নাজিম হিকমতের ১১০তম জন্মদিন স্মরণে

বিচ্ছেদ কোনো সময় কিংবা দূরত্ব নয় বিচ্ছেদ আমাদের মধ্যে একটি সেতু রেশমি সুতার চেয়ে সূক্ষ্ম, ধারালো তরবারির চেয়ে।’ আপাদমস্তক কবি ও বিপ্লবী নাজিম হিকমত শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর ৫০ বছর পরও অতীত ও বর্তমানের মধ্যে এমনই একটি সেতু হয়েই অবস্থান করছেন, রেশমি সুতার চেয়ে সূক্ষ্ম, তরবারির চেয়ে ধারালো।


নাজিম হিকমত (জন্ম: ১৭ জানুয়ারি, ১৯০২; মৃত্যু ৩ জুন, ১৯৬৩) যখন আত্মজীবনী লিখতে বসলেন, লিখলেন নিজেকে নিয়েই একটি কবিতা। জন্মের বৃত্তান্ত থেকে শুরু করে অনশন ও সারা জীবনের স্মৃতি, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ সবই লিখলেন। তার পরও জোর দিয়ে বললেন, ‘আমি বলতে পারি, আমি মানুষের মতো বেঁচেছিলাম।’
কবি ও নাট্যকার নাজিম হিকমত মা ও বাবা দুজনের দিক থেকে পেয়েছেন অভিজাত উত্তরাধিকার। বিপুল ধনাঢ্য পরিবারের হয়েও মূলধনের জন্য মোহগ্রস্ত হয়ে থাকার জীবন তিনি বেছে নেননি। ১৯ বছর বয়সে তুরস্কের স্বাধীনতা আন্দোলনে, তার আগে নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন; কিন্তু শরীর এতটাই খারাপ হয়ে পড়েছিল যে নৌসেনার জীবন থেকে তাঁকে অব্যাহতি নিতে হয়।
নাজিম হিকমত কবিতা লিখতে শুরু করেন। মুস্তাফা কামাল পাশা তাঁর কাছে চাইলেন উজ্জীবনের কবিতা, রক্তে দামামা বাজানোর কবিতা। তিনি হয়ে উঠলেন ক্ষয়ে যাওয়া উসমানিয়া সাম্রাজ্যের মায়াকোভস্কি। প্রবল প্রভাব তাঁর তরুণদের মধ্যে। নাজিম হিকমতের কবিতা তখন রণাঙ্গনে, কবিতা আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুল স্কয়ারে, কবিতা বসরা কারাগারে ধ্বনিত হচ্ছে, প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, সুরেলা তরুণ কণ্ঠে গীত হচ্ছে।
হতে পারেন তিনি রোমান্টিক কমিউনিস্ট, হতে পারেন তিনি রোমান্টিক বিপ্লবী, কবিতার আলোচনায় যখন তাঁর নাম উচ্চারিত হয় নাজিম হিকমত থাকেন ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা, লুই আরাগ, ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কিদের সারিতে। গত শতকের চারের দশকে তিনি যখন কারাগারে, তাঁর মুক্তির দাবি জানান পাবলো পিকাসো, পল রোবসন এবং জ্যাঁ পল সার্ত্রে। স্মর্তব্য, বিশ্বজুড়ে যখন নাজিম হিকমতের কবিতা অনুবাদের ধুম পড়ে, তিনি নিজ দেশ তুরস্কে তখন নিষিদ্ধ।

No comments

Powered by Blogger.