ঊনসত্তরের আসাদ by তন্ময় হক
'গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের/ জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট/উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায়।' কবি শামসুর রাহমানের কবিতার খাতায় উঠে এসেছিল আসাদের রক্তাক্ত শার্ট। দৃঢ় কণ্ঠে কবি ঘোষণা করেছিলেন, 'আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা, সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;/আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা।' ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি। তখন সময় গণআন্দোলনের। দেশবাসী প্রতিবাদে মুখর।
আইয়ুব খান সরকারের পতনের লক্ষ্যে চলছে আন্দোলন। এ ছাড়া তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা দাবির পক্ষে এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের মুক্তির দাবির আন্দোলন চলছিল। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি দুপুরে ছাত্রদের নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে চানখাঁরপুল এলাকায় মিছিল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন আসাদুজ্জামান। পুলিশ তাদের চানখাঁর ব্রিজে বাধা দেয় এবং ফিরে যেতে বলে। বিক্ষোভকারী ছাত্ররা প্রতিবাদ বজায় রাখে। সেখানে ছাত্ররা প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান নেয়। তখন আসাদ ও তার সহযোগীরা স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। সে অবস্থায় খুব কাছ থেকে আসাদকে লক্ষ্য করে এক পুলিশ অফিসার গুলিবর্ষণ করে। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আসাদের মৃত্যু জনতার মিছিলের স্রোত বাড়িয়ে দেয়। আসাদের রক্তাক্ত শার্ট হয়ে ওঠে প্রতিবাদের হাতিয়ার। হাজারো ছাত্র-জনতা আসাদের মৃত্যুতে একত্র হয়ে মিছিল বের করে। মিছিল শেষে শহীদ মিনারের পাদদেশে জনজমায়েত ঘটে। শহীদ আসাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ২২, ২৩, ২৪ জানুয়ারি সারাদেশে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়।
ছাত্র-জনতার মিছিলে শহীদ আসাদের রক্তমাখা শার্ট দেখে শামসুর রাহমান 'আসাদের শার্ট' কবিতাটি লেখেন। হেলাল হাফিজ এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়' কবিতাটি লেখেন। আসাদ ও তার রক্তাক্ত শার্ট নানা ক্ষেত্রে প্রভাব রাখা শুরু করে। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় আইয়ুব খানের নামফলক পরিবর্তন করে জনগণ তা শহীদ আসাদের নামে রাখে। আইয়ুব গেটের নাম পরিবর্তিত হয়ে হয় আসাদ গেট, আইয়ুব এভিনিউ হয় আসাদ এভিনিউ এবং আইয়ুব পার্ক হয় আসাদ পার্ক। পরে ১৯৭০ সালে প্রথম শহীদ আসাদ দিবসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকের যেখানে আসাদ গুলিতে নিহত হয়েছিলেন সেখানে জনগণ 'ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের স্মারক ও অমর আসাদ' নামের একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করে।
শহীদ আসাদের পুরো নাম আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান। ১৯৪২ সালের ১০ জুন তিনি নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার ধনুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬০ সালে শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। পরে ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ১৯৬৬ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৬৭ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। আরও ভালো ফলের জন্য তিনি দ্বিতীয়বারের মতো স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৬৯ সালে মৃত্যুকালে আসাদ ঢাবির ইতিহাস বিভাগের এমএ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
আসাদের আত্মত্যাগ ও অবদানকে স্মরণ করতে প্রতি বছর ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদ দিবস পালন করা হয়। এবারের শহীদ আসাদ দিবসে শামসুর রাহমানের ভাষায় বলতে চাই, আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা। কারণ আসাদের রক্তাক্ত শার্ট আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে শিক্ষা দেয়।
ছাত্র-জনতার মিছিলে শহীদ আসাদের রক্তমাখা শার্ট দেখে শামসুর রাহমান 'আসাদের শার্ট' কবিতাটি লেখেন। হেলাল হাফিজ এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়' কবিতাটি লেখেন। আসাদ ও তার রক্তাক্ত শার্ট নানা ক্ষেত্রে প্রভাব রাখা শুরু করে। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় আইয়ুব খানের নামফলক পরিবর্তন করে জনগণ তা শহীদ আসাদের নামে রাখে। আইয়ুব গেটের নাম পরিবর্তিত হয়ে হয় আসাদ গেট, আইয়ুব এভিনিউ হয় আসাদ এভিনিউ এবং আইয়ুব পার্ক হয় আসাদ পার্ক। পরে ১৯৭০ সালে প্রথম শহীদ আসাদ দিবসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকের যেখানে আসাদ গুলিতে নিহত হয়েছিলেন সেখানে জনগণ 'ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের স্মারক ও অমর আসাদ' নামের একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করে।
শহীদ আসাদের পুরো নাম আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান। ১৯৪২ সালের ১০ জুন তিনি নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার ধনুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬০ সালে শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। পরে ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ১৯৬৬ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৬৭ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। আরও ভালো ফলের জন্য তিনি দ্বিতীয়বারের মতো স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৬৯ সালে মৃত্যুকালে আসাদ ঢাবির ইতিহাস বিভাগের এমএ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
আসাদের আত্মত্যাগ ও অবদানকে স্মরণ করতে প্রতি বছর ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদ দিবস পালন করা হয়। এবারের শহীদ আসাদ দিবসে শামসুর রাহমানের ভাষায় বলতে চাই, আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা। কারণ আসাদের রক্তাক্ত শার্ট আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে শিক্ষা দেয়।
No comments