মেডিক্যাল কলেজে দলীয় প্রভাব-চিকিৎসাশিক্ষা বিঘ্নিত করবে মারাত্মকভাবে

চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষায় বাংলাদেশের অবকাঠামো সুবিধা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আগে অল্প কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে যে হুড়োহুড়ি ছিল, এখন তা অনেকাংশে কমে গেছে। মোট ১৮টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ সেই সুযোগ সম্প্রসারিত করেছে। ফলে কয়েক বছর আগেও যেখানে অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতো, এখন আর তেমন নেই।


এই সুযোগ আরো বেড়েছে শিক্ষার্থীর আসনসংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে। বলা হচ্ছে, এ বছর আসনসংখ্যা আরো বাড়িয়ে অধিক শিক্ষার্থীকে শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হবে। মেধাবীদের ভর্তির সুযোগ সম্প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষায়তনগুলোতে অব্যবস্থাপনাও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। ফলে শিক্ষার পরিবেশ বিঘি্নত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই দুরবস্থা যে কতটা প্রকট, তার প্রমাণ মেলে কালের কণ্ঠে বুধবার প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে। বলা হয়েছে, দেশের আটটি মেডিক্যাল কলেজেই এখন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, সেখানে এমন শিক্ষককেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়েছে, যিনি অধ্যাপকই নন। কিংবা অধ্যাপকের চলতি দায়িত্বে থাকা শিক্ষকও কোনো কোনো মেডিক্যাল কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করছেন। জানা গেছে, অবসর গ্রহণকারী সহযোগী অধ্যাপককে অধ্যাপকের চলতি দায়িত্ব দিয়ে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। অথচ সেখানে উপাধ্যক্ষেরই পদাধিকারবলে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল। এসব অনিয়ম করা হচ্ছে সরকারের দলীয়করণ নীতি বাস্তবায়ন করার জন্য। সরকার-সমর্থক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ এখানে অবৈধ হস্তক্ষেপ করছে বলেও অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলেও ড্যাব নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে একইভাবে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য খাতকে দুর্নীতিগ্রস্ত করতে দেখা গেছে। সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর শুধু রাজনৈতিক পরিচিতি বদলেছে। ড্যাবের জায়গায় স্বাচিপ এসেছে। রাজনৈতিক কারণে যোগ্য শিক্ষককে পেছনে ঠেলে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে যে প্রশাসনিক আস্থাহীন পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণ না ঘটলে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হবে না কোনোভাবেই। তাই যেসব মেডিক্যাল কলেজে সিনিয়র শিক্ষকদের ডিঙিয়ে জুনিয়র শিক্ষকদের অধ্যক্ষের দায়িত্বে বসানো হয়েছে, সেগুলোতে যোগ্যদের বসিয়ে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। এখন সারা দেশে মেডিক্যাল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে, এমন অবস্থায় প্রশাসনিক দুরবস্থা দূর করা অতি জরুরি। দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যদি প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, তাহলে নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকদের মনোবল নষ্ট হয়ে শিক্ষার মান কমে যেতে বাধ্য হবে; সেখানকার চিকিৎসা সুবিধার ক্ষেত্রেও এর প্রতিফলন ঘটবে। ফলে মেডিক্যাল কলেজের অনিয়ম শুধু যে শিক্ষা খাতকেই বিপর্যস্ত করবে এমন নয়; এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা চিকিৎসাব্যবস্থাকেও বিঘি্নত করবে। যত দ্রুত এসব অব্যবস্থাপনা দূর হবে, ততই মঙ্গল।

No comments

Powered by Blogger.