পারবেন ইমরান খান!
মানবজমিন ডেস্ক: সরকার, সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগের ত্রিমুখী সংঘাতে বিপর্যস্ত পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে খোদ পাকিস্তানিদের মধ্যেই নানারকম জল্পনা-কল্পনা। পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর কারণে দেশটির জন্মলগ্ন থেকে অদ্যাবধি বেসামরিক শাসন বা গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিতে পারেনি। একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে জনগণের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা সব সময়ই সেনাবাহিনীর বুটের তলায় পিষ্ট হয়েছে। অতীতে সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান ঘটালে বিচার বিভাগ তার বৈধতা দেয়ার কাজটিই করেছে। কিন্তু এবারে সবকিছুই যেন বিচার বিভাগের নেতৃত্বে হচ্ছে। মেমোগেট কেলেঙ্কারি দিয়ে শুরু হয়ে বর্তমান সঙ্কট যখন গোটা দেশকে অস্থির ও বিপর্যস্ত করে তুলেছে ঠিক তখন দেশটির রাজনৈতিক আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অনেক কথাই বলতে শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমান সরকার টিকে থাকতে পারবে কি না আর না পারলে পাকিস্তানের ক্ষমতায় কে বা কারা বসবেন- এসব বিষয় প্রাধান্য পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান ক্ষমতাসীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও সাবেক ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ (এন) এর দুর্নীতি ও দেশপ্রেমহীনতার কারণে অনেকেই তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। ফলে ঘুরেফিরে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেট কিংবদন্তি ও হালের সাড়া জাগানো জনপ্রিয় রাজনীতিক ইমরান খানের নামটিই সামনে চলে আসছে। বিশেষ করে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সখ্য সেই সম্ভাবনাকে আরও জোরদার করছে। এই অবস্থায় ইমরান খান কি সত্যিই পাকিস্তানে আগামী দিনে ক্ষমতায় আসছেন? তিনি কি পাকিস্তানের সব সঙ্কট মোকাবিলা করে দেশকে সমানে এগিয়ে নিতে পারবেন? প্রশ্নগুলো সমপ্রতি ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। এসব প্রশ্নের সুরাহা করতেই সে দেশের প্রভাবশালী দৈনিক ডন সোমবার এক নিবন্ধে এসব কথা বলেছে। ইথান কেস-এর লেখা ওই নিবন্ধে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ পল্লী ও শহুরে গরিব জনসাধারণের স্বার্থ ও প্রত্যাশা পূরণ না করায় তারা পশ্চিমা ধরন ও পশ্চিমা ঘেষা ধর্মনিরপেক্ষ উদারতাবাদকে সমর্থন করে না। ফলে সেখানে এসব মতবাদ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। আর এই জায়গাতেই ইমরান খানের সমস্যা। তিনি পাকিস্তানি জনগণের প্রত্যাশার বিপরীতে অবস্থান করছেন। কারণ, তিনি পশ্চিমা মতবাদে বিশ্বাস করেন। সমপ্রতি তার সমর্থন বাড়লেও তা কেবল শহুরে এলিট শ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ বলে ওই নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ডন প্রকাশিত নিবন্ধটিতে ওয়াশিংটনের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকবর আহমদের আল জাজিরা ডট কমে প্রকাশিত একটি লেখার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে হতাশা ও ইমরানের নেতৃত্বে তা থেকে মুক্তির বিষয় দু’টি একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর এটাও পরিষ্কার যে, হতাশা যতই বাড়ছে, একজন ত্রাণকর্তার প্রত্যাশাও ততই বাড়ছে। আকবর আহমদ তার লেখায় সতর্ক করে দিয়েছেন, অনেক নেতাই অতীতে যারা বিভিন্ন দলে কাজ করেছেন তারা এখন ইমরানের দলে ভিড় করছেন। এটা সমূহ বিপদের আলামত। এই অবস্থায় ইমরান খানের পক্ষে সততার প্রমাণ রাখা খুবই কঠিন হবে। ইমরান খান সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের এমন নেতিবাচক বক্তব্য তুলে ধরার পর নিবন্ধটিতে ইমরান খানের সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। আর এসব গুণাবলি দিয়ে ইমরান খান বর্তমানে পাকিস্তানের রাজনীতির টার্নিং পয়েন্টে চলে এসেছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এই অবস্থা থেকে তিনি ইতিহাসের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সামনে এগিয়েও যেতে পারবেন। পেতে পারেন জনগণের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা। ইমরানের সামপ্রতিক সময়ের লাহোর ও করাচির জনসভায় বিপুল পরিমাণে লোক সমাগমের ঘটনা তুলে ধরে নিবন্ধটিতে একে পাকিস্তানিদের নতুন কোন পরিবর্তনের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার নিদর্শন বলে উল্লেখ করেছে। এই পরিবর্তন তাদের কল্যাণ করবে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও সে দেশে দীর্ঘদিনের বৈষম্য ও বিদেশ তোষণনীতির কারণে পাকিস্তানি সমাজে যে ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছে, তা এক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত পরিণতি পাওয়াটা ও খুব অস্বাভাবিক নয় বলে নিবন্ধকার মতো দিয়েছেন। আর ইমরান খান সেই প্রাকৃতিক ক্ষোভটা কাজে লাগিয়ে মানুষকে পরিবর্তনের দিকে ডাকছেন। বিশেষ করে তিনি যখন পাকিস্তানিদের নিজেদের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের কথা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়াই দেশকে স্বনির্ভর করার কথা বলেন, তখন মানুষ নতুন করে আশার আলো দেখতে পায়। ফলে অদূর ভবিষ্যতে তেহরিকে ইনসাফ পার্টির নেতা ইমরান খান পাকিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় চলে এলে অবাক করার কিছুই থাকবে না বলেও নিবন্ধে মন্তব্য করা হয়েছে।
No comments