আইন সংশোধনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তৎপর হোক-ইউপি-পৌরসভা নির্বাচন

নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের রশিটানাটানিতে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও পৌরসভাগুলোর নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এসব স্থানীয় সরকার সংস্থার মেয়াদ অনেক আগে শেষ হয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও আইনি জটিলতার কারণে এত দিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারেনি।


ক্ষমতার পালাবদলের পর নির্বাচন কমিশন ইউপি ও পৌরসভা নির্বাচনের উদ্যোগ নিলেও আইন বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আইনে বলা আছে, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার এক ওয়ার্ডের সঙ্গে অন্য ওয়ার্ডের জনসংখ্যার ব্যবধান ১০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। নির্বাচন কমিশন মনে করে, এই নিয়মে ইউপি ও পৌরসভার ওয়ার্ডগুলোর সীমানা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। সেটি করতে গেলে সারা দেশেই মামলা-মোকদ্দমা হবে এবং তাতে নির্বাচন ভণ্ডুল হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
আইন সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার বিভাগকে বারবার তাগাদা দিয়েও কোনো জবাব পায়নি। গত বৃহস্পতিবারও তারা চিঠি লিখেছে। তবে ১৮ জুলাই স্থানীয় সরকারমন্ত্রী জাতীয় সংসদে জানান, নভেম্বরের মধ্যে পৌরসভা এবং ডিসেম্বরের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে ক্ষেত্রে কমিশনের প্রত্যাশা ছিল, সদ্যসমাপ্ত অধিবেশনে আইনটি সংশোধন করা হবে। কিন্তু তা করা হয়নি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানিয়ে দিয়েছেন, আইন সংশোধন না করলে নভেম্বর-ডিসেম্বরে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। এর পরও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আইনটি সংশোধনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় অধিবেশনে আইনটি সংশোধন করা হলে নভেম্বর-ডিসেম্বরে নির্বাচন করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।
সমস্যা আছে উপজেলা নির্বাচন নিয়েও। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জারি করা অধ্যাদেশবলে ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি ৪৮২টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও নানা কারণে কয়েকটি পদ শূন্য আছে। সেসব শূন্য পদে নির্বাচন করার জন্য আইন সংশোধন করতে হবে। মহাজোট সরকার অধ্যাদেশটি বাতিল করে ১৯৯৮ সালের আইনটি পুনরায় চালু করলেও কিছু অসংগতি রয়ে গেছে। আগের আইনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছিল না। এ ব্যাপারেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বিকার।
দেশবাসী চায়, মেয়াদোত্তীর্ণ সব স্থানীয় সরকার সংস্থায় অবিলম্বে নির্বাচন হোক। নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুত। সে ক্ষেত্রে সরকার বা সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্ব হবে আইনটি সংশোধনে পদক্ষেপ নেওয়া। প্রয়োজনে অধ্যাদেশ জারি করেও ইউপি ও পৌরসভা নির্বাচনের বাধা সরকার অপসারণ করতে পারে। সেটি যদি একান্তই সম্ভব না হয়, তা হলে তাদের কর্তব্য হবে আগামী অধিবেশনের শুরুতেই আইনটি সংশোধন করা।
একই সঙ্গে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। এর মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত মামলার অজুহাতে নির্বাচন না করার যুক্তি নেই। দেশের বৃহত্তম স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানটির নির্বাচন যথাসময়ে না হলে নগরবাসী যে দুরবস্থায় পড়ে, সে কথা প্রধানমন্ত্রীও স্বীকার করেছেন। অতএব, নগরবাসীর সমস্যা সমাধানে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করা জরুরি বলে মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.