চারদিক-স্বপ্নের শুরু যেখানে by মাহা নাশিতা মৃত্তিকা
বুকভরা স্বপ্ন আর দেশের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে ছোট্ট এই দেশে পদার্পণ। ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বন্যার পানি ভেঙে স্ত্রী ও এক বছরের শিশুপুত্রকে নিয়ে আসেন এই দেশে। মনের জোর ও ভালো কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে আজও তিনি বাংলাদেশে আছেন ১৩ বছর ধরে। যাঁর কথা বলছি তিনি কাং কিউটেক। জাতীয়তায় একজন কোরিয়।
বাংলাদেশে বসবাসকারী হাজার খানেক কোরিয়র মাঝে তিনিও একজন।
বাংলাদেশ আর কোরিয়ার আবহাওয়ার ধরন এক নয়, খাদ্যাভ্যাসও ভিন্ন। তাই এ দেশে বসবাসরত প্রবাসী কোরিয়ানদের জন্য মিস্টার কাং ও তাঁর বন্ধু মিস্টার ইয়ুন এবং কোয়ান মিলে গড়ে তোলেন কৃষিভিত্তিক খামার। এই খামারটি আজ এক প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি, যা বাংলাদেশে বসবাসরত সব কোরিয়ান নাগরিক ও রেস্টুরেন্টগুলোতে কোরিয়ান শাক-সবজি ও বিভিন্ন খাবার সরবরাহ করে। মি. কাং আমার বাবার বন্ধু হওয়ার সুবাদে আমরা তাঁদের পাঁচ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে দুটি আনন্দময় দিন কাটানোর সুযোগ পাই।
তাঁদের এই কোম্পানি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার ঘোগা গ্রামে অবস্থিত। জায়গাটি অবশ্য রামচন্দ্রপুর দীঘিরপাড় নামেও পরিচিত। সেখানে আমাদের অভ্যর্থনা জানান মি. ইয়ুন ও তাঁর স্ত্রী মিস লি। ফার্ম পরিচালনার জন্য মি. ইয়ুন সস্ত্রীক ফার্মে বসবাস করেন। উন্নত জীবনের আধুনিক সব ব্যবস্থাই করে নিয়েছেন থাকার জায়গাটিতে। তবু গ্রামীণ পরিবেশ চারপাশে। এমন ঘোর গ্রামে তাঁরা গ্রামের মানুষের আপনজনে পরিণত হয়েছেন, ভালোবাসা পেয়েছেন। তাঁদের আন্তরিকতা সত্যিই সবাইকে মুগ্ধ করে। তাঁদের আন্তরিকতায় জাতিগত ভেদাভেদহীন সুন্দর সময় কেটেছে আমাদের।
এই ফার্মটি নিজের দেশের মানুষের যেমন সুবিধা প্রদান করছে, তেমনি এ দেশের মানুষের জন্যও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। প্রথমে এই জমি চাষের উপযোগী ছিল না। চাষের অনুপযোগী বালুমাটিতে লালমাটি ও জৈবসার মিশিয়ে তাঁরা উর্বর করে তোলেন। এখনো ফসল উৎপাদনে কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না। খামারের গরুর গোবর, মুরগির বিষ্ঠা, কাঠের গুঁড়া দিয়ে জৈবসার প্রস্তুত করে তা ব্যবহার করা হয়। খামারের গবাদিপশুকেও হাতে তৈরি প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হয়। ফসলে কোনো রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। আশপাশের কয়েকটি জমিতে কোম্পানির পক্ষ থেকে কৃষকদের কোরিয়ান ধানের বীজ দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় চাষাবাদের জন্য। মুক্তাগাছায় চাষিদের জন্য প্রশিক্ষণকেন্দ্রও আছে। এই ধান আবার তাঁরাই কৃষকদের কাছ থেকে অধিক মূল্যে কিনে নেন। কিন্তু শর্ত একটাই, কোনো রাসায়নিক উপকরণ ব্যবহার করা যাবে না। কদাচিৎ কেউ রাসায়নিক উপকরণ মেশালে শাস্তিস্বরূপ সে ফসল ক্রয় করা হয় না জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবে। বারিধারায় এই ফার্মের নিজস্ব বিপণনকেন্দ্র আছে এবং বনানীতে কোরিয়ান মার্টে তাঁরা শাকসবজি ও খাবার সরবরাহ করেন। খাবারের গুণগত মান ভালো হওয়ায় দামও যথেষ্ট বেশি। অনেক বাঙালিও অধিক মূল্যেই তাঁদের কাছ থেকে মাংস, দুধ ও ডিম ক্রয় করেন ভালো মানের জন্য।
তাঁদের দেশের প্রতি ভালোবাসা ও সততা দেখে মুগ্ধ হই। আর তাঁদের আছে সৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা। তাঁদের মতে, সৃষ্টিকর্তাই তাঁদের এত বড় কোম্পানি গড়ে তোলার আশীর্বাদ দেন। এই মূল্যবোধগুলো আজ আমাদের দেশে বড় প্রয়োজন। মি. কাং কৃষিশিক্ষায় পড়াশোনা করে কার্যক্ষেত্রে তা কাজে লাগিয়েছেন। তাঁর স্ত্রীও স্পেশাল এডুকেশন নিয়ে পড়াশোনা করে এ দেশের প্রতিবন্ধী শিশুদের মানসিক উন্নতির জন্য স্বেচ্ছাশ্রম সেবা দিচ্ছেন। আমাদের তরুণদেরও উচিত নিজ নিজ শিক্ষার ভিত্তিতে কর্মক্ষেত্র বেছে নেওয়া। তবেই দেশ ও সমগ্র জাতি উপকৃত হবে। অধিক উপার্জনের কথা চিন্তা না করে সঠিক উপায়ে সাবলম্বী হতে পারলেই সেই শিক্ষার মূল্য বৃদ্ধি পাবে। তরুণদের জন্য সেহা বাংলাদেশ লিমিটেড হয়ে উঠুক স্বপ্নপথের পাথেয়।
মাহা নাশিতা মৃত্তিকা
বাংলাদেশ আর কোরিয়ার আবহাওয়ার ধরন এক নয়, খাদ্যাভ্যাসও ভিন্ন। তাই এ দেশে বসবাসরত প্রবাসী কোরিয়ানদের জন্য মিস্টার কাং ও তাঁর বন্ধু মিস্টার ইয়ুন এবং কোয়ান মিলে গড়ে তোলেন কৃষিভিত্তিক খামার। এই খামারটি আজ এক প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি, যা বাংলাদেশে বসবাসরত সব কোরিয়ান নাগরিক ও রেস্টুরেন্টগুলোতে কোরিয়ান শাক-সবজি ও বিভিন্ন খাবার সরবরাহ করে। মি. কাং আমার বাবার বন্ধু হওয়ার সুবাদে আমরা তাঁদের পাঁচ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে দুটি আনন্দময় দিন কাটানোর সুযোগ পাই।
তাঁদের এই কোম্পানি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার ঘোগা গ্রামে অবস্থিত। জায়গাটি অবশ্য রামচন্দ্রপুর দীঘিরপাড় নামেও পরিচিত। সেখানে আমাদের অভ্যর্থনা জানান মি. ইয়ুন ও তাঁর স্ত্রী মিস লি। ফার্ম পরিচালনার জন্য মি. ইয়ুন সস্ত্রীক ফার্মে বসবাস করেন। উন্নত জীবনের আধুনিক সব ব্যবস্থাই করে নিয়েছেন থাকার জায়গাটিতে। তবু গ্রামীণ পরিবেশ চারপাশে। এমন ঘোর গ্রামে তাঁরা গ্রামের মানুষের আপনজনে পরিণত হয়েছেন, ভালোবাসা পেয়েছেন। তাঁদের আন্তরিকতা সত্যিই সবাইকে মুগ্ধ করে। তাঁদের আন্তরিকতায় জাতিগত ভেদাভেদহীন সুন্দর সময় কেটেছে আমাদের।
এই ফার্মটি নিজের দেশের মানুষের যেমন সুবিধা প্রদান করছে, তেমনি এ দেশের মানুষের জন্যও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। প্রথমে এই জমি চাষের উপযোগী ছিল না। চাষের অনুপযোগী বালুমাটিতে লালমাটি ও জৈবসার মিশিয়ে তাঁরা উর্বর করে তোলেন। এখনো ফসল উৎপাদনে কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না। খামারের গরুর গোবর, মুরগির বিষ্ঠা, কাঠের গুঁড়া দিয়ে জৈবসার প্রস্তুত করে তা ব্যবহার করা হয়। খামারের গবাদিপশুকেও হাতে তৈরি প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হয়। ফসলে কোনো রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। আশপাশের কয়েকটি জমিতে কোম্পানির পক্ষ থেকে কৃষকদের কোরিয়ান ধানের বীজ দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় চাষাবাদের জন্য। মুক্তাগাছায় চাষিদের জন্য প্রশিক্ষণকেন্দ্রও আছে। এই ধান আবার তাঁরাই কৃষকদের কাছ থেকে অধিক মূল্যে কিনে নেন। কিন্তু শর্ত একটাই, কোনো রাসায়নিক উপকরণ ব্যবহার করা যাবে না। কদাচিৎ কেউ রাসায়নিক উপকরণ মেশালে শাস্তিস্বরূপ সে ফসল ক্রয় করা হয় না জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবে। বারিধারায় এই ফার্মের নিজস্ব বিপণনকেন্দ্র আছে এবং বনানীতে কোরিয়ান মার্টে তাঁরা শাকসবজি ও খাবার সরবরাহ করেন। খাবারের গুণগত মান ভালো হওয়ায় দামও যথেষ্ট বেশি। অনেক বাঙালিও অধিক মূল্যেই তাঁদের কাছ থেকে মাংস, দুধ ও ডিম ক্রয় করেন ভালো মানের জন্য।
তাঁদের দেশের প্রতি ভালোবাসা ও সততা দেখে মুগ্ধ হই। আর তাঁদের আছে সৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা। তাঁদের মতে, সৃষ্টিকর্তাই তাঁদের এত বড় কোম্পানি গড়ে তোলার আশীর্বাদ দেন। এই মূল্যবোধগুলো আজ আমাদের দেশে বড় প্রয়োজন। মি. কাং কৃষিশিক্ষায় পড়াশোনা করে কার্যক্ষেত্রে তা কাজে লাগিয়েছেন। তাঁর স্ত্রীও স্পেশাল এডুকেশন নিয়ে পড়াশোনা করে এ দেশের প্রতিবন্ধী শিশুদের মানসিক উন্নতির জন্য স্বেচ্ছাশ্রম সেবা দিচ্ছেন। আমাদের তরুণদেরও উচিত নিজ নিজ শিক্ষার ভিত্তিতে কর্মক্ষেত্র বেছে নেওয়া। তবেই দেশ ও সমগ্র জাতি উপকৃত হবে। অধিক উপার্জনের কথা চিন্তা না করে সঠিক উপায়ে সাবলম্বী হতে পারলেই সেই শিক্ষার মূল্য বৃদ্ধি পাবে। তরুণদের জন্য সেহা বাংলাদেশ লিমিটেড হয়ে উঠুক স্বপ্নপথের পাথেয়।
মাহা নাশিতা মৃত্তিকা
No comments