অ্যাডিলেড টেস্ট-ভারতের দুঃস্বপ্ন সেই পন্টিং-ক্লার্ক
দারুণ এক স্ট্রেট ড্রাইভ ও পুল খেললেন ইনিংসের শুরুতেই। খানিক পর একটা ব্যাকফুট পাঞ্চ—তাঁর সেরা সময়ের ‘ট্রেডমার্ক’। ওই শটে যা ইঙ্গিত ছিল, সেটাই পরিপূর্ণতা পেল সারা দিনে। দারুণ সব শট খেলে বুঝিয়ে দিলেন, শেষের গান গাইবার সময় এখনো আসেনি। দিন শেষে অপরাজিত সিরিজের দ্বিতীয় আর ক্যারিয়ারের ৪১তম সেঞ্চুরি করে।
সিডনির সেঞ্চুরি যদি হয় ফর্মে ফেরার ঘোষণা, তবে কালকের সেঞ্চুরিতে এল সেরা সময়ে ফেরার ঘোষণা। উদ্যাপনেও যেন ফুটে বেরোল তা। সিডনিতে স্মিত এক হাসি দিয়ে ব্যাট উঁচিয়ে ধরেছিলেন। কাল দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দিলেন হুংকার। রিকি পন্টিং যেন বলতে চাইলেন, ‘অনেক সয়েছি, এবার শুধু জবাব দেওয়ার পালা!’
আরেকজন তো আছেন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মেই। সিডনির ট্রিপল সেঞ্চুরিতে মনে হয়েছিল, ব্যাট-বলকে যেন নিজের বশ করে নিয়েছেন। ওই অনুভূতিটাই ফিরে এল কাল। যেমন ইচ্ছা খেলতে চাইলেন, খেললেনও। ক্যারিয়ারের ১৯তম আর অধিনায়কের ভূমিকায় ১২ টেস্টে পঞ্চম সেঞ্চুরি করে দিন শেষে অপরাজিত মাইকেল ক্লার্কও। যখন উইকেটে গিয়েছিলেন, পন্টিংয়ের রান ছিল ৩৭। দিন শেষে সাবেক অধিনায়ককে ছাড়িয়ে গেছেন বর্তমান অধিনায়ক!
সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসটাই কাল যেন ফিরে এল অ্যাডিলেড ওভালে। আবারও দ্রুত অস্ট্রেলিয়ার ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলা, আবারও চতুর্থ উইকেটে পন্টিং-ক্লার্কের দুই শ রানের জুটি। ওই জুটি থেমেছিল ২৮৮ রানে, এবার ২৫১ হয়ে গেছে, কোথায় থামবে কে জানে! সব মিলিয়ে আরও দীর্ঘায়িত হলো ভারতের দুঃসময়। দুঃস্বপ্নের সিরিজটা তাদের জন্য আরও যে কত যন্ত্রণা রেখে দিয়েছে!
অথচ দিনের শুরুটা ভারতের জন্য ছিল আশা-জাগানিয়া। ব্যাটিং স্বর্গে অস্ট্রেলিয়াকে দারুণ অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিল খুব তাড়াতাড়িই। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক বীরেন্দর শেবাগ দিনের চতুর্থ ওভারেই এনেছিলেন স্পিন। ফাটকাটা লেগেও গেল, রবিচন্দ্রন অশ্বিন বেঁধে ফেলেছিলেন বিপজ্জনক ডেভিড ওয়ার্নারকে। রানের জন্য হাঁসফাঁস করতে থাকা ওয়ার্নার জহির খানের সামান্য ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লু। পরের দুটি উইকেটই অশ্বিনের। সোজা বলে বোল্ড শন মার্শ। দলের জন্য স্বপ্নের সিরিজটা দুঃস্বপ্নের মতো কাটছে শন মার্শের, ৫ ইনিংসে রান ১৭! এড কাওয়ান গেলেন অশ্বিনের ফ্লাইটেড বলে। শর্ট কভারে লক্ষ্মণের দারুণ এক ক্যাচের শিকার।
টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার সময় ক্লার্ক নিশ্চয়ই ভাবেননি, লাঞ্চের আগেই উইকেটে যেতে হবে তাঁকে! আবারও আবির্ভূত হলেন দলের উদ্ধারকর্তার ভূমিকায়। পন্টিং ততক্ষণে জমে গেছেন। দুজনের স্ট্রোকের তোড়ে হতোদ্যম ভারতীয়রা সারা দিন অপেক্ষা করে গেছে একটা সুযোগের। সেই সুযোগ আর আসেনি। ৮১ রানের মাথায় ইতিহাসের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ১৩ হাজার টেস্ট রান ছুঁয়েছেন পন্টিং, সেঞ্চুরির সংখ্যায় জ্যাক ক্যালিসকে ছুঁয়েছেন ১৬৪ বল খেলে। ২০০৬-০৭ অ্যাশেজের পর এই প্রথম এক সিরিজে দুই সেঞ্চুরি করলেন, ব্র্যাডম্যানের স্মৃতিবিজড়িত অ্যাডিলেড ওভালে ছাড়িয়ে গেলেন ১৫০০ রানও (১৫৭৯)। তুলনায় আরও সপ্রতিভ ক্লার্কের সেঞ্চুরি এসেছে ১৩৩ বলে। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো সিরিজে ছুঁয়েছেন ৫০০ রান (৫১৯)।
অ্যাডিলেড যদি সিডনির গতিপথেই এগোয়, তাহলে ভারতের কপালে আরও দুর্ভোগ আছে। সিডনিতে পন্টিং-ক্লার্কের জুটির পরই যে ৩৩৪ রানের ম্যারাথন জুটি গড়েছিলেন ক্লার্ক ও হাসি! ওয়েবসাইট।
No comments