নাব্যতা সংকটে নৌ-চলাচল বিঘ্নিত-ড্রেজিংয়ের কোনো বিকল্প নেই

স্বাভাবিক রকমের নাব্যতা সংকটে পদ্মা নদীর নৌ-চলাচল ব্যাপকভাবে বিঘি্নত হতে শুরু করেছে। দেশের বিস্তৃত দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগ, মালামাল পরিবহনের প্রধান পথ হচ্ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুট। ভারী যানবাহন নিয়ে মাওয়া-পাটুরিয়ায় যে ফেরিগুলো পারাপারের কাজ করে, সেগুলোকে আগে থেকেই অতি সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করতে হয়।

কিন্তু ডুবোচরের পরিমাণ এতটাই বেড়েছে যে এখন সতর্ক থেকেও পার পাওয়া যাচ্ছে না। শনিবার সকালে দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া গমনকালে রো-রো ফেরি কেরামত আলী ডুবোচরে আটকা পড়ে। ফলে ওই রুটে আট ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে থাকে। অন্যদিকে আরেক গুরুত্বপূর্ণ পথ মাওয়া-কাওরাকান্দি নৌরুটে নাওডোবা টার্নিংয়ে ডুবোচরে আটকে যায় ফেরি রামশ্রী। উদ্ধারকারী জাহাজ ফেরিটিকে উদ্ধার করার আগে পুরো ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে থাকে। দুটি রুটেই এ ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় একদিকে যেমন যাত্রীদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে, অন্যদিকে মালবাহী শত শত ভারী যানবাহন আটকে যায় এবং পরিবহন হয়ে পড়ে স্থবির।
নৌ-চলাচল চালু রাখা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। গত ২৫ বছরে নৌপথের পরিমাণ কমেছে অন্তত দুই হাজার কিলোমিটার। একদিকে কমছে পানি, অন্যদিকে জেগে উঠছে চর। নৌ-চলাচল চালু রাখতে দেশের নৌপথ অন্তত এক কোটি ঘনমিটার ড্রেজিং করা প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে তা সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং এখনই কোনো ব্যবস্থা না নিলে এ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া আমরা বহুকাল ধরে ঢিমেতালে ড্রেজিংয়ের কাজ হতে দেখে আসছি। ড্রেজারের জ্বালানি চুরি এবং যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগও পুরনো। সর্বপ্রথম এ বিষয়ে স্বচ্ছতা আনা জরুরি। আরো একটি কাজ অতি জরুরি বলে আমরা মনে করি। তা হলো, নদীগুলোর নাব্যতা এবং কোন অঞ্চলে কেমন পরিস্থিতি, তার প্রতি বিশেষ পর্যবেক্ষণ দল সর্বক্ষণ নজর রাখতে পারে। তারা নাব্যতা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করবে ভারী ও হালকা নৌযানগুলোকে। এ ক্ষেত্রে কমিউনিটি রেডিওর ব্যবস্থা করা গেলে আরো ভালো হয়। অন্যদিকে নৌপথের পন্টুনগুলোর অবস্থা যেমন ভালো নয়, তেমনি অপ্রতুল। এ পন্টুনগুলো সংস্কার এবং নতুন পর্যাপ্ত পন্টুন নির্মাণ করারও প্রয়োজন রয়েছে। সর্বোপরি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধিক সক্রিয় হয়ে ওঠা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। আমাদের মনে রাখতে হবে, সড়ক পরিবহনের ওপর চাপ কমাতে হলে এবং সড়ক পরিবহনের বিকল্প হিসেবে নৌপথের গুরুত্ব অপরিসীম। নৌ পরিবহনের উন্নয়ন ঘটালে তা যেমন সাশ্রয়ী হবে, তেমনি সড়কের ওপর চাপ কমবে। অতএব, দুর্ঘটনার পরিমাণ কমে যাবে। নৌ পরিবহন অবাধ ও নির্বিঘ্ন হলে পরিবহন ব্যয় কমার কারণে উৎপাদিত শস্য ও খাদ্যদ্রব্যের মূল্য কমতেও বাধ্য। সারা দেশে এখনো রয়েছে প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ। এ নৌপথকে বাঁচিয়ে রাখার প্রথম শর্ত নাব্যতা সংকট দূর করা। এ দায়িত্বটুকু সঠিকভাবে পালন করা গেলে আমাদের অর্থনীতি আরো মজবুত হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.