ভোলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর-প্রায় তিন কোটি টাকার নির্মাণকাজের দরপত্রে কারসাজির অভিযোগ

ভোলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে উৎকোচ নিয়ে পাঁচটি দরপত্রে কাটা-ছেঁড়া, ঘষামাজা বা টেম্পারিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। এসব দরপত্র বাতিলের দাবিতে ঠিকাদারদের একটি অংশ গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে তাঁর কক্ষে সকাল নয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখে। একপর্যায়ে ওই কক্ষের চেয়ার-টেবিল ও জানালার কাচ ভাঙচুর করেন উত্তেজিত ঠিকাদারেরা।


ইয়ানুর রহমান, মোস্তফা চৌধুরী, আরিফুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন ঠিকাদারের প্রথম আলোকে দেওয়া ভাষ্যমতে, ভোলা সরকারি কলেজের একাডেমি ভবন ও পরীক্ষাকেন্দ্র নির্মাণে দুই কোটি ৯১ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত ২৮ নভেম্বর ছিল দরপত্র দাখিলের শেষ দিন। পরদিন ২৯ নভেম্বর দরপত্রের বাক্স খোলার পর দেখা যায়, এ কাজের জন্য মোট ১০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে।
তাঁদের দাবি, ১০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে নিম্ন দর ছিল ছোঁয়া কনস্ট্রাকশনের। এ ছাড়া শ্রাবন্তী কনস্ট্রাকশন, হুমায়রা কনস্ট্রাকশন, মামুন কনস্ট্রাকশন ও মতিয়ার রহমান কনস্ট্রাকশনের দর ছিল তুলনামূলক কম।
সবচেয়ে উচ্চ দর ছিল জেরিন অ্যান্ড কোং, হায়দার কনস্ট্রাকশন, এ কে এম শাহাবুদ্দিন খান, আবদুল খালেক কনস্ট্রাকশন ও লিংকো ইন্টারন্যাশনালের।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, সবচেয়ে কম দরের বিবেচনায় এই কাজ পেলে তা ছোঁয়া কনস্ট্রাকশনেরই পাওয়ার কথা। কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার প্রভাবশালী ঠিকাদারদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে কারসাজি করে উচ্চ দরের ওই পাঁচটি দরপত্রকে নিম্ন দর হিসেবে দেখান।
ঠিকাদারেরা বলেন, এ ঘটনা প্রকাশিত হলে গত বুধবার দুপুর থেকে তাঁদের লোকজন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ঘেরাও করে সারা রাত পাহারা দেন। কারণ, তাঁরা গোপন সূত্রে জানতে পারেন, নির্বাহী প্রকৌশলী ঢাকায় গিয়ে তাঁর পছন্দের ঠিকাদারের নাম ঘোষণা করবেন।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন ঠিকাদারসহ জেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগের অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মী নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন।
খবর পেয়ে দুুপুর পৌনে একটার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের সামনেই নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার ও সহকারী প্রকৌশলী আলতাফ হোসেনকে গালিগালাজ করেন নেতা-কর্মীরা।
ঠিকাদারদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গণমাধ্যমকর্মীরা নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে দরপত্র ও ঠিকাদারদের সই করা ‘ওপেনিং শিট’ দেখতে চান। কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলী তা না দেখিয়ে নতুন একটি শিট দেখান। এতে ঠিকাদারদের সই ছিল না।
এ ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ওই শিটে কোনো ঠিকাদার স্বাক্ষর করেননি। তখন উপস্থিত ঠিকাদারেরা প্রকৌশলীর এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমরা স্বাক্ষর করেছিলাম।’
ওই পাঁচটি দরপত্রের পাতা উল্টে কাটা-ছেঁড়া করার সত্যতা পাওয়া যায়। এক স্বাক্ষরের সঙ্গে অন্য স্বাক্ষরের মিল পাওয়া যায়নি। আবার কিছু দরপত্রে ঘষামাজার স্থানে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো স্বাক্ষর পাওয়া যায়নি।
ছোঁয়া কনস্ট্রাকশনের প্রতিনিধি ও জেলা ছাত্রলীগের সদস্য আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দরপত্র খোলার দিন যে শিট ছিল, নির্বাহী প্রকৌশলী তা পাল্টে ফেলেছেন। সর্বনিম্ন দরদাতা ছোঁয়া কনস্ট্রাকশনকে বাদ দিয়ে তাঁর পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ‘টেম্পারিং’ করেছেন দেলোয়ার।
ঠিকাদারদের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, দরপত্রে কোনো অনিয়ম ও কাঁটা-ছেড়া করেননি। যা করার, তা নিয়ম মেনেই করা হয়েছে।
সহকারী প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ওই ১০টি দরপত্র সিলগালা করা হয়েছে। দরপত্রগুলো পুনর্মূল্যায়নের লক্ষ্যে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঠিকাদারেরা রাত আটটার দিকে অবরোধ তুলে নেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবাশ্বের আলী বলেন, দুই পক্ষের সমঝোতার পর রাতে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ প্রত্যাহার করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.