স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে-রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব

রাজনৈতিক দলগুলোর কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনতেই প্রতিবছর আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দলগুলো বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় না। এ ব্যাপারে হিসাব প্রদানকারী ও গ্রহণকারী উভয়ের গাফিলতি আছে।


২০০৯ সালের রাজনৈতিক দলগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার কথা চলতি বছরের শুরুতে। অজ্ঞাত কারণে কয়েকটি ছোট দল বাদে কেউই হিসাব জমা দেয়নি। নির্বাচন কমিশনও এত দিন নীরব ছিল। জুলাই মাসে এসে তাদের ঘুম ভেঙেছে এবং এক চিঠিতে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে, যা গতকালই শেষ হয়েছে।
বার্ষিক হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি ও সদিচ্ছার প্রশ্নটিও জড়িত। তারা আদৌ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতে বিশ্বাসী কি না, সেটাই এর দ্বারা প্রমাণিত হবে। ২০০৮ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণী সব দল জমা দিয়ে একটি ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। কিন্তু সাত মাস পরও ২০১০ সালের হিসাব না দেওয়ার কী যুক্তি থাকতে পারে? নির্বাচন কমিশনই বা কেন সাত মাস পরে চিঠি দিল? এ চিঠি তো তারা জানুয়ারি ফেব্রুয়ারিতে দিতে পারত। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের চিঠিতে কিছু অস্পষ্টতা আছে। হিসাব দেওয়ার আগে সেসব বিষয় স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। তা ছাড়া দলের কোষাধ্যক্ষ দেশের বাইরে আছেন। তিনি ফিরলে হিসাব জমা দেওয়া হবে। বিরোধী দল বিএনপি বলেছে, তারা হিসাব প্রস্তুত করেছে। ৩১ জুলাই ছুটি থাকায় আজ রোববার জমা দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল থেকে বিরোধী দল এগিয়ে আছে।
নির্বাচন কমিশন বলেছে, নির্ধারিত দিনের মধ্যে হিসাব পাওয়া না গেলে আবারও তাগাদা দিয়ে চিঠি দেওয়া হবে। পূর্ববর্তী বছরের হিসাব নিয়ে পরের বছরের দ্বিতীয়ার্ধে এসে এই চিঠি চালাচালির কোনো মানে হয় না। আসলে দুই পক্ষই বিষয়টি নিয়েছে নিয়ম রক্ষা হিসেবে। এতে যে লক্ষ্যে আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণী জমা নেওয়া হচ্ছে, তা অর্জিত হবে না। হিসাব বিবরণী দাখিলের প্রধান লক্ষ্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। উন্নত দেশগুলোতে রাজনৈতিক দল কোন উত্স থেকে অর্থ পেল, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কত চাঁদা দিল, তাও জানিয়ে দেয়। রাজনৈতিক নেতৃত্ব চাইলে আমাদের দেশেও তা চালু করা অসম্ভব নয়।
দেশবাসী আশা করে, যাঁরা দেশ পরিচালনা করবেন, যাঁরা জনগণের নেতৃত্ব দেবেন, তাঁদের প্রতিটি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকবে। এ কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত যথাসময়ে বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়া। আর নির্বাচন কমিশনের কর্তব্য হবে সেই হিসাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা। কোনো বিষয়ে তাদের সন্দেহ হলে তারা সংশ্লিষ্ট দলের কাছে ব্যাখ্যাও চাইতে পারে। এত দিন রাজনৈতিক দলগুলোর কাজকর্মের কোনো জবাবদিহি ছিল না, খেয়ালখুশিমতো সবকিছু করত। বার্ষিক হিসাব বিবরণী স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ক্ষেত্রে একধাপ অগ্রগতি বলেই আমাদের ধারণা। সে ক্ষেত্রে হিসাব প্রদানের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমলে নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.