এবার পাহাড় কাটা চলছে নতুন কৌশলে by মোহাম্মদ রফিক
বিভিন্ন স্থানে পাঁচ-ছয় ফুট গভীর করে একাধিক ‘বল্লি’ (গোলাকৃতির গাছের টুকরা) গেড়ে দেওয়া হয়। এরপর বর্ষা মৌসুমে ওই বল্লিতে মোটা রশি বেঁধে কয়েকজন শ্রমিক জোরে টান মারেন। সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের ওপর দিক থেকে বিরাট একটি অংশ ধসে পড়ে।
অন্যদিকে কোনো কোনো পাহাড়ের ওপর ৩০-৪০ জন শ্রমিক খুন্তি-কোদাল নিয়ে উঠে পাহাড় কাটেন রাত-দিন পালা করে। তারপর মাটিগুলো চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে সমান করেন। কোথাও আবাসন ব্যবসা আবার কোথাও বাগান সৃজনের নামে নগরের বিভিন্ন স্থানে এভাবেই চলছে পাহাড় কাটা। ইতিপূর্বে বুলডোজার কিংবা স্ক্যাবেটর দিয়ে পাহাড় কাটা হলেও এবার কৌশল পাল্টেছেন পাহাড় কর্তন কর্মীরা।
সূত্র জানায়, বায়েজিদ বোস্তামি এলাকার এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটিসংলগ্ন খুলশি থানাধীন বিশ্ব কলোনি মোস্তফা হাকিম বাগান বাড়ি এলাকায় জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসংলগ্ন মোজাফফর আহমদ হাউজিং সোসাইটিসহ নগরের অন্তত ১০-১২টি স্থানে পাহাড় কাটা চলছে। প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনায় ১৩৯ জন নারী-পুরুষের প্রাণহানি ঘটলে সংশ্লিষ্টমহলের টনক নড়ে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পাহাড় কাটার দায়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), পরিবেশ অধিদপ্তর ও নগর পুলিশ ৭৯টি মামলা করলেও মূল হোতারা এখনো রয়ে গেছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত আদালতে ৭৯টি মামলার মধ্যে দুইটি মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। ১৬টি মামলা খারিজ হয়ে গেছে। বাকি ৬১টি মামলা বিচারাধীন।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের জুন থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত পাহাড় কাটাসংক্রান্ত ১৮টি মামলা দায়ের করা হয়। নাম প্রকাশ না করে নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চট্টগ্রামের একাধিক প্রভাবশালী রাজনীতিক প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে পাহাড় কাটার দায়ে অভিযুক্ত। যাঁরা মঞ্চে দাঁড়িয়ে পরিবেশের ক্ষতিসাধনকারীদের বিরুদ্ধে বড় বড় বক্তৃতা-বিবৃতি দেন তাঁদের অনেকেই আবাসন ব্যবসার নামে বছরের পর বছর পাহাড় কাটছেন।’
সূত্র জানায়, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পাহাড় কাটা বন্ধ থাকলেও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তা পুনরায় শুরু হয়েছে। কয়েক মাস ধরে নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে উত্তর পাহাড়তলি, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, বিশ্ব কলোনি, ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলি ও জালালাবাদ এলাকায় পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলেও পুলিশ বলছে ‘কোন জায়গায় কাটা হচ্ছে তা আমরা জানি না। পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
সরেজমিনে দেখা যায়, ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলি ওয়ার্ডের মাহমুদাবাদের পশ্চিমের বিশাল একটি পাহাড়ের উপরিভাগ ইতিমধ্যেই কেটে ফেলা হয়েছে। গত ৫ ও ৬ জুন পাহাড় কাটার ছবি তুলতে গেলে শ্রমিকেরা পালিয়ে যান।
নাম প্রকাশ না করে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, দিন ও রাতে ১০-১২ জন শ্রমিক পালা করে পাহাড়টি কাটছেন। এটির চূড়ায় উঠে দেখা যায়, খুন্তি ও কোদাল দিয়ে কায়দা করে পাহাড়টি কাটা হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে অতিবৃষ্টি হলে পাহাড়ের উপরিভাগ থেকে মাটি আস্তে আস্তে ধসে গিয়ে একসময় সমতল ভূমিতে পরিণত হবে। পাহাড়টি ধসে পড়ার জন্য উত্তর পাশের নিচের কিছু অংশও কায়দা করে কেটে ফেলা হয়েছে।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ শাহজাহানকে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের ঘনিষ্ঠ লোক বলে পরিচিত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘প্লট ব্যবসার জন্য পাহাড় কাটা হচ্ছে এ কথা সঠিক নয়। মূলত পাহাড়ের চূড়া একটু সমতল করে বাগান সৃজন করার জন্যই কিছু অংশ কাটা হচ্ছে।’
স্থানীয় সূত্র জানায়, ৩০-৩২ সদস্যের একটি দল (গ্রুপ) আবাসন ব্যবসার জন্য ২০০৮ সালের এপ্রিলে ১৫ একর আয়তনের ওই পাহাড় কিনে নেন। প্রশান্ত দাশ ও মোহাম্মদ আলী ওই দলের অন্যতম সদস্য। পাহাড়টি ক্রয়-বিক্রয়ে স্থানীয় একজন মধ্যস্বত্বভোগী প্রশান্ত দাশকে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলানোর চেষ্টা করলে তিনি কথা বলতে বা বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং তাঁর (প্রশান্ত দাস) মুঠোফোনের নম্বরও এ প্রতিবেদককে দিতে নিষেধ করেন।
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিউদ্দীন সেলিম পাহাড় কাটার বিষয়টি অবগত রয়েছেন বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা না দিলে আমাদের করার কিছু থাকছে না।’ পাহাড় কাটা বন্ধ করতে না পারার জন্য পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন তিনি। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রধান সড়ক থেকে পুলিশ পাহাড় কাটার জায়গাটিতে যেতে যেতে আলামত উধাও হয়ে যায়।’ এ রকম মন্তব্য করেছেন সহকারী পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) বাবুল আকতারও।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান আকন্দ দক্ষিণ পাহাড়তলিতে পাহাড় কাটার বিষয়ে অবগত রয়েছেন বলে জানান। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট লোকজনকে নোটিশ দিয়েছি।’
সূত্র জানায়, বায়েজিদ বোস্তামি এলাকার এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটিসংলগ্ন খুলশি থানাধীন বিশ্ব কলোনি মোস্তফা হাকিম বাগান বাড়ি এলাকায় জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসংলগ্ন মোজাফফর আহমদ হাউজিং সোসাইটিসহ নগরের অন্তত ১০-১২টি স্থানে পাহাড় কাটা চলছে। প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনায় ১৩৯ জন নারী-পুরুষের প্রাণহানি ঘটলে সংশ্লিষ্টমহলের টনক নড়ে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পাহাড় কাটার দায়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), পরিবেশ অধিদপ্তর ও নগর পুলিশ ৭৯টি মামলা করলেও মূল হোতারা এখনো রয়ে গেছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত আদালতে ৭৯টি মামলার মধ্যে দুইটি মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। ১৬টি মামলা খারিজ হয়ে গেছে। বাকি ৬১টি মামলা বিচারাধীন।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের জুন থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত পাহাড় কাটাসংক্রান্ত ১৮টি মামলা দায়ের করা হয়। নাম প্রকাশ না করে নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চট্টগ্রামের একাধিক প্রভাবশালী রাজনীতিক প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে পাহাড় কাটার দায়ে অভিযুক্ত। যাঁরা মঞ্চে দাঁড়িয়ে পরিবেশের ক্ষতিসাধনকারীদের বিরুদ্ধে বড় বড় বক্তৃতা-বিবৃতি দেন তাঁদের অনেকেই আবাসন ব্যবসার নামে বছরের পর বছর পাহাড় কাটছেন।’
সূত্র জানায়, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পাহাড় কাটা বন্ধ থাকলেও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তা পুনরায় শুরু হয়েছে। কয়েক মাস ধরে নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে উত্তর পাহাড়তলি, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, বিশ্ব কলোনি, ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলি ও জালালাবাদ এলাকায় পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলেও পুলিশ বলছে ‘কোন জায়গায় কাটা হচ্ছে তা আমরা জানি না। পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
সরেজমিনে দেখা যায়, ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলি ওয়ার্ডের মাহমুদাবাদের পশ্চিমের বিশাল একটি পাহাড়ের উপরিভাগ ইতিমধ্যেই কেটে ফেলা হয়েছে। গত ৫ ও ৬ জুন পাহাড় কাটার ছবি তুলতে গেলে শ্রমিকেরা পালিয়ে যান।
নাম প্রকাশ না করে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, দিন ও রাতে ১০-১২ জন শ্রমিক পালা করে পাহাড়টি কাটছেন। এটির চূড়ায় উঠে দেখা যায়, খুন্তি ও কোদাল দিয়ে কায়দা করে পাহাড়টি কাটা হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে অতিবৃষ্টি হলে পাহাড়ের উপরিভাগ থেকে মাটি আস্তে আস্তে ধসে গিয়ে একসময় সমতল ভূমিতে পরিণত হবে। পাহাড়টি ধসে পড়ার জন্য উত্তর পাশের নিচের কিছু অংশও কায়দা করে কেটে ফেলা হয়েছে।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ শাহজাহানকে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের ঘনিষ্ঠ লোক বলে পরিচিত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘প্লট ব্যবসার জন্য পাহাড় কাটা হচ্ছে এ কথা সঠিক নয়। মূলত পাহাড়ের চূড়া একটু সমতল করে বাগান সৃজন করার জন্যই কিছু অংশ কাটা হচ্ছে।’
স্থানীয় সূত্র জানায়, ৩০-৩২ সদস্যের একটি দল (গ্রুপ) আবাসন ব্যবসার জন্য ২০০৮ সালের এপ্রিলে ১৫ একর আয়তনের ওই পাহাড় কিনে নেন। প্রশান্ত দাশ ও মোহাম্মদ আলী ওই দলের অন্যতম সদস্য। পাহাড়টি ক্রয়-বিক্রয়ে স্থানীয় একজন মধ্যস্বত্বভোগী প্রশান্ত দাশকে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলানোর চেষ্টা করলে তিনি কথা বলতে বা বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং তাঁর (প্রশান্ত দাস) মুঠোফোনের নম্বরও এ প্রতিবেদককে দিতে নিষেধ করেন।
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিউদ্দীন সেলিম পাহাড় কাটার বিষয়টি অবগত রয়েছেন বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা না দিলে আমাদের করার কিছু থাকছে না।’ পাহাড় কাটা বন্ধ করতে না পারার জন্য পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন তিনি। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রধান সড়ক থেকে পুলিশ পাহাড় কাটার জায়গাটিতে যেতে যেতে আলামত উধাও হয়ে যায়।’ এ রকম মন্তব্য করেছেন সহকারী পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) বাবুল আকতারও।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান আকন্দ দক্ষিণ পাহাড়তলিতে পাহাড় কাটার বিষয়ে অবগত রয়েছেন বলে জানান। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট লোকজনকে নোটিশ দিয়েছি।’
No comments