বনি ওয়ালিদ দখল করল গাদ্দাফিপন্থী যোদ্ধারা

লিবিয়ার প্রয়াত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির অনুগত যোদ্ধারা গুরুত্বপূর্ণ বনি ওয়ালিদ শহরটি দখল করে নিয়েছে। পরে তারা সেখানে সাবেক স্বৈরশাসকের দীর্ঘ ৪২ বছরের শাসনের প্রতীক সবুজ পতাকা টানিয়ে দেয়। নতুন করে গাদ্দাফিপন্থীদের এই অগ্রগতিকে দেশটির বর্তমান শাসক ‘ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল বা এনটিসির জন্য এক বড় ধাক্কা হিসেবে মনে করা হচ্ছে।


সংবাদ মাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার বনি ওয়ালিদ দখলে নেওয়ার আগে সশস্ত্র ও সুসংগঠিত গাদ্দাফি অনুগত যোদ্ধাদের সঙ্গে এনটিসি বাহিনীর তুমুল লড়াইয়ে অন্ততপক্ষে চারজন নিহত হয়েছে। গাদ্দাফি-সমর্থিত এক যোদ্ধার উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার পর তারা এখন পুরো শহর চষে বেড়াচ্ছে।
গত বছরের আগস্টে রাজধানী ত্রিপোলির পতনের পর সর্বশেষ যে দু-একটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে এনটিসি বাহিনীকে দারুণ বেগ পেতে হয়েছিল এ শহর তার অন্যতম। রাজধানী থেকে ১১০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত বনি ওয়ালিদ প্রয়াত নেতা কর্নেল গাদ্দাফির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। গত ২৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে লিবিয়ার স্বাধীনতার (গাদ্দাফি সেনাদের পরাস্ত করা) ঘোষণা দেওয়ার পর বনি ওয়ালিদ দখলের সর্বশেষ এ লড়াইকে সাবেক নেতার অনুগতদের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আক্রমণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। একইসঙ্গে এ ঘটনায়, চলতি বছরের শেষ নাগাদ অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এনটিসির দুর্বলতা, অসামর্থ্য ও অভ্যন্তরীণ বিভেদের চিত্রই ফুটে উঠেছে।
বনি ওয়ালিদের লড়াইয়ে সরকারি বাহিনীর ৩০ জনের মতো সেনা গুলিতে আহত হয়েছে। শহরটির স্থানীয় পরিষদের মুখপাত্র মাহমুদ ওয়ারফেলি জানান, এক থেকে দেড় শ যোদ্ধা ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সতর্কতার সঙ্গে আক্রমণের মধ্য দিয়ে শহরের দখল নিয়ে নেয়। গাদ্দাফিপন্থীরা পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদ ও স্কুলে অবস্থান নিয়ে চোরাগোপ্তা হামলা চালায়।
ওয়ারফেলির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, আত্মরক্ষায় নিয়োজিত সেনাদের গোলাবারুদ শেষ হয়ে এলে তিনি সেনাশক্তি বৃদ্ধির জন্য ত্রিপোলি ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ জানান। কিন্তু এতে কোনো সাড়া মেলেনি। তাঁর কথায়, ‘অবস্থা এমন ছিল যে আমরা যেন ফুটন্ত তেল থেকে আগুনে ঝাঁপ দিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা গত দুই মাস থেকেই সরকারকে সতর্ক করে আসছিলাম।’
সমুদ্র উপকূলীয় শহর মিসরাতা থেকে সরকারি সেনাদের একটি সুসজ্জিত ইউনিটকে শহরটি ঘিরে ফেলার নির্দেশ দিয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন লিবিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওসামা জুয়েলি। তবে লড়াই গাদ্দাফিপন্থীদের সঙ্গে নাকি বিবদমান গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে হয়েছে তা পরিষ্কার নয় এবং বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সেখানে সেনাদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি। গার্ডিয়ান পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘বনি ওয়ালিদ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। এ পর্যায়ে আমরা প্রকৃত পরিস্থিতি নির্ণয়ের চেষ্টা চালাচ্ছি।’
ত্রিপোলি দখলের তিন মাস পর গত নভেম্বর বনি ওয়ালিদ থেকে সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধী ও গাদ্দাফির প্রতি অনুগত স্থানীয় যোদ্ধাদের উৎখাতে এনটিসি বাহিনী শহরটিতে প্রবেশ করলেও রাতারাতি তা মুক্ত করা যায়নি। দুই পক্ষের মধ্যে সেখানে মাসব্যাপী প্রচণ্ড লড়াই চলে। এতে এনটিসির ১২ সেনা নিহত হয়। রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.