বালামের গল্প

পাঠক, এই লেখা যখন পড়ছেন, বালাম তখন সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে গান গাইতে যাওয়ার আগে ধানমন্ডির প্র্যাকটিস প্যাডে বসে এক সন্ধ্যায় শোনালেন টুকরো টুকরো অনেক গল্প। ধানমন্ডির প্র্যাকটিস প্যাডের বাইরে বালামের দেখা মিলল ঘর্মক্লান্ত অবস্থায়। নতুন কেনা টয়োটা গাড়িতে এক্সট্রা কিটস লাগাচ্ছে মিস্ত্রি।


তদারক করতে গিয়ে রীতিমতো কাজে নেমে পড়েছেন বালাম। গাড়ি নিয়ে এই শিল্পীর পাগলামির ব্যাপারটা নতুন নয়। গাড়ির সংখ্যা একাধিক। লাল রঙের বিএমডব্লিউ নিয়ে এখনো মধ্যরাতে বেরিয়ে পড়েন লং ড্রাইভে। ‘কিন্তু ভাই, মারাত্মক তেল খায় বিএমডব্লিউ। জ্যামের রাস্তায় এ গাড়ি চালিয়ে শান্তি নেই। তাই তো টয়োটার এ গাড়িটা কিনলাম কিছুদিন আগে। এখন কিটস লাগিয়ে স্পোর্টস কারের মতো করতে চাইছি।’ বলছিলেন বালাম।

২.
এফ আই মানিকের বড় সাহেব এবং মোরশেদুল ইসলামের প্রিয়তমেষু চলচ্চিত্র দিয়ে বড় পর্দার গানে বালামের অভিষেক। সম্প্র্রতি গান গেয়েছেন মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের প্রজাপতি ও নোমান রবিনের কমন জেন্ডার চলচ্চিত্রে। এই দুটো গানের মধ্যে বালাম এগিয়ে রাখছেন প্রথমটিকেই। ‘আমি ছাড়া অন্য কারও সুরে এই প্রথম গান গাইলাম। সম্ভবত গানে কিছু বৈচিত্র্য রয়েছে। আর হাবিবের মতো মেধাবী সুরকারের সঙ্গে কাজ করেও আনন্দ।’ বলছিলেন বালাম। দুজনের পরিচয় অবশ্য সেই ছোটবেলা থেকে। সেই বন্ধুত্বের দাবি নিয়েই হঠাৎ একদিন বালামকে হাবিবের ফোন, ‘বালাম ভাই, একটা গান গেয়ে দিতে হবে।’ বালাম বললেন, ‘হাবিব এই প্রথম আমাকে একটা গানে কণ্ঠ দিতে ডাকল। না করার প্রশ্নই আসে না। প্রথম দিন তো ভয়েস দিতে গিয়ে দেখি, আর্জেন্টিনার খেলা চলছে। গান বাদ দিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিয়েছি আর খেলা দেখেছি। পরে আরও দুই দিন গিয়ে জমিয়ে আড্ডা মারতে মারতে গান গেয়েছি। হাবিবের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা এ রকম।’

৩.
মাঝখানে গান করা একদম বন্ধ করে দিয়েছিলেন। চলছিল শুধুই স্টেজ শো। তবে সেই ‘ধর্মঘট’ ভেঙে আবার শুরু করেছেন নতুন গানের কাজ। তবে এবার আর নিজের জন্য নয়, গান করছেন একগুচ্ছ নতুন গায়ক-গায়িকার জন্য। তবে কি প্রেম শিকারির মতো আরও একটি সুপার হিট মিশ্র অ্যালবাম পেতে যাচ্ছে শ্রোতারা? ‘প্রায়ই নতুন গায়ক-গায়িকারা আমার সংগীতায়োজনে গান করতে চান। তাঁদের অনেকে আবার অনেক ভালো গাইতে পারেন। কিন্তু সময় ও সুযোগের অভাবে তাঁদের সঙ্গে কাজ করা হয়ে ওঠে না। এ রকম কয়েকজন গায়ক নিয়ে এবারের কাজটি করব। বলতে পারেন পুরোটাই একটা পরীক্ষামূলক কাজ।’ বলছিলেন বালাম। তিনি বলেন, ‘প্রেম শিকারির মতো শ্রোতাপ্রিয়তা পাবে কি না জানি না। তবে আমাদের প্রাণান্ত চেষ্টা থাকবে শ্রোতাদের নতুন স্বাদ দেওয়ার।’

৪.
বালাম অ্যালবামটি ছিল অনেক জনপ্রিয়। কিন্তু এর পরের অ্যালবামগুলোয় বালামকে আর সেভাবে পাওয়া যায়নি। কেন? শ্রোতারা বলছে, সুর ও সংগীতায়োজনে একঘেয়েমি চলে এসেছে। গান শুনলে মনে হয়, একই গান ভিন্ন কথায় শুনছি। এ ব্যাপারে বালাম কী বলেন? ‘একজন শিল্পীর তো কিছু স্বকীয়তা থাকে। সেটাকে আপনি কখনোই বাদ দিতে পারবেন না। তবে শ্রোতারা তো আর এত কিছু বুঝবে না। তারা চাইবে পছন্দসই গান। সে জন্যই মাসকয়েক নতুন গান করা থেকে একদমই দূরে ছিলাম। বলতে পারেন, মাথার হার্ডডিস্কটা খালি করলাম। এর মধ্যে আনেক নতুন ধরনের গান শুনেছি। বলতে পারেন, নিজেকে নতুন করে তৈরি করেছি। এবারের গানগুলো তাই স্বকীয়তার ভেতরে থেকেও অন্য রকম হবে বলে আশা করি।’

৫.
বিবাহিত জীবন কেমন কাটছে? বেমক্কা এ প্রশ্নে হেসে ফেলেন বালাম। বললেন, ‘অনেক ভালো। বিয়ে করে একটা জিনিস বেশ বুঝেছি, এটা না করলে জীবনে পূর্ণতা আসে না। সুখে আছি ভাই, ভালো আছি। মা-বাবা, বোনকে সময় দিচ্ছি। সব মিলিয়ে মাঝেমধ্যে মনে হয়, জীবনটা খুব একটা খারাপ নয়। গানের মতো একঘেয়েমি(!) চলে এলেও পরতে পরতে এর আনন্দ অসীম। শুধু একটু কষ্ট করে আনন্দটা খুঁজে নিতে হয়। প্রতিদিন সেই নতুন আনন্দের পেছনে ছুটছি।’

No comments

Powered by Blogger.