মসজিদে নববীর আদলে বাংলাদেশের মসজিদ যেসব বিষয় ভাবতে হবে by শাহ আবদুল হান্নান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুদিন আগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের নবনির্মিত ও বর্ধিত অংশ উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে তিনি মসজিদ সম্পর্কে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন। তিনি তার সরকারের মসজিদকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা ও কর্মসূচির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন।
তিনি জানান, তার সরকার সারা দেশের মসজিদগুলোকে মসজিদে নববীর আলোকে গড়ে তুলতে চান। জনগণের উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। তিনি মসজিদগুলোকে কল্যাণমূলক কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চান। প্রত্যেক গ্রামের মসজিদগুলোকে এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত করতে চান। এসব কর্মসূচি ভবিষ্যতে সারা দেশে বিস্তৃত করা হবে। তিনি ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণ, অপুষ্টি ও অশিক্ষার বিরুদ্ধে আরও বেশি জড়িত হওয়ার ব্যাপারে ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
পরিবেশ উন্নয়নেও তারা ভূমিকা রাখবেন বলে তিনি আশা করেন। বাংলাদেশের জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে বলে এসব ক্ষেত্রে ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের ভূমিকা রাখা দরকার। এ পর্যন্ত সারা দেশে মসজিদ লাইব্রেরি প্রকল্পের আওতায় ২৪ হাজার ৩৮৩টি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি সম্প্রীতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, ইসলামে গোলযোগ, নৈরাজ্য ও শত্রুতা এবং চরমপন্থার কোনো স্থান নেই। স্বার্থান্বেষী একটি মহল তাদের অপকর্মের মাধ্যমে ইসলামকে উগ্রপন্থীদের ধর্ম হিসেবে চিহ্নিত করছে, যা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে মূলত ইসলামের ভাবমূর্তিকেই ক্ষুণ্ন করছে বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি আলেম ও মুসল্লিদের আহ্বান জানান, যারা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে তাদের ব্যাপারে। তিনি মুসলিম ও ইসলামিক স্কলারদের জঙ্গি তত্পরতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান, যাতে কেউ ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা না করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী মাদরাসা শিক্ষার ব্যাপারে বলেন যে, মাদরাসা কারিকুলামে বিভিন্ন আধুনিক বিষয়ও সংযুক্ত করা হবে। মদিনার মসজিদে নববীর গুরুত্ব আশা করি সরকার বোঝে। এটা অবশ্যই মুসলিম উম্মাহ্র বা জনগণের কেন্দ্রীয় স্থান ছিল। এখান থেকে রাসুল (সা.) তার প্রশাসন চালাতেন। এখানেই তিনি বিদেশি দূতদের সংবর্ধনা জানাতেন। এখানেই তিনি বিচারকার্য পরিচালনা করতেন। মুসলিম সরকারের কাজ যখন বেড়ে যায় তখন এসব কাজ মসজিদের বাইরে স্থানান্তরিত হয়। এছাড়া মসজিদ আশ্রয় কেন্দ্র ও শিক্ষার কেন্দ্রও ছিল। অসহায় মুসলিমরা এখানেই আশ্রয় পেতেন এবং থাকতেন। আসহাবে সুফ্ফার লোকরা এখানেই থাকতেন এবং শিক্ষা নিতেন। এমনকি মেয়েরাও এখানে আশ্রয় নিতে পারতেন। বুখারীর একটি অধ্যায় আছে ‘নারীদের মসজিদে ঘুমানো’ (নাওমুন নিসা ফিল মসজিদ)। আমাদের প্রধান প্রধান মসজিদে পুরুষ/নারীর আলাদা আলাদা আশ্রয় নেয়ার ব্যবস্থা এবং তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকা উচিত। অবশ্য সরকার যদি অন্য ভালো ব্যবস্থা করে তা হলে তা উত্তম বিবেচিত হবে।
এ মতকে সামনে রেখে আমি মনে করি সরকারপ্রধান ‘মসজিদে নববীর’ অনুরূপভাবে আমাদের দেশের মসজিদগুলো গড়ে তুলতে চান, তখন তাকে অন্যান্য ক্ষেত্রে ভিন্ন নীতি অনুসরণ করা ঠিক হবে না। এর সঙ্গে সাংবিধানিক, কৌশলগত, সামাজিক, শিক্ষাগত ও মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতিমালার মিল থাকতে হবে। এর সঙ্গে সেক্যুলারিজমের (রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ধর্ম বর্জন) কোনো মিল নেই। অবশ্য সবারই মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মদিনা সনদ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মাইলফলক। সরকারকে তার কথা ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে হবে—এটা স্মরণ করিয়ে দেয়ার আশা করি প্রয়োজন নেই।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
পরিবেশ উন্নয়নেও তারা ভূমিকা রাখবেন বলে তিনি আশা করেন। বাংলাদেশের জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে বলে এসব ক্ষেত্রে ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের ভূমিকা রাখা দরকার। এ পর্যন্ত সারা দেশে মসজিদ লাইব্রেরি প্রকল্পের আওতায় ২৪ হাজার ৩৮৩টি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি সম্প্রীতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, ইসলামে গোলযোগ, নৈরাজ্য ও শত্রুতা এবং চরমপন্থার কোনো স্থান নেই। স্বার্থান্বেষী একটি মহল তাদের অপকর্মের মাধ্যমে ইসলামকে উগ্রপন্থীদের ধর্ম হিসেবে চিহ্নিত করছে, যা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে মূলত ইসলামের ভাবমূর্তিকেই ক্ষুণ্ন করছে বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি আলেম ও মুসল্লিদের আহ্বান জানান, যারা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে তাদের ব্যাপারে। তিনি মুসলিম ও ইসলামিক স্কলারদের জঙ্গি তত্পরতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান, যাতে কেউ ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা না করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী মাদরাসা শিক্ষার ব্যাপারে বলেন যে, মাদরাসা কারিকুলামে বিভিন্ন আধুনিক বিষয়ও সংযুক্ত করা হবে। মদিনার মসজিদে নববীর গুরুত্ব আশা করি সরকার বোঝে। এটা অবশ্যই মুসলিম উম্মাহ্র বা জনগণের কেন্দ্রীয় স্থান ছিল। এখান থেকে রাসুল (সা.) তার প্রশাসন চালাতেন। এখানেই তিনি বিদেশি দূতদের সংবর্ধনা জানাতেন। এখানেই তিনি বিচারকার্য পরিচালনা করতেন। মুসলিম সরকারের কাজ যখন বেড়ে যায় তখন এসব কাজ মসজিদের বাইরে স্থানান্তরিত হয়। এছাড়া মসজিদ আশ্রয় কেন্দ্র ও শিক্ষার কেন্দ্রও ছিল। অসহায় মুসলিমরা এখানেই আশ্রয় পেতেন এবং থাকতেন। আসহাবে সুফ্ফার লোকরা এখানেই থাকতেন এবং শিক্ষা নিতেন। এমনকি মেয়েরাও এখানে আশ্রয় নিতে পারতেন। বুখারীর একটি অধ্যায় আছে ‘নারীদের মসজিদে ঘুমানো’ (নাওমুন নিসা ফিল মসজিদ)। আমাদের প্রধান প্রধান মসজিদে পুরুষ/নারীর আলাদা আলাদা আশ্রয় নেয়ার ব্যবস্থা এবং তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকা উচিত। অবশ্য সরকার যদি অন্য ভালো ব্যবস্থা করে তা হলে তা উত্তম বিবেচিত হবে।
এ মতকে সামনে রেখে আমি মনে করি সরকারপ্রধান ‘মসজিদে নববীর’ অনুরূপভাবে আমাদের দেশের মসজিদগুলো গড়ে তুলতে চান, তখন তাকে অন্যান্য ক্ষেত্রে ভিন্ন নীতি অনুসরণ করা ঠিক হবে না। এর সঙ্গে সাংবিধানিক, কৌশলগত, সামাজিক, শিক্ষাগত ও মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতিমালার মিল থাকতে হবে। এর সঙ্গে সেক্যুলারিজমের (রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ধর্ম বর্জন) কোনো মিল নেই। অবশ্য সবারই মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মদিনা সনদ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মাইলফলক। সরকারকে তার কথা ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে হবে—এটা স্মরণ করিয়ে দেয়ার আশা করি প্রয়োজন নেই।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
No comments