বিতর্ক নিরসনের এখনই সময়-পুলিশ থেকে নিরাপদ দূরত্ব
এ জগতে কোনোভাবেই সবাইকে খুশি করা যায় না। নায়ক-নায়িকার মিল হয়, দর্শক তালি দেয়; ওদিকে ব্যর্থ ভিলেন মনে মনে গালি দেয়। জটিল পৃথিবী! এ পৃথিবীতেই পুলিশ সাংবাদিক মেরে আনন্দ পায়, আর সাংবাদিকেরা মার খেয়ে হাসপাতালে যায়।
তবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বেঁচে থাকতে সাংবাদিকেরা নিয়মিত ডোজ হিসেবে পুলিশের পিটুনি খাবে, এটা কোনোভাবেই হতে পারে না। তাই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পিটুনি থেকে বাঁচার একটা উপায় বলে দিয়েছেন। চিড়িয়াখানায় জলহস্তীর খাঁচার সামনে, কিংবা রাস্তার রাজা ট্রাকের পেছনে ‘নিরাপদ দূরত্বে থাকুন’—কথাটি যেমন লেখা থাকে, মন্ত্রীও সে রকম পুলিশের কাছ থেকে সাংবাদিকদের নিরাপদ দূরত্বে থেকে সংবাদ সংগ্রহ করতে বলেছেন। খুবই চমৎকার বুদ্ধি। কিন্তু আগেই বলেছি, পৃথিবী জটিল। তাই সবাইকে খুশি করা যায় না। এভারেস্টে ওঠেন মূসা, চিনিতে ওঠে পিঁপড়া আর মন্ত্রীর কথায় ওঠে বিতর্ক। মূল বিতর্কটা হলো, মন্ত্রী নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলেছেন। কিন্তু পুলিশ থেকে ঠিক কতটুকু দূরে থাকলে তা নিরাপদ বলে ধরা হবে সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা দেননি। ফলে অনেকেই রাস্তা মাপা বাদ দিয়ে পুলিশের কাছ থেকে দূরত্ব মাপা শুরু করে দিয়েছেন। এখানেও সমস্যা আছে। ঢাকা শহরে পুলিশের সংখ্যা কম নয়। একদল পুলিশ থেকে নিরাপদ দূরত্বে যাওয়ার পর হয়তো দেখা যাবে সামনে আরেক দল পুলিশ পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কত যে সমস্যা! এভারেস্টের শেষ আছে। কিন্তু সমস্যার কোনো শেষ নেই। এমনিতেই পুলিশদের নেই পর্যাপ্ত বিনোদন ব্যবস্থা। মাঝেমধ্যে সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্র পিটিয়ে তারা যে শান্তি আর তৃপ্তি পায়, তা অন্য কিছুতে পায় না। কিন্তু প্রতিমন্ত্রীর কথায় সবাই যদি পুলিশের কাছ থেকে দূরে সরে যায় তাহলে তারা কাকে পেটাবে? বাংলা সিনেমার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, পুলিশ অত্যন্ত অ্যাকশনধর্মী এবং মারামারিপ্রিয় হয়। মানুষের রক্তে থাকে হিমোগ্লোবিন, আর পুলিশের রক্তে থাকে মারামারি। তাই তাদেরকে এভাবে দূরে ঠেলে দিয়ে বিনোদনবঞ্চিত করা নিয়ে বিতর্ক চলছে। অবশ্য পুলিশসদস্যরা এখনো—কাছে থাকুন দূরত্ব যতই হোক না কেন—নীতিতে বিশ্বাসী। তার পরও এই চলমান বিতর্কগুলোর অবসান হওয়া জরুরি। তা না হলে যেকোনো সময় পুলিশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। আশা করছি কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
No comments