বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগে আঞ্চলিকতা আর রাজনীতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এক সময় যাকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে ডাকা হতো। আজ শিক্ষা ব্যবস্থায় সে মৃতপ্রায়। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এশিয়ার অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু শিক্ষকদের রাজনীতি আর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা আজ দেশসেরা তো বটেই, এশিয়ার সেরা এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে হাস্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ছাত্ররজনীতি নামে মহাব্যাধি।
সব মিলিয়ে আজ এ বিদ্যাপিঠ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এর জন্য করার কি কিছুই নেই, নাকি এ প্রতিষ্ঠান নিয়ে মাথাব্যথা নেই? অথচ এ বিদ্যাপিঠের ছাত্রছাত্রীরাই আজ দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাহলে আজ এ অবস্থা কেন_ সে প্র্র্র্র্র্র্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের স্বপ্নের উচ্চ শিক্ষা আজ নরকে পরিণত হয়েছে। শিক্ষকরা ক্লাসরুমে ঠিকমতো পড়ান না। ব্যস্ত থাকেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে। ঢাবির শিক্ষার্থীদের শুধু টার্ম পেপার আর প্রতি ক্লাসে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে ব্যস্ত রাখেন। অনেক শিক্ষক আছেন যারা ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর সামর্থ্য রাখেন না। কারণ তারা শিক্ষক হয়েছেন মুখস্থ বিদ্যা দিয়ে খুব ভালো ফল করে; আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করে অথবা শিক্ষকদের আঞ্চলিকতার পরিপ্রেক্ষিতে। এমন প্রমাণও আছে যে, তৃতীয় শ্রেণী পেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন। অনেক সময় শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে যেন প্রতিবন্ধকতা না থাকে সে জন্য এমবিএ শেষ হওয়ার পরপরই নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার কোনো কোনো বিভাগে আঞ্চলিকতাও শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এই যদি হয় দেশের সেরা বিদ্যাপিঠের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা তাহলে তারা শিক্ষার্থীদের কী শিক্ষা দেবেন_ সেটিও একটা প্রশ্ন বটে!
সিনিয়রদের কাছে আমরা শুনেছি, এমনকি বেশ কয়েক সিনিয়র শিক্ষক পেয়েছি যারা অসাধারণ ক্লাস নেন। তাদের সময়কার শিক্ষকরা কত জ্ঞানী ছিলেন। ক্লাস করানোর জন্য তারা ক্লাস শুরু হওয়ার অনেক আগেই কক্ষে হাজির হতেন। শিক্ষকরাও প্রাণবন্ত ক্লাস নিতেন, ছাত্ররা একটি ক্লাসও মিস করত না।
সম্প্রতি খুব অদ্ভুত একটি নিয়ম চালু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে, ক্লাসে ৭৪-৬০ শতাংশ হাজিরা থাকলে ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে পরীক্ষা দেওয়া যাবে। এর কম হলে পরীক্ষা দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে দুটি প্রশ্ন আমার মনে উদয় হয়েছে। প্রথমত, ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করে না কেন? হয়তো ক্লাসের প্রতি তাদের কোনো আকর্ষণ নেই কিংবা শিক্ষকদের কাছে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে ধরে রাখার মতো পর্যাপ্ত রসদ নেই। কিন্তু যাচাই করলেই দেখা যাবে যে, এমন অনেক শিক্ষক আছেন যাদের ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার ৯০ শতাংশের চেয়েও বেশি। এর অন্তরালে কোন বিষয় কাজ করছে তা শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন করলে সহজেই জানা যাবে। দ্বিতীয়ত, জরিমানা কি কখনও ক্লাস করার বিকল্প হতে পারে? তার ওপর অনেক শিক্ষার্থী গ্রাম থেকে আসা বলে তাদের পার্টটাইম কোনো কাজ করে পড়াশোনার ব্যয় নির্বাহ এবং পরিবারকেও টাকা পাঠাতে হয়। যদি উপস্থিতির হার ৬০ শতাংশের কম হয় তাহলে ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে বলা হয়েছে। যদি এটি বাস্তবায়ন করা হয় তবে এসব দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী হবে সেটি একবারের জন্য হলেও ভেবে দেখা দরকার বলে আমি মনে করি।
মূল আলোচনা থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি। এবার দেখা যাক কী করলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব_
প্রথমত, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। আঞ্চলিকতার প্রাধান্য ও রাজনৈতিক বিবেচনা পরিহার করা হোক। শুধু একাডেমিক ভালো ফলই ঢাবির শিক্ষক হওয়ার মানদণ্ড হতে পারে না। ভালো ছাত্র সবসময় ভালো শিক্ষক হবে_ এমন নয়।
দ্বিতীয়ত, শিক্ষক হওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ বছর ক্লাস করানোর অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক করা হোক। শিক্ষকদের নিয়োগের আগে ডেমো ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হোক।
তৃতীয়ত, শিক্ষকদের জন্য প্রতি সেমিস্টার শেষে শিক্ষার্থীদের মতামতের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক।
চতুর্থত, শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়েও দক্ষ করে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।
পঞ্চমত, পড়াশোনা শেষ করার আগেই চাকরিগত জীবনের বাস্তবসম্মত অভিজ্ঞতার ব্যবস্থা করা হোক। হোক তা অবৈতনিক। তবু কাজ সম্পর্কে বাস্তব ধারণা দেওয়া হোক।
আমি জানি না আমার এ সীমিত জ্ঞানের লেখা পত্রিকায় প্রকাশিত হবে কি-না। শুধু এটুকু নিশ্চয়তা দিতে চাই, আমরা শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে এসেছি, আমাদের শেখার আগ্রহ আছে। কিন্তু চোখের সামনে যখন আমাদের প্রিয় এ শিক্ষাঙ্গনের মৃতপ্রায় রূপ দেখি তখন বুকটা দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে যায়, চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসে অবিরাম জল। সেই অশ্রু অবিরাম বাজতে থাকে হৃদয়ের বাম অলিন্দে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আপনাদের কি কোনোই উদ্বেগ নেই এক সময়কার বিশ্ব শ্রেষ্ঠ এ বিদ্যাপিঠকে নিয়ে?
লেখকগণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন
বিভাগের শিক্ষার্থী
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের স্বপ্নের উচ্চ শিক্ষা আজ নরকে পরিণত হয়েছে। শিক্ষকরা ক্লাসরুমে ঠিকমতো পড়ান না। ব্যস্ত থাকেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে। ঢাবির শিক্ষার্থীদের শুধু টার্ম পেপার আর প্রতি ক্লাসে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে ব্যস্ত রাখেন। অনেক শিক্ষক আছেন যারা ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর সামর্থ্য রাখেন না। কারণ তারা শিক্ষক হয়েছেন মুখস্থ বিদ্যা দিয়ে খুব ভালো ফল করে; আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করে অথবা শিক্ষকদের আঞ্চলিকতার পরিপ্রেক্ষিতে। এমন প্রমাণও আছে যে, তৃতীয় শ্রেণী পেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন। অনেক সময় শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে যেন প্রতিবন্ধকতা না থাকে সে জন্য এমবিএ শেষ হওয়ার পরপরই নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার কোনো কোনো বিভাগে আঞ্চলিকতাও শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এই যদি হয় দেশের সেরা বিদ্যাপিঠের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা তাহলে তারা শিক্ষার্থীদের কী শিক্ষা দেবেন_ সেটিও একটা প্রশ্ন বটে!
সিনিয়রদের কাছে আমরা শুনেছি, এমনকি বেশ কয়েক সিনিয়র শিক্ষক পেয়েছি যারা অসাধারণ ক্লাস নেন। তাদের সময়কার শিক্ষকরা কত জ্ঞানী ছিলেন। ক্লাস করানোর জন্য তারা ক্লাস শুরু হওয়ার অনেক আগেই কক্ষে হাজির হতেন। শিক্ষকরাও প্রাণবন্ত ক্লাস নিতেন, ছাত্ররা একটি ক্লাসও মিস করত না।
সম্প্রতি খুব অদ্ভুত একটি নিয়ম চালু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে, ক্লাসে ৭৪-৬০ শতাংশ হাজিরা থাকলে ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে পরীক্ষা দেওয়া যাবে। এর কম হলে পরীক্ষা দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে দুটি প্রশ্ন আমার মনে উদয় হয়েছে। প্রথমত, ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করে না কেন? হয়তো ক্লাসের প্রতি তাদের কোনো আকর্ষণ নেই কিংবা শিক্ষকদের কাছে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে ধরে রাখার মতো পর্যাপ্ত রসদ নেই। কিন্তু যাচাই করলেই দেখা যাবে যে, এমন অনেক শিক্ষক আছেন যাদের ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার ৯০ শতাংশের চেয়েও বেশি। এর অন্তরালে কোন বিষয় কাজ করছে তা শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন করলে সহজেই জানা যাবে। দ্বিতীয়ত, জরিমানা কি কখনও ক্লাস করার বিকল্প হতে পারে? তার ওপর অনেক শিক্ষার্থী গ্রাম থেকে আসা বলে তাদের পার্টটাইম কোনো কাজ করে পড়াশোনার ব্যয় নির্বাহ এবং পরিবারকেও টাকা পাঠাতে হয়। যদি উপস্থিতির হার ৬০ শতাংশের কম হয় তাহলে ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে বলা হয়েছে। যদি এটি বাস্তবায়ন করা হয় তবে এসব দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী হবে সেটি একবারের জন্য হলেও ভেবে দেখা দরকার বলে আমি মনে করি।
মূল আলোচনা থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি। এবার দেখা যাক কী করলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব_
প্রথমত, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। আঞ্চলিকতার প্রাধান্য ও রাজনৈতিক বিবেচনা পরিহার করা হোক। শুধু একাডেমিক ভালো ফলই ঢাবির শিক্ষক হওয়ার মানদণ্ড হতে পারে না। ভালো ছাত্র সবসময় ভালো শিক্ষক হবে_ এমন নয়।
দ্বিতীয়ত, শিক্ষক হওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ বছর ক্লাস করানোর অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক করা হোক। শিক্ষকদের নিয়োগের আগে ডেমো ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হোক।
তৃতীয়ত, শিক্ষকদের জন্য প্রতি সেমিস্টার শেষে শিক্ষার্থীদের মতামতের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক।
চতুর্থত, শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়েও দক্ষ করে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।
পঞ্চমত, পড়াশোনা শেষ করার আগেই চাকরিগত জীবনের বাস্তবসম্মত অভিজ্ঞতার ব্যবস্থা করা হোক। হোক তা অবৈতনিক। তবু কাজ সম্পর্কে বাস্তব ধারণা দেওয়া হোক।
আমি জানি না আমার এ সীমিত জ্ঞানের লেখা পত্রিকায় প্রকাশিত হবে কি-না। শুধু এটুকু নিশ্চয়তা দিতে চাই, আমরা শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে এসেছি, আমাদের শেখার আগ্রহ আছে। কিন্তু চোখের সামনে যখন আমাদের প্রিয় এ শিক্ষাঙ্গনের মৃতপ্রায় রূপ দেখি তখন বুকটা দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে যায়, চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসে অবিরাম জল। সেই অশ্রু অবিরাম বাজতে থাকে হৃদয়ের বাম অলিন্দে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আপনাদের কি কোনোই উদ্বেগ নেই এক সময়কার বিশ্ব শ্রেষ্ঠ এ বিদ্যাপিঠকে নিয়ে?
লেখকগণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন
বিভাগের শিক্ষার্থী
No comments