মীরাক্কেল কাঁপাচ্ছে চার বাংলাদেশী
ছন্দ-রসে টইটুম্বর মীরের চমক মীরাক্কেল। যার প্রেক্ষাপট নতুন করে বলার কিছু নেই। এরই মধ্যে সবাই জেনে গেছেন জোকস ওয়ার্ল্ডে মীরের অমরত্বের কথা। তবে জি-বাংলায় প্রচার চলতি ‘মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার্স-সিজন সিক্স’-এ এসে বাংলাদেশে যেন বাড়তি মাত্রা যোগ করে দিলো। বাংলাদেশের গৃহবধূরাও এখন সনি-স্টারপ্লাসের বউ-শাশুড়ির অসহনীয় সিরিয়াল থেকে মুখ ঘুরিয়ে চোখ রাখছেন জি-বাংলায় সোম থেকে বুধবার পর্যন্ত। কারণ, এবারের মীরাক্কেল নতুন করে হাসির ছটায় কাঁপাচ্ছে চার বাংলাদেশী তরুণ। মোহাম্মদ জামিল হোসেন, ইশতিয়াক নাসির, আনোয়ারুল আলম সজল ও আবু হেনা রনির দুর্বার চিত্রনাট্য আর অনবদ্য প্রেজেন্টেশনে মীরাক্কেল কর্তৃপক্ষও খানিক নড়েচড়ে বসেছেন। তাই তো বাংলাদেশের রসপ্রিয় আরও কিছু প্রতিবেশী খুুঁজে বের করতে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই মীরাক্কেল কর্তৃপক্ষ ঢাকায় হাজির হচ্ছেন মহাতারকা মীরের নেতৃত্বে। তবে তার আগেই বাংলাদেশের গর্বিত চার প্রতিযোগী দু’দিনের ছুটি নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন নিজ মাটিতে। দেশে এসে চারদিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা আর মিডিয়ার আগ্রহ দেখে চারজনই মুগ্ধ। এরই মধ্যে চারজনই আবার ফিরে গেছেন মীরাক্কেল ক্যাম্পে। তারা চারজনই নিজেদের অনুভূতি আর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন মানবজমিন-এর কাছে। বর্তমান সময় নিয়ে চারজনের একটাই মত- মাত্র সাত মাসে মীরাক্কেল আমাদের জীবনধারা বদলে দিয়েছে। গড়ে তুলেছে সাধারণ থেকে অসাধারণে। এবার দেশে ফিরে সবার সঙ্গে ছবি তোলা, অটোগ্রাফ দেয়া, ইন্টারভিউ দেয়া আর বন্ধু-স্বজনদের গর্বিত কণ্ঠস্বরে যারপরনাই মুগ্ধ তারা। অথচ সাত মাস আগে যখন বাংলাদেশের এ চার তরুণ কলকাতার উদ্দেশে উড়াল দেন তখন চিত্রটা ছিল একেবারেই উল্টো। কথা প্রসঙ্গে আবু হেনা রনি তো বলেই ফেললেন, তখন আমাদের অবস্থান ছিল অনেকটা বখাটে, অকর্মন্য আর ইচড়েপাকাদের দলে। আর এখন আমরা অনেকটা মহানায়ক। রনির কথার সুরে সুর মিলিয়ে জামিল বলেন, তবে আজকের এ অবস্থানে আসার জন্য আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। রাতের পর রাত স্ক্রিপ্ট তৈরি, আইডিয়া জেনারেট করা আর সেটা স্টেজে এসে প্রেজেন্ট করা চাট্টিখানি কথা নয়। তার ওপর আমরা ছিলাম সেখানে অনেকটা অতিথির মতো। প্রথম প্রথম তো নিজেদের খুব একা মনে হতো। এখন অবশ্য মীরাক্কেল ক্যাম্পটাকে নিজের ঘরের মতোই মনে হয়। বরং এবার দেশে ফিরে মনে হলো বিদেশে এলাম বুঝি! সব মিলিয়ে জামিল, নাসির, সজল আর রনির জীবন পাল্টে দিয়েছে ‘মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার-৬’। ভারতীয় টিভি চ্যানেল জি বাংলার জনপ্রিয় এ রিয়েলিটি শোর চূড়ান্ত পর্বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশের এই চার স্বর্ণসন্তান। তাদের সঙ্গে আছেন পশ্চিমবঙ্গের আরও পাঁচজন তুখোড় প্রতিযোগী। চারজনের সঙ্গে একান্ত আলাপে জানা যায়, ইশতিয়াক স্নাতক করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন মীরাক্কেলে যাওয়ার দু’মাস আগে। জামিল ঢাকায় একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের বিপণন ব্যবস্থাপক। রনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগে স্নাতকোত্তর পড়ছেন। আর সজল এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ করছেন। মজার তথ্য হলো, চারজনের একজনও এর আগে জোকার হিসেবে কোন প্রফেশনাল জায়গায় দাঁড়াননি কিংবা এ নিয়ে সামনে এগুনোর কথাও ভাবেননি। চারজনেরই বেশ জনপ্রিয়তা ছিল স্রেফ বন্ধুমহলে মজার মানুষ হিসেবে। তবে মীরাক্কেলে যাওয়ার পর চারজনেরই পুরনো ভাবনা বদলেছে। চারজনই ভাবছেন মীরাক্কেলের চূড়ান্ত ফলাফল যাই হোক না কেন, দেশে ফিরে এ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার নতুন ছক আঁকবেন। এদিকে মীরাক্কেল স্টেজে সবাইকে যারা আনন্দ দিয়ে চলেছেন শেষ সাত মাস ধরে, দূরদেশে-পরবাসে কেমন কেটেছে তাদের দিন? এমন প্রশ্নে সজল বললেন, সেখানে যাওয়ার পর ভেবেছিলাম ওনারা আমাদের জোকসগুলো তৈরি করে দেবেন। আমরা সেগুলো প্র্যাকটিস করে নিজেদের মতো করে তুলে ধরবো। অথচ যাওয়ার পর জানলাম তারা কিছুই দেবেন না, সাহস আর উৎসাহ ছাড়া। বাদবাকি সবটাই নিজেদের তৈরি করতে হবে। কি আর করা, ঢাকা থেকে জোকসের বই পাঠাতে বললাম। সজলের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে ইশতিয়াক বললেন, জোকসের বই আমদানি করেও লাভ হলো না। কারণ, মীরাক্কেল ক্যাম্পে জোকসের বই নিষিদ্ধ। ফলে সব জোকস নিজেদের নতুন করে তৈরি করতে হলো। এটা যে কি পরিমাণ চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ সেটা ভাবলে এখনও আঁতকে উঠি। নিজেদের ধন্যবাদ দেই আমরা সেই দুঃসময়টা অতিক্রম করতে পেরেছি। এদিকে রনি আর জামিল বলেন, মীরাক্কেলের ক্যাম্প লেকল্যান্ডের একটা রিসোর্টে। রিসোর্টের সামনে আছে বড় একটা পুকুর। আর পুকুর পাড়ে রয়েছে সারি সারি নারকেল গাছ। প্র্যাকটিসের সময় আমাদের সবার বসার জায়গা ওই নারকেল গাছের নিচে। নিজের খুশিমতো নারকেল গাছের নিচে বসলে হবে না। প্রত্যেকের জন্য আলাদা নারকেল গাছ বরাদ্দ রয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। আমরা ঘুমের জন্য সময় পাই রাতে মাত্র চার-পাঁচ ঘণ্টা। বাকি সময়টা আমরা সবাই মিলে আড্ডার মধ্যে থাকি। এ আড্ডার মধ্য দিয়েই নতুন নতুন ভাবনা আর জোকস তৈরি করে ফেলি যে যার মতো করে। এদিকে ‘মীরাক্কেল’ অনুষ্ঠানটির অন্যতম আকর্ষণ উপস্থাপক মীর। চার বাংলাদেশী তুর্কির কণ্ঠে মীর প্রসঙ্গে মন্তব্য এমন- এই মীরদাকে প্রথম প্রথম সবাই ভীষণ ভয় পেতাম। টিভিতে যে মানুষটিকে এতো হাশিখুশি দেখেছি, অথচ সেখানে যাওয়ার পর দেখলাম ঠিক তার উল্টোটা। জানলাম, ক্যামেরার পেছনে এলে মীরদা পুরো গুরুগম্ভীর হয়ে যান। মীর প্রসঙ্গে চার প্রতিযোগী সমস্বরে আরও বলেন, মীরাক্কেলের সব প্রতিযোগীকে মুহূর্তেই আপন করে নেয়ার একটা অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে মীরদার মধ্যে। তিনি আমাদের বটগাছের মতো ছায়া দিয়ে রাখেন। স্টেজের সামনে-পেছনে তার উৎসাহ এবং টিপস আমাদের এতদূর নিয়ে এসেছে। এদিকে ‘মীরাক্কেল’-এর তিন বিচারক রজতাভ দত্ত, শ্রীলেখা মিত্র ও পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাপারেও চারজনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা ফুটেছে কথায় কথায়। মানবজমিনের সঙ্গে একান্ত আলাপ শেষে এই চার মীরাক্কেল তারকা বাংলাদেশের দর্শকদের অনুরোধ করেন তাদের জন্য দেশে বসেই এসএমএসে ভোট করার জন্য। তারা আবেদন জানান, বাংলাদেশ থেকে যে কোন মুঠোফোন থেকে ২২৩৩ নম্বরে যে কেউ ভোট দিতে পারবেন যত খুশি। সবার এসএমএস ভালবাসায় হয়তো আরও একধাপ এগুবেন এই হাসির চার ফেরিওয়ালা।
No comments