বি জি ভারগেস-অপরিণামদর্শী আচরণ : মমতাই নষ্টের কারণ

প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঐতিহাসিক বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে সীমান্ত সমস্যার বহু দিনের কাঙ্ক্ষিত সমাধান এসেছে। আরো বেশি অর্জন সম্ভব হতো যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হতো, যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপরিণামদর্শিতা ও সংকীর্ণতা প্রদর্শন না করতেন। তিস্তার পানি নিয়ে ১৫ বছরের জন্য ভাগাভাগি বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত অনুসারে দুই দেশের মধ্যে ধৈর্যের সঙ্গে, সমঝোতার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গিয়েছিল।


কিন্তু হঠাৎ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রদর্শনের মাধ্যমে ঢাকা সফর বাতিল করায় তা ভেস্তে যায়। যদিও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি সফরসঙ্গী দলের অংশ ছিলেন। মমতা অন্য রাজনৈতিক ফায়দার জন্য ভুল সিদ্ধান্তকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের তিস্তা স্বার্থ পুরোপুরি রক্ষিত হয়েছিল। আগের হিসাব অনুযায়ী ৩৯ শতাংশ পানি পাবে ভারত, ৩৬ শতাংশ বাংলাদেশ এবং বাকি ২৫ শতাংশ অনির্ধারিত। এবার কথা হয়েছিল, এই অনির্ধারিত ২৫ শতাংশ পানি মোটামুটি সমানভাবে দুই দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে এবং তাতে বাংলাদেশের ক্ষতির দিকটা কমে যাবে। এ পানি অবাধে প্রবাহিত হবে ভারতের গজলডোবা এবং বাংলাদেশের দলিয়া ব্যারাজ দিয়ে। এই সমঝোতা ধূলিসাৎ করেছেন মমতা। যার ফলে ফেনী নদীর পানিবণ্টন এবং ট্রানজিট পাওয়ার অধিকার আটকে গেছে, আশা করি সেটা সাময়িক।
এসব সত্ত্বেও স্থল সীমান্ত নির্ধারণ নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে তা মানবিক ও রাজনৈতিক বিশাল ক্ষতের অবসান ঘটিয়েছে। নো ম্যানস ল্যান্ডের প্রতিদিনের উদ্বেগ ও দুঃখজনক ঘটনা ঘটে আসার অভিযোগ ছিল। কিন্তু সে ক্ষেত্রে অন্ধের মতো কিছু অহমি গ্রুপ এবং বিজেপি ভারতের ভূখণ্ড দিয়ে দেওয়ার অভিযোগে বিক্ষোভ করেছে। যা করা হয়েছে তা হচ্ছে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় র‌্যাডক্লিফের ফেলে যাওয়া সীমান্তরেখা নির্ধারণ নিয়ে বিতর্কের একটি চূড়ান্ত সমাধান।
বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের আরো অধিক মতৈক্যের প্রয়োজন। এ দেশটির প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক অবস্থান আমাদের একেবারে কোমরের সঙ্গে লাগোয়া। বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার ওপর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল। আর বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা পাওয়া গেলে তা এ অঞ্চলের জ্বালানির উৎস ও মূল্যবান বাজার সৃষ্টি করবে। তাই এ পারস্পরিক লাভের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, একে এড়িয়ে গেলে চলবে না।
দিলি্লর বোমা হামলা
দিলি্লর বোমা হামলার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দুঃখজনক। হাইকোর্টের বোমা হামলা একই রকম বিব্রতকর। এই ধারাবাহিক ও অব্যাহত বিপদে ঐক্যবদ্ধ না থেকে সরকার ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা, গোয়েন্দাদের বুদ্ধিমত্তার অভাব, অপ্রস্তুতি ইত্যাদি নিয়ে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আর এ দায়িত্বটি কাঁধে তুলে নিয়েছে বিশেষত বিজেপি এবং প্রচারমাধ্যম। দুটি টেলিভিশনের স্ক্রলে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসীরা সেনাদের ধোঁকা দিয়েছে, সন্ত্রাস কি এক ধাপ এগিয়ে? গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পেছনে পড়েছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুরোপুরি ছিন্ন হয়েছে। সন্ত্রাস সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই। আমরা কি তাহলে পাকিস্তানকে কোনো অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিচ্ছি? বোমা হামলার বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ কোথায়? ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস অকার্যকর হয়ে আছে।
লেখক : র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক। হিন্দুস্তান টাইমস এবং ইন্ডিয়ান এঙ্প্রেসের সাবেক সম্পাদক। ডেকান হেরাল্ডে প্রকাশিত নিবন্ধের বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অংশের ভাষান্তর-মহসীন হাবিব

No comments

Powered by Blogger.