অব্যাহতি দিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল-বাকি দুই মামলায়ও কাদের নির্দোষ by নজরুল ইসলাম
পুলিশের করা বাকি দুই মামলার তদন্তেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদের নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। তাই তাঁকে এ দুই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানিয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত শেষে এ দুই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।
এর মধ্যে খিলগাঁও থানার পুলিশের করা ডাকাতির প্রস্তুতির মামলার অভিযোগপত্র গত বুধবার এবং মোহাম্মদপুর থানার গাড়ি ছিনতাই মামলার অভিযোগপত্র মঙ্গলবার দেওয়া হয়। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে কাদেরকে অস্ত্র আইনে করা মামলা থেকে অব্যাহতি দেন আদালত। আইন মন্ত্রণালয় এবং পুলিশের কমিটিও হাইকোর্টে দেওয়া প্রতিবেদনে কাদেরকে নির্দোষ উল্লেখ করেছে।
তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির উপকমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম ও অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম মেহেদী হাসান গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ডাকাতির প্রস্তুতি ও গাড়ি ছিনতাইয়ের মামলায় কাদেরের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অস্ত্র মামলার মতো এই দুই মামলা থেকেও তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ছাত্র কাদেরকে গত বছরের ১৫ জুলাই গভীর রাতে সেগুনবাগিচা থেকে খিলগাঁও থানার পুলিশ আটক ও নির্যাতন করে। পরে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে ও ডাকাতির প্রস্তুতির অভিযোগে দুটি মামলা করে। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর থানার একটি গাড়ি ছিনতাইয়ের মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মামলার তদন্ত সূত্র জানায়, ডাকাতির প্রস্তুতি মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ১৫ জুলাই গভীর রাতে সেগুনবাগিচার রিংরোডে মামুন হোসেন নামের এক আসামিকে ছোরাসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কাদের ওই পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মামুনের সহযোগী সন্দেহে তাঁকে আটক করা হয়। মারপিটের ভয়ে মামুন তখন তাঁর প্রকৃত সহযোগী জাকিরের নাম গোপন করে কাদেরকে তাঁর সহযোগী উল্লেখ করেন। নথিপত্র পর্যালোচনা করে এবং তদন্তে কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করার মতো সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই তাঁকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
গাড়ি ছিনতাই মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, খিলগাঁও থানার পুলিশ সেগুনবাগিচা থেকে গাড়ি উদ্ধারের ঘটনায় মামুন ও কাদেরকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছিল। তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, মামুন ভয়ে কাদেরকে তাঁর সহযোগী বলেছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তাদেরও কাদের একই কথা বলেছেন।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাদের বলেন, ‘আমার ওপর থেকে পাহাড়সমান বোঝা সরে গেছে। সত্যের জয় হয়েছে। শুরু থেকেই আমি বলেছিলাম, আমি নির্দোষ। মিথ্যা অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে পেরেছি, এতে আমি খুব খুশি। খবর শুনে সবাই খুশি হবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাকে নির্যাতনকারী পুলিশের বিচার হলে তা হবে দৃষ্টান্ত, অন্যায় করলে কেউই পার পায় না।’
কাদের বলেন, ‘মামলা প্রত্যাহার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে কাদেরের আবেদন’ শিরোনামে ৭ জানুয়ারি প্রথম আলোয় খবর প্রকাশের পর খিলগাঁও থানার ওসি শেখ সিরাজুল ইসলাম তাঁর কাছে এসেছিলেন। তিনি খিলগাঁও থানার তৎকালীন ওসি হেলালউদ্দীনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার বাদী হবেন কি না, তা জানতে চেয়েছেন সিরাজুল ইসলাম। জবাবে তিনি জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
যোগাযোগ করা হলে কাদেরের মা মনোয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুইন্যা খুশি লাগতাছে। আমার নিরীহ ও নিরপরাধ ছেলেরে পুলিশের যারা নির্যাতন করছে, তারা যাতে আর কোনো দিন চাকরিতে বহাল না হতে পারে, এটাই আমার প্রথম দাবি।’ তিনি নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
কাদেরকে চাপাতি দিয়ে কোপানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় আইন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে হেলালউদ্দীনের (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত) বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছিল। হাইকোর্ট ১১ ডিসেম্বর পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। গতকাল যোগাযোগ করা হলে আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, তিনি ঢাকার বাইরে আছেন। ঢাকায় ফিরে এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে বলতে পারবেন।
গত বছরের ১৫ জুলাই রাতে ইস্কাটন গার্ডেন রোডের খালার বাসা থেকে হেঁটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে ফেরার পথে সেগুনবাগিচায় পুলিশ কাদেরকে আটক ও নির্যাতন করে। পরদিন সকালে খিলগাঁও থানার তৎকালীন ওসি হেলালউদ্দীন তাঁর কক্ষে নিয়ে কাদেরকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন। পরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এ নিয়ে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন এবং ঘটনাটি তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।
No comments