ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায় বাণিজ্যিক ব্যাংকঃ ব্যাংকিংয়ে সংস্কার দরকার
দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের মূল কার্যক্রম বা লক্ষ্য থেকে সরে গিয়ে অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। অথচ ব্যাংকের মূল কার্যক্রম হচ্ছে শিল্পখাত ও মেয়াদি ঋণ খাতে বিনিয়োগ করা। সেখান থেকে সরে গিয়ে ব্যাংকগুলো আশঙ্কাজনক হারে বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলছে আবাসন খাতসহ শেয়ারবাজার ও ক্ষুদ্রঋণ খাতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকগুলো টিকে থাকার জন্য এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের সঙ্কট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের ব্যাংক খাত ক্রমেই প্রথাগত ব্যাংকিং কর্মকাণ্ডের বাইরে তাদের সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে ব্যাংকিং খাতের জন্য বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
আইএফএম থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ : ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেম স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে। এটা এক ধরনের ঝুঁকি। শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারে সংস্থাটি মনে করছে, শেয়ারবাজারে পতন ঘটলে তা কোনো কোনো ব্যাংকের জন্য ডেকে আনতে পারে আরও বড় বিপদ। ব্যাংকগুলোর ক্রমেই পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা জোরদার করাকেও বিপজ্জনক মনে করছে সংস্থাটি। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীও বলেছেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের যে বৈশিষ্ট্য তাতে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের অনেকে একইরকম উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তাদের মতে, দেশের শেয়ারবাজার এতটাই নড়বড়ে যে, যে কোনো সময় তা থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। জমি বা গৃহায়ন খাতেও একইভাবে বিনিয়োগ ঝুঁকিবহুল হওয়া অসম্ভব নয়।
এদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘ বা স্বল্পমেয়াদি কোনো খাতেই ঋণ বিতরণের সুযোগ নেই, কাজেই বিনিয়োগ করতে হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ খাতে। কারণ ব্যাংক যে আমানত গ্রহণ করে, তার বিপরীতে সুদ দিতে হয়। বিনিয়োগ না করলে সে আমানত অলস পড়ে থাকে বা দায় হয়ে দেখা দেয়। অথচ সুদ পরিশোধ করতে হয় নিয়মিত। এ অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ খাত বেছে নেয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করেও টাকা পড়ে থাকছে ব্যাংকের ভল্টে। বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে অলস টাকার পরিমাণ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। ঋণের চাহিদা না থাকায় এ টাকা বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না। অর্থাত্ ঋণের চাহিদার চেয়ে বেড়ে যাচ্ছে আমানতের পরিমাণ। স্বাভাবিকভাবে এই অর্থ উত্পাদনশীল খাতে বিনিয়োগ হওয়ার কথা। বিশেষত শিল্প খাতে। কিন্তু শিল্প উদ্যোক্তারা ঋণ নেয়ার আগে বিদ্যুত্ ও গ্যাস সঙ্কটের কথা ভাবছেন। ঋণ নিলে সুদ গুনতে হবে; কিন্তু বিদ্যুত্-গ্যাসের অভাবে লাভজনক হারে উত্পাদন বাড়বে না। এ অবস্থায় ঝুঁকির মধ্যেই যথাসম্ভব যাচাই-বাছাই করে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে হচ্ছে।
জানা গেছে, আবাসন খাতে সরকারি-বেসরকারি ঋণদানের পরিমাণ বেড়েছে ৮০ শতাংশ হারে। গত জুন পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকের আবাসন খাতে বিনিয়োগ আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ৪০ শতাংশ। পাশাপাশি এ খাতেও ঝুঁকি উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। অর্থাত্ গৃহায়ন খাতের ঋণ ইতোমধ্যে খেলাপি হতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুসারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম কেবল ব্যাংকিং বিনিয়োগ ও ব্যবসার কর্মকাণ্ডেই সীমাবদ্ধ থাকবে। অন্য কোনো ব্যবসা এ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অভিজ্ঞমহলের মতে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বর্তমানে যে ঝুঁকি নিচ্ছে তা যে শুভ নয়, তার অনেক দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
ঝুঁকিপূর্ণ খাতে ঋণ বাড়ার এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে অভিজ্ঞ ব্যাংকার ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এখন গুরুত্বপূর্ণ। দেশীয় বাস্তবতার আলোকে ব্যাংকের কার্যক্রম ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করার উপায় নেই। বিদ্যমান সমস্যার চাপ কমালে ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় পেশাদারিত্ব আসবে, খেলাপি ঋণের ভার কমবে, অলস আমানত সেবা খাতে বিনিয়োগের পথ বের হবে। এজন্য নতুন ব্যাংকিং নীতিমালা প্রণয়ন করার কথাও ভেবে দেখতে হবে সরকারকে।
আইএফএম থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ : ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেম স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে। এটা এক ধরনের ঝুঁকি। শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারে সংস্থাটি মনে করছে, শেয়ারবাজারে পতন ঘটলে তা কোনো কোনো ব্যাংকের জন্য ডেকে আনতে পারে আরও বড় বিপদ। ব্যাংকগুলোর ক্রমেই পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা জোরদার করাকেও বিপজ্জনক মনে করছে সংস্থাটি। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীও বলেছেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের যে বৈশিষ্ট্য তাতে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের অনেকে একইরকম উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তাদের মতে, দেশের শেয়ারবাজার এতটাই নড়বড়ে যে, যে কোনো সময় তা থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। জমি বা গৃহায়ন খাতেও একইভাবে বিনিয়োগ ঝুঁকিবহুল হওয়া অসম্ভব নয়।
এদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘ বা স্বল্পমেয়াদি কোনো খাতেই ঋণ বিতরণের সুযোগ নেই, কাজেই বিনিয়োগ করতে হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ খাতে। কারণ ব্যাংক যে আমানত গ্রহণ করে, তার বিপরীতে সুদ দিতে হয়। বিনিয়োগ না করলে সে আমানত অলস পড়ে থাকে বা দায় হয়ে দেখা দেয়। অথচ সুদ পরিশোধ করতে হয় নিয়মিত। এ অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ খাত বেছে নেয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করেও টাকা পড়ে থাকছে ব্যাংকের ভল্টে। বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে অলস টাকার পরিমাণ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। ঋণের চাহিদা না থাকায় এ টাকা বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না। অর্থাত্ ঋণের চাহিদার চেয়ে বেড়ে যাচ্ছে আমানতের পরিমাণ। স্বাভাবিকভাবে এই অর্থ উত্পাদনশীল খাতে বিনিয়োগ হওয়ার কথা। বিশেষত শিল্প খাতে। কিন্তু শিল্প উদ্যোক্তারা ঋণ নেয়ার আগে বিদ্যুত্ ও গ্যাস সঙ্কটের কথা ভাবছেন। ঋণ নিলে সুদ গুনতে হবে; কিন্তু বিদ্যুত্-গ্যাসের অভাবে লাভজনক হারে উত্পাদন বাড়বে না। এ অবস্থায় ঝুঁকির মধ্যেই যথাসম্ভব যাচাই-বাছাই করে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে হচ্ছে।
জানা গেছে, আবাসন খাতে সরকারি-বেসরকারি ঋণদানের পরিমাণ বেড়েছে ৮০ শতাংশ হারে। গত জুন পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকের আবাসন খাতে বিনিয়োগ আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ৪০ শতাংশ। পাশাপাশি এ খাতেও ঝুঁকি উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। অর্থাত্ গৃহায়ন খাতের ঋণ ইতোমধ্যে খেলাপি হতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুসারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম কেবল ব্যাংকিং বিনিয়োগ ও ব্যবসার কর্মকাণ্ডেই সীমাবদ্ধ থাকবে। অন্য কোনো ব্যবসা এ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অভিজ্ঞমহলের মতে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বর্তমানে যে ঝুঁকি নিচ্ছে তা যে শুভ নয়, তার অনেক দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
ঝুঁকিপূর্ণ খাতে ঋণ বাড়ার এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে অভিজ্ঞ ব্যাংকার ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এখন গুরুত্বপূর্ণ। দেশীয় বাস্তবতার আলোকে ব্যাংকের কার্যক্রম ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করার উপায় নেই। বিদ্যমান সমস্যার চাপ কমালে ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় পেশাদারিত্ব আসবে, খেলাপি ঋণের ভার কমবে, অলস আমানত সেবা খাতে বিনিয়োগের পথ বের হবে। এজন্য নতুন ব্যাংকিং নীতিমালা প্রণয়ন করার কথাও ভেবে দেখতে হবে সরকারকে।
No comments