লোডশেডিং ও যানজট-জনদুর্ভোগের যেন শেষ নেই
আবার বেহাল দেশ। লোডশেডিং বেড়েছে সারা দেশে। পাশাপাশি রাজধানীতে বেড়েছে যানজট। প্রচণ্ড গরমে অবস্থা অসহনীয়। গভীর রাতেও লোডশেডিং করা হচ্ছে। বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়লেও চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে লোডশেড করতে হচ্ছে। গত কয়েক দিনে লোডশেডিংয়ের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।
বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। অন্যদিকে রাজধানীর সড়কগুলো আবার ফিরে গেছে আগের চেহারায়। পরিচিত সেই যানজট আবার ফিরে এসেছে রাজধানীতে। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে দিনের অনেকটা কর্মসময় ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে অস্বস্তিকর যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন, চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যাপক ফারাক আছে। এই ফারাক আছে বলেই চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে পিডিবি বিদ্যুতের চাহিদা, উৎপাদন ও সরবরাহের যে হিসাব দেয়, তাতে লোডশেডিংয়ের মাত্রা এমন অসহনীয় পর্যায়ে যাওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক দিনে লোডশেডিংয়ের মাত্রা অনেক বেড়েছে। লোডশেডিং কমানোর প্রধান সমাধান হচ্ছে উৎপাদন বাড়ানো। কিন্তু ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এর নেপথ্য কারণও সবার কাছে দৃশ্যমান। দেখা যাচ্ছে, ৫০/১০০ মেগাওয়াটের ছোট ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হলেও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ক্রমেই উৎপাদন কমছে। অনেক কথা বলা হলেও বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। মহাজোট সরকারের তিন বছর হতে চলল। বিদ্যুৎ সমস্যার সহনশীল একটি সমাধানের জন্য এ সময়টা নেহাত কম নয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এ অবস্থা থেকে শিগগিরই কোনো অগ্রগতি হবে, তেমনটিও আশা করা যাচ্ছে না। বিদ্যুতের সংযোগ না পাওয়ায় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আবাসন শিল্পের ব্যবসায়ীরাও।
লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি রাজধানীবাসীর জন্য অস্বস্তির আরেকটি কারণ হচ্ছে অসহনীয় যানজট। ঈদের ছুুটির এক সপ্তাহ পর আবার আগের চেহারায় ফিরে গেছে রাজধানী। এ মহানগরীর সড়কগুলো জুড়ে সেই আগের মতোই যানজট। ক্ষেত্রবিশেষে যানজটের মাত্রা অনেক বেড়েছে বলে ধারণা করছেন ভুক্তভোগীরা। এ অবস্থা থেকেও রাজধানীবাসীর শিগগির মুক্তি মিলবে_এমন আশা নেই। কারণ এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। সব পরিকল্পনাই নিছক কাগুজে ব্যাপার হয়ে রয়েছে। এলিভেটেড এঙ্প্রেস ওয়ে, বিকল্প সড়ক, মেট্রো রেল, উড়াল সড়ক_কোনোটিই এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। মেট্রো রেল নিয়ে জটিলতার অবসান হয়নি। দুটি উড়াল সড়ক কবে খুলে দেওয়া হতে পারে, সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। এ অবস্থায় ঢাকার রাস্তা যানজটমুক্ত হবে_এমন আশা করা যায় না।
মানুষ স্বস্তি চায়। কিন্তু জনজীবন ক্রমেই অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে। মানুষের চাহিদা পূরণ করতে সম্ভব সব ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু পরিকল্পনায়ই সব কিছু থেকে গেলে জনজীবনে তার প্রভাব পড়বে না। বিদ্যুতের অভাব ঘটলে, রাস্তায় কর্মসময় নষ্ট হলে দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নিশ্চয় ভেবে দেখবেন।
No comments