ভারত-পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে টাকার খেলা by কুলদীপ নায়ার
ভারতের যে পাঁচটি রাজ্য নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে, সেখানে জঘন্য ধরনের প্রচারাভিযানের জন্য ভারতের কলহপ্রবণ রাজনীতিই দায়ী, নাকি রাজনীতিকদের নির্বাচনে জেতার উদগ্র বাসনাই রাজনীতিকে কলহপ্রবণ করে তুলেছে, তা নির্ণয় করা কঠিন। নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডে এ পর্যন্ত কেবল ক্ষমতার রাজনীতিরই প্রতিফলন ঘটেছে।
৪৫ শতাংশ শিশুর অপুষ্টি, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যেটাকে একটা জাতীয় লজ্জা হিসেবে বর্ণনা করেছেন, নির্বাচনী প্রচারণায় সে সম্পর্কে কোনো কথা নেই। ২৩ কোটি মানুষ যে প্রতিদিন অনাহারে কাটায়, সে সম্পর্কেও কোনো রাজনৈতিক দল কথা বলে না। উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, গোয়া বা মণিপুর—যেখানেই নির্বাচন হোক, সবাই মেতে ওঠেন পরস্পরের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমণ ছোড়া নিয়ে। জনগণের সমস্যাগুলোর কথা কেউ বলেন না, অথচ প্রতিটি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে সমস্যার ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়। সেদিক থেকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব ও উত্তরাখণ্ড। উত্তর প্রদেশ এত বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে এ কারণে যে, শাসক নেহরু-গান্ধী পরিবার এসেছে ওই প্রদেশ থেকে এবং ওই রাজ্যে লোকসভার আসনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি—৮০টি।
কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ছেলে রাহুল গান্ধী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চান; তাঁর ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। কংগ্রেস এখন উত্তর প্রদেশে চতুর্থ স্থানের দল, সেখানে দলটি যদি প্রথম স্থান অর্জন করতে পারে, তাহলে খুবই সম্ভাবনা রয়েছে যে রাহুল গান্ধী সোজাসুজি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন। অবশ্য তিনি এ বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন, যখন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা সিং পাতিলের মেয়াদ শেষ হবে। তখন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং অবলীলায় আরও ওপরে উঠে যেতে পারেন; ইতিমধ্যে একাধিকবার তিনি বলেছেন যে রাহুল গান্ধীর জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারটি ছেড়ে দিতে ইচ্ছুক।
বর্তমানে উত্তর প্রদেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি আর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী দলের মধ্যে। কংগ্রেস আর বিজেপির মধ্যে লড়াই চলছে তৃতীয় স্থানের জন্য। মায়াবতীর দলের প্রতীক হাতির মূর্তি ঢেকে দেওয়ার ফলে তিনি একটু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কিন্তু তাঁর পক্ষে দলিতদের ভোট সলিড, প্রায় ২০ শতাংশ এবং তাঁর দলের টিকিটে নির্বাচনে লড়বেন এমন যেকোনো প্রার্থীকে তিনি ওই ভোটগুলো দিয়ে দিতে পারেন। নিজের দলের জন্য তিনি অনেক ব্রাহ্মণ, ঠাকুর ও মুসলমানকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
মুসলমানদের মধ্যে কংগ্রেসের অবস্থা খুব ভালো নয়। উত্তর প্রদেশের ১৬ শতাংশের মতো মুসলমান ভোটার কংগ্রেসকে ভোট দেয়। বাবরি মসজিদ ভাঙা আর দিল্লির বাতালা হাউসের ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব মুসলমানদের মধ্যে এখনো রয়ে গেছে। বাতালা হাউসের ঘটনায় দুজন মুসলমান ছাত্র নিহত হয়েছিল। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দিগবিজয় সিং আবারও বলেছেন যে ঘটনাটি ছিল সাজানো। কিন্তু বরফ তেমন গলেনি। কারণ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম দিগবিজয় সিংয়ের উক্তির প্রতিবাদ জানিয়ে দাবি করেছেন যে বাতালা হাউস এনকাউন্টার ছিল সত্যিকারের এক অভিযান। বিশেষ কথা হলো, বিষয়টি যখন আদালতের বিবেচনাধীন রয়েছে, তখন কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ধরনের মন্তব্য করা উচিত হয়েছে? কংগ্রেসকে নিয়ে আলাপ-আলোচনার একটা বিষয় হয়ে উঠেছে দলটির নেতাদের হঠকারিতা। নির্বাচন ঘোষণার পর পশ্চাৎপদ মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত কোটা সাড়ে ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা থেকে কেন্দ্রকে বিরত করে নির্বাচন কমিশন, তখন আইনমন্ত্রী সালমান খুরশিদ বলেন, নির্বাচন কমিশন তাঁর মন্ত্রণালয়ের ‘প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের’ অধীন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে এই বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কোরেশিকে আশ্বস্ত করতে হয়েছে যে নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্বের প্রতি কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জের প্রশ্নই নেই। আসলে সালমান খুরশিদই হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যিনি একটি নির্বাচনী এলাকায় মুসলমানদের কোটা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই আসনে কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন তাঁর স্ত্রী। এ ধরনের সুযোগের জন্য ওত পেতে থাকা বিজেপি বিষয়টি থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টায় পরিবেশ নষ্ট করায় কালক্ষেপণ করেনি। পানি কর্দমাক্ত করার উদ্দেশ্যে যোগ করা হয়েছে উগ্রপন্থী উমা ভারতীকে।
পাঞ্জাবে যা চলছে, তা দুই প্রধান দল কংগ্রেস ও আকালি দলের নেতাদের মধ্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব-বিরোধ ছাড়া আর কিছু নয়। আকালি দলের নেতা মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদল একসময় ছিলেন গোটা বাদল-পরিবারের মূল শক্তি। আজ নিজের নির্বাচনী আসনেই তিনি তাঁর ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি। তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র মনপ্রীত সিং বাদলের নেতৃত্বাধীন সরকার থেকে বেরিয়ে গিয়ে গঠন করেছেন পাঞ্জাব পিপলস পার্টি (পিপিপি)। পিপিপি ভালোই করছিল, কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক আগে দলটির কয়েকজন বড় নেতা কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। আমার সব সময়ই মনে হতো, পাঞ্জাবে কোন দল সরকার গঠন করবে, তা নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হবে পিপিপির। পিপিপিই হবে কিং মেকার যারা এমন সংখ্যক আসনে জয়ী হবে যে আকালি দল বা কংগ্রেস—কোনো দলই একা সরকার গঠন করতে পারবে না। কিন্তু এখন পিপিপি ওই দুটি দলের তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।
কংগ্রেসের নেতা অমরিন্দর সিং, যিনি দলকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী করতে পারবেন বলে মনে হয়েছিল, তা করতে না পারার দায়টা তাঁর নিজেরই। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন যে কংগ্রেসের বিজয় সুনিশ্চিত; আর সেই ফাঁকে আকালি দল তৃণমূলে তাদের হারানো ভিত্তি পুনরায় উদ্ধার করে নেয়। তাঁর অসংযমে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁর ভাই মালভিন্দর সিং আকালিদের সঙ্গে ভেড়েন। কংগ্রেসের জন্য যে লড়াইটা একসময় সহজ ছিল, এখন তা অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছে। আকালিদের বিশেষ সুবিধা হলো, গুরুদুয়ারার লোকজন তাদের, অর্থকড়িও তাদের হাতেই আছে। কারণ, তারা শিরোমণি গুরুদুয়ারা প্রবন্ধক কমিটি নিয়ন্ত্রণ করে। দেরা জনগোষ্ঠীর লোকেরা তাদের ভোটারে পরিণত হতে পারে। প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়সীমা যদিও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তবু পাঞ্জাবে টাকার স্রোত বইছে। এক হিসাবে বলা হচ্ছে, পাঞ্জাব রাজ্যের ১১৭টি আসনে লড়াইরত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা মোট তিন হাজার কোটি টাকার মতো খরচ করবেন।
উত্তরাখণ্ডে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘আন্না হাজারে’ ধরনের আন্দোলন নেই; কিন্তু রমেশ পোখরিয়াল নিশুংকের অসৎ সরকারকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে কংগ্রেস। অবশ্য দায়িত্বে থাকার বিষয়টিও আছে। ভারতের এই পাঁচ রাজ্যের সব কটিতেই নির্বাচনী দৃশ্যপট এমনই ঘোলাটে ও অস্বচ্ছ যে কংগ্রেস ও বিজেপি উভয়ের জন্যই হয়তো চমক অপেক্ষা করছে। কিন্তু সবকিছুর পরও হতাশাব্যঞ্জক বিষয় হলো, কোনো রাজনৈতিক দলই স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচনে লড়ছে না বা রাজ্যগুলোর মৌলিক ইস্যুগুলো নিয়ে কথা তুলছে না।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
কুলদীপ নায়ার: ভারতের সাংবাদিক।
কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ছেলে রাহুল গান্ধী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চান; তাঁর ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। কংগ্রেস এখন উত্তর প্রদেশে চতুর্থ স্থানের দল, সেখানে দলটি যদি প্রথম স্থান অর্জন করতে পারে, তাহলে খুবই সম্ভাবনা রয়েছে যে রাহুল গান্ধী সোজাসুজি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন। অবশ্য তিনি এ বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন, যখন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা সিং পাতিলের মেয়াদ শেষ হবে। তখন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং অবলীলায় আরও ওপরে উঠে যেতে পারেন; ইতিমধ্যে একাধিকবার তিনি বলেছেন যে রাহুল গান্ধীর জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারটি ছেড়ে দিতে ইচ্ছুক।
বর্তমানে উত্তর প্রদেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি আর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী দলের মধ্যে। কংগ্রেস আর বিজেপির মধ্যে লড়াই চলছে তৃতীয় স্থানের জন্য। মায়াবতীর দলের প্রতীক হাতির মূর্তি ঢেকে দেওয়ার ফলে তিনি একটু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কিন্তু তাঁর পক্ষে দলিতদের ভোট সলিড, প্রায় ২০ শতাংশ এবং তাঁর দলের টিকিটে নির্বাচনে লড়বেন এমন যেকোনো প্রার্থীকে তিনি ওই ভোটগুলো দিয়ে দিতে পারেন। নিজের দলের জন্য তিনি অনেক ব্রাহ্মণ, ঠাকুর ও মুসলমানকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
মুসলমানদের মধ্যে কংগ্রেসের অবস্থা খুব ভালো নয়। উত্তর প্রদেশের ১৬ শতাংশের মতো মুসলমান ভোটার কংগ্রেসকে ভোট দেয়। বাবরি মসজিদ ভাঙা আর দিল্লির বাতালা হাউসের ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব মুসলমানদের মধ্যে এখনো রয়ে গেছে। বাতালা হাউসের ঘটনায় দুজন মুসলমান ছাত্র নিহত হয়েছিল। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দিগবিজয় সিং আবারও বলেছেন যে ঘটনাটি ছিল সাজানো। কিন্তু বরফ তেমন গলেনি। কারণ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম দিগবিজয় সিংয়ের উক্তির প্রতিবাদ জানিয়ে দাবি করেছেন যে বাতালা হাউস এনকাউন্টার ছিল সত্যিকারের এক অভিযান। বিশেষ কথা হলো, বিষয়টি যখন আদালতের বিবেচনাধীন রয়েছে, তখন কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ধরনের মন্তব্য করা উচিত হয়েছে? কংগ্রেসকে নিয়ে আলাপ-আলোচনার একটা বিষয় হয়ে উঠেছে দলটির নেতাদের হঠকারিতা। নির্বাচন ঘোষণার পর পশ্চাৎপদ মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত কোটা সাড়ে ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা থেকে কেন্দ্রকে বিরত করে নির্বাচন কমিশন, তখন আইনমন্ত্রী সালমান খুরশিদ বলেন, নির্বাচন কমিশন তাঁর মন্ত্রণালয়ের ‘প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের’ অধীন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে এই বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কোরেশিকে আশ্বস্ত করতে হয়েছে যে নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্বের প্রতি কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জের প্রশ্নই নেই। আসলে সালমান খুরশিদই হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যিনি একটি নির্বাচনী এলাকায় মুসলমানদের কোটা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই আসনে কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন তাঁর স্ত্রী। এ ধরনের সুযোগের জন্য ওত পেতে থাকা বিজেপি বিষয়টি থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টায় পরিবেশ নষ্ট করায় কালক্ষেপণ করেনি। পানি কর্দমাক্ত করার উদ্দেশ্যে যোগ করা হয়েছে উগ্রপন্থী উমা ভারতীকে।
পাঞ্জাবে যা চলছে, তা দুই প্রধান দল কংগ্রেস ও আকালি দলের নেতাদের মধ্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব-বিরোধ ছাড়া আর কিছু নয়। আকালি দলের নেতা মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদল একসময় ছিলেন গোটা বাদল-পরিবারের মূল শক্তি। আজ নিজের নির্বাচনী আসনেই তিনি তাঁর ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি। তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র মনপ্রীত সিং বাদলের নেতৃত্বাধীন সরকার থেকে বেরিয়ে গিয়ে গঠন করেছেন পাঞ্জাব পিপলস পার্টি (পিপিপি)। পিপিপি ভালোই করছিল, কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক আগে দলটির কয়েকজন বড় নেতা কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। আমার সব সময়ই মনে হতো, পাঞ্জাবে কোন দল সরকার গঠন করবে, তা নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হবে পিপিপির। পিপিপিই হবে কিং মেকার যারা এমন সংখ্যক আসনে জয়ী হবে যে আকালি দল বা কংগ্রেস—কোনো দলই একা সরকার গঠন করতে পারবে না। কিন্তু এখন পিপিপি ওই দুটি দলের তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।
কংগ্রেসের নেতা অমরিন্দর সিং, যিনি দলকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী করতে পারবেন বলে মনে হয়েছিল, তা করতে না পারার দায়টা তাঁর নিজেরই। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন যে কংগ্রেসের বিজয় সুনিশ্চিত; আর সেই ফাঁকে আকালি দল তৃণমূলে তাদের হারানো ভিত্তি পুনরায় উদ্ধার করে নেয়। তাঁর অসংযমে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁর ভাই মালভিন্দর সিং আকালিদের সঙ্গে ভেড়েন। কংগ্রেসের জন্য যে লড়াইটা একসময় সহজ ছিল, এখন তা অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছে। আকালিদের বিশেষ সুবিধা হলো, গুরুদুয়ারার লোকজন তাদের, অর্থকড়িও তাদের হাতেই আছে। কারণ, তারা শিরোমণি গুরুদুয়ারা প্রবন্ধক কমিটি নিয়ন্ত্রণ করে। দেরা জনগোষ্ঠীর লোকেরা তাদের ভোটারে পরিণত হতে পারে। প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়সীমা যদিও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তবু পাঞ্জাবে টাকার স্রোত বইছে। এক হিসাবে বলা হচ্ছে, পাঞ্জাব রাজ্যের ১১৭টি আসনে লড়াইরত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা মোট তিন হাজার কোটি টাকার মতো খরচ করবেন।
উত্তরাখণ্ডে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘আন্না হাজারে’ ধরনের আন্দোলন নেই; কিন্তু রমেশ পোখরিয়াল নিশুংকের অসৎ সরকারকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে কংগ্রেস। অবশ্য দায়িত্বে থাকার বিষয়টিও আছে। ভারতের এই পাঁচ রাজ্যের সব কটিতেই নির্বাচনী দৃশ্যপট এমনই ঘোলাটে ও অস্বচ্ছ যে কংগ্রেস ও বিজেপি উভয়ের জন্যই হয়তো চমক অপেক্ষা করছে। কিন্তু সবকিছুর পরও হতাশাব্যঞ্জক বিষয় হলো, কোনো রাজনৈতিক দলই স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচনে লড়ছে না বা রাজ্যগুলোর মৌলিক ইস্যুগুলো নিয়ে কথা তুলছে না।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
কুলদীপ নায়ার: ভারতের সাংবাদিক।
No comments