিল, সে পর্যায়ে নেই। এখন অনেক বিনিয়োগকারী চাইছেন বাজার থেকে বের হয়ে যেতে। কোনোভাবে পুঁজি উঠে এলেই অনেক বিনিয়োগকারী বাজার থেকে তাঁদের বিনিয়োগ তুলে নেবেন, এ আশঙ্কা এখন আর অমূলক নয়। এ অবস্থায় শেয়ারবাজার সম্পর্কে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনাটাই এখন সবচেয়ে বড় কাজ। কিন্তু প্রতিদিনের দরপতনের কারণে শেয়ারবাজার নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা শিগগিরই ফিরে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উল্টো দরপতনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না ঢাকার শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহের মতো রবি ও সোমবারও দেখা যায় সেই একই চিত্র। সোমবার সকাল থেকেই সূচক পড়তে থাকে ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জে। দিনের শুরুতে দেড় ঘণ্টায় সূচক প্রায় ১০০ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজারের কোটায় নেমে আসে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, গত ২৮ জুনের পর এই প্রথম সূচক ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে নামল।
শেয়ারবাজারের স্বাভাবিকতা এটাই, এখানে যাঁরা বিনিয়োগ করতে আসেন, তাঁরা সবাই লাভের আশায়ই আসেন। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি অনেকেই বড় পুঁজি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন। শেয়ারবাজারে ফটকাবাজারিও হয়। কিন্তু এই বাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ যাতে সংরক্ষিত হয়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কতটা আন্তরিক, এ প্রশ্নও এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। সোমবার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সমস্যা শুনেছে ডিএসই। কিন্তু এর বাইরে যে সিংহভাগ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী আছেন, তাঁদের কী হবে?
শেয়ারবাজারে ওঠানামা থাকবে। কিন্তু সবার আগে প্রয়োজন স্থিতিশীলতা ও আস্থা। অস্থিতিশীল বাজারে আস্থার সংকটই এখন প্রকট। আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
No comments