টিএইচওর অপসারণ দাবি চিকিৎসকদের কর্মবিরতি
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি এবং একজন চিকিৎসককে হত্যার হুমকিদাতাকে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগে মাদারীপুরের কালকিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেরা গতকাল বিক্ষোভ ও তিন ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন।
চিকিৎসকদের অভিযোগ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) মসিউর রহমানের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় তিনি হাসপাতালের ঝাড়ুদার লিটনকে দিয়ে চিকিৎসক মাহবুব আবীরকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ঝাড়ুদার লিটন জরুরি বিভাগে কর্মরত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মাহবুব আবীরকে হত্যার হুমকি দেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সকাল সাড়ে আটটার দিকে কর্মবিরতি শুরু করে হাসপাতালে বিক্ষোভ করতে থাকেন। স্থানীয় লোকজনও চিকিৎসকদের সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দেন। এ সময় উত্তেজিত লোকজন মসিউর রহমানের কক্ষে ঢুকে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। বিক্ষোভের একপর্যায়ে তাঁরা লিটনকে মারধর করেন। খবর পেয়ে কালকিনি থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রায় তিন ঘণ্টা পর বিক্ষোভকারী চিকিৎসকেরা সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) বরাবর মসিউর রহমানের অপসারণের দাবি জানিয়ে লিখিত আবেদন করে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন।
লিখিত আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, মসিউর রহমান কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে চিকিৎসা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের সুযোগ না দিয়ে নিজেই অংশ নিতেন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে নিজের বাসার বিদ্যুৎ বিল অন্য চিকিৎসকদের দিতে বাধ্য করা, জরুরি বিভাগের মুঠোফোন ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, চিকিৎসা সনদ বাবদ রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায়, দীর্ঘদিন ছুটিতে থাকা চিকিৎসকদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে তাঁদের বেতন তুলতে সহায়তা, ঝাড়ুদারকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, হাসপাতালের মোটরসাইকেল ও অ্যাম্বুলেন্স ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে তাঁর অপসারণ দাবি করা হয়।
এ ব্যাপারে মাহবুব আবীর বলেন, ‘হাসপাতালের ঝাড়ুদার লিটন আমাকে গুলি করে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। এ সাহস সে কোথায় পায়? টিএইচও স্যারের কারণে ওর সাহস এত বেড়ে গেছে।’
হাসপাতালের চিকিৎসক প্রশান্ত বারিকদার, সায়মা আফরোজ, আফরোজা খানম, শামীম চৌধুরী ও শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘মসিউর রহমান টিএইচও হওয়ার পর হাসপাতালে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি শুরু হয়। এর প্রতিবাদ করতে গেলে তিনি ডাক্তারদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। মঙ্গলবার সকালে টিএইচও স্যারের নির্দেশে হাসপাতালের ঝাড়ুদার লিটন ডা. মাহবুব আবীরকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। তাই আমরা ওর বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ এবং মসিউর রহমানের অপসারণের দাবিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছি।’
স্থানীয় আলম, আদম আলী, দুলাল শিকদার, আহসান, কামরুল, সুরত আলী ও সালামসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ‘ডা. মসিউর আসার পর এখানকার সেবার মান খারাপ হয়ে গেছে। যখন শুনলাম ডাক্তাররা বিক্ষোভ করেছে তখন আমরাও তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছি।’
হাসপাতালের ঝাড়ুদার লিটন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি স্যারকে হুমকি দিইনি। আমাকে শুধু শুধু মারধর করা হয়েছে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মসিউর রহমান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সত্য নয়। এটা একটা ষড়যন্ত্র। বিক্ষোভের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।’
মাদারীপুরের সিভিল সার্জন নোমান চৌধুরী গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসকদের বিক্ষোভের কথা জেনেছি। বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
No comments