ভবদহ এলাকা রণক্ষেত্র-ভালো উদ্যোগের মন্দ পরিণতি

যশোরের ভবদহ এলাকার বিল কপালিয়ায় জোয়ার-আধার বা টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে শনিবার মনিরামপুরে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেছে। কথিত গ্রামবাসীদের হামলা এবং পুলিশি অ্যাকশনে আহত হয়েছেন জাতীয় সংসদের একজন হুইপ, একজন উপজেলা চেয়ারম্যান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত।


পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারি ও ব্যক্তিগত অন্তত ৯টি যানবাহন। এ হামলার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যশোর-খুলনা মহাসড়কের নওয়াপাড়া এলাকা তিন ঘণ্টার জন্য অবরোধ করে রাখে এবং কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করে। বিল কপালিয়ার টেকেরহাট এলাকায় ভাংচুর হয় বেশ কিছু দোকান ও বাড়িঘর। যশোর জেলারই পূর্ব খুকশিয়ায় জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি ফেলে বিল উঁচু করার পাশাপাশি নদীর নাব্যতা বাড়ানোয় জোয়ার-আধার প্রকল্প সফল হয়েছে। বিল কপালিয়ার অধিবাসীরা এ প্রকল্পকে স্বাগত জানাবে, এটাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু বাস্তবচিত্র ভিন্ন। যেভাবে শত শত ক্ষুব্ধ লোক সরকারদলীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে তাকে কেবল বিরোধী দল ও ঘের মালিকদের চক্রান্ত বলা চলে না। মানুষের ক্ষোভ অবশ্যই ছিল এবং বলা যায়, তাকে কাজে লাগিয়েছে প্রকল্পের বিরোধীরা। বিরোধিতা মূলত আসছে মাছের ঘের মালিকদের কাছ থেকে। তারা বলছে, প্রকল্পের জন্য খাল কাটা হলে জলাবদ্ধতায় এলাকাবাসীর ঘরবাড়ি ডুবে যাবে। বিল খুকশিয়ায় জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ পেতে সমস্যা এবং তিন বছরের প্রকল্প সাত বছরে শেষ হওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতাকে তারা বিল কপালিয়ার অধিবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টির জন্য কাজে লাগিয়েছে। এ প্রকল্পের আওতাধীন জমির মালিকদের বিল খুকশিয়া এলাকার তুলনায় দুই বছরের অগ্রিমসহ তিনগুণ ক্ষতিপূরণ প্রদানের সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও পরিস্থিতি যে যথেষ্টই উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছিল সে বিষয়টি কেন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন-আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বুঝে উঠতে পারলেন না, সেটা বোধগম্য নয়। প্রকল্পের উদ্দেশ্য বিলের অধিবাসীদের স্বার্থ সংরক্ষণ। কিন্তু তারা যদি ভুল বোঝে কিংবা তাদের যদি অপপ্রচারে বিভ্রান্ত করা সম্ভব হয়, তাহলে বুঝতে হবে উদ্যোগের মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু গলদ রয়ে গেছে। আলোচিত প্রকল্পের বিরুদ্ধে ঘের মালিকরা চক্রান্ত করছে, এটা ধরে নেওয়া যায়। একই সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি-অনিয়মের জন্যও যে জনসাধারণ ক্ষুব্ধ তাতেও সন্দেহের অবকাশ কম। শুধু ভবদহ নয়, দেশের আরও অনেক এলাকায় এ সংস্থার কাজে অসন্তোষের মাত্রা ব্যাপক। তাদের সঙ্গে প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশের অভিযোগও রয়েছে এবং সেটা অমূলক নয়। এ কারণে অনেক ভালো প্রকল্পও জনসাধারণ সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে থাকে। তাদের সঙ্গে যদি স্বার্থান্বেষী-মতলববাজরা যুক্ত হয় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। বিল কপালিয়ায় জোয়ার-আধার প্রকল্প বাস্তবায়ন রুখতে এ ধরনের আঁতাতই সম্ভবত গড়ে উঠেছে এবং তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে হামলা ও অগি্নসংযোগের ঘটনায়। আমরা আশা করব যে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জনসাধারণকে আস্থায় নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। প্রকল্প কাজে বাধা দিতে গিয়ে যারা তাণ্ডব চালিয়েছে তাদের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু ঢালাও মামলা দায়ের করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি-হেনস্তা করা অনুচিত হবে। একই সঙ্গে হুইপকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে যারা মহাসড়ক অবরোধ করেছে এবং ভাংচুর চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা চাই।
 

No comments

Powered by Blogger.