পবিত্র কোরআনের আলো-অবাধ্য ও দুষ্কর্মকারীদের উপদেশ দেওয়া ছাড়া মুমিনদের আর কোনো করণীয় নেই

৮. ওয়া ইযা রাআইতাল্লাযীনা ইয়াখূদ্বূনা ফী আয়া-তিনা ফাআ'রিদ্ব আ'নহুম হাত্তা ইয়াখূদ্বূ ফী হাদীছিন গাইরিহি; ওয়া ইম্মা ইউনছিইয়ান্নাকাশ্ শাইত্বা-নু ফালা তাক্ব্উ'দ বা'দায্ যিকরা মাআ'ল ক্বাওমিয্ যা-লিমীন। ৬৯. ওয়া মা আ'লাল্লাযীনা ইয়াত্তাক্বূনা মিন্ হিছা-বিহিম্ মিন শাইয়িন ওয়ালা-কিন যিকরা লাআ'ল্লাহুম ইয়াত্তাক্বূন।


৭০. ওয়া যারিল্লাযীনাত্তাখাযূ দীনাহুম লায়ি'বাঁও ওয়া লাহ্ওয়ান ওয়া গার্রাতহুমুল হাইয়া-তুদ্ দুনিয়া ওয়া যাক্কির বিহী আন তুবছালা নাফছুম্ বিমা কাছাবাত্; লাইছা লাহা- মিন দূনিল্লাহি ওয়ালিইয়্যুন ওয়া লা- শাফীই'; ওয়া ইন তা'দিল্ কুল্লা আ'দলিন লা-ইউ'খায্ মিনহা; উলা-য়িকাল্লাযীনা উবছিলূ বিমা কাছাবূ; লাহুম শারা-বুম্ মিন হামীমিন ওয়া আ'যা-বুন আলীমুম বিমা কা-নূ ইয়াকফুরূন।
[সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ৬৮-৭০]
অনুবাদ
৬৮. (হে মুসলিম ব্যক্তি!) যখন তুমি এমন সব লোককে দেখতে পাবে, যারা আমার আয়াতগুলো নিয়ে বিদ্রূপ করছে, তখন তুমি তাদের কাছ থেকে দূরে সরে এসো, যতক্ষণ না তারা অন্য আলোচনায় মনোনিবেশ করে। যদি কখনো শয়তান তোমাকে ভুলিয়ে ওখানে বসিয়ে রাখে, তবে মনে পড়ার পর তুমি জালেম সম্প্রদায়ের সঙ্গে আর বসে থেকো না।
৬৯. তাদের ক্রিয়াকলাপের হিসাবের ব্যাপারে আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ ব্যক্তিদের কোনো করণীয় নেই; তবে উপদেশ দিয়ে যাওয়া ভালো, এতে হয়তো তারা দায়িত্বনিষ্ঠ হয়েও উঠতে পারে।
৭০. এসব লোকের কাছ থেকে তুমি দূরে সরে এসো, যারা তাদের ধর্মকে নিছক খেলতামাশায় পরিণত করে রেখেছে; আর এই পার্থিব জীবনই তাদের প্রতারণার জালে আটকে রেখেছে। তুমি এই কোরআনের মাধ্যমেই তাদের সত্যের কথা স্মরণ করাতে থাকো, যাতে নিজেদের কর্মফলের ভেতর দিয়েই তারা ধ্বংসের পথে এগিয়ে না যায়। শেষবিচারের দিন তাদের জন্য আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সাহায্যকারী বন্ধু বা সুপারিশকারী থাকবে না। সেদিন যদি কোনো ব্যক্তি নিজের সব কিছু দিয়েও দিতে চায় তবু তার কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে না। এরাই হচ্ছে সেই হতভাগ্য মানুষ, যাদের নিজেদের কৃতকর্মের কারণেই তাদের ধ্বংস করে দেওয়া হবে। আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার কারণেই তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত পানীয় ও কঠিন শাস্তি।
ব্যাখ্যা
হিজরতের আগে মক্কায় কাফেরদের শক্তি-সামর্থ্য ও প্রভাব-প্রতিপত্তির তুলনায় মুসলমানরা ছিল একেবারেই দুর্বল ও নগণ্য। দাম্ভিক কুরাইশরা মুসলমানদের কোনো পরোয়াই করত না। তারা যেসব মজলিশে ওঠাবসা করত, সেখানে মুসলমানদের সামনেই তারা ইসলামের কুৎসা রটনা করত এবং আল্লাহর কোরআন নিয়ে বিদ্রূপ করত। কাফের কুরাইশদের এরূপ ঔদ্ধত্যে মুসলমানরা মনঃকষ্টে ভুগলেও কিছুই বলতে পারত না বা কিছুই করতে পারত না। তাদের নীরবে-নিভৃতে ইসলাম নিয়ে কুৎসা ও কোরআন নিয়ে বিদ্রূপ শুনতেই হতো। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই ওই আয়াতগুলো নাজিল হয়। ৬৮ নম্বর আয়াতে এরূপ অবস্থায় মুসলমানদের সেসব মজলিশ থেকে উঠে আসতে বলা হয়েছে। ৬৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে : আল্লাহর অবাধ্য এসব কাফেরকে সুপথে আনার ব্যাপারে দায়িত্বনিষ্ঠ মুসলমানদের তেমন কোনো দায়দায়িত্ব নেই। তাদের কেবল উপদেশ দিয়ে যেতে পারে এটুকুই। উপদেশ প্রদানের ফলে হয়তো বা তারা দায়িত্ব-সচেতন হয়েও উঠতে পারে। এভাবে তারা ইমানের পথে আসতে পারে। ৭০ নম্বর আয়াতে অবাধ্য কাফেরদের করুণ পরিণতির কথা বিস্তারিত বলা হয়েছে। আল্লাহর অবাধ্যতার মাধ্যমে তারা যা অর্জন করছে, এর মাধ্যমেই তারা ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে, নিজেদের কর্মফলে তারা একসময় ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.