বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণ-গোদের উপর বিষফোঁড়া?
ফাঁকা মাঠে গরু চড়ে বেড়াচ্ছে_ দেশের বিভিন্ন জেলায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) স্থাপিত 'শিল্পনগরী' সম্পর্কে এমন ছবি বা শিরোনাম দেখেই আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু ষাটের দশক থেকে গড়ে ওঠা শিল্প সম্প্রসারণের সরকারি প্রচেষ্টার সকলই যে গরল ভেল নয়, শুক্রবার সমকালের শিল্প-বাণিজ্য পাতায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন তার প্রমাণ।
আবার তৃণমূলের উৎসাহ ও উদ্যোগ কীভাবে কেন্দ্রের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ঘুরপাক খেতে থাকে, তারও নজির পাওয়া যাচ্ছে প্রতিবেদনটিতে। জানা যাচ্ছে, কিছু শিল্পনগরী যতখানি না শিল্প উৎপাদন তার চেয়ে অনেক বেশি গোচারণে ব্যবহৃত হচ্ছে, তখন উত্তরাঞ্চলের সাতটি জেলায় সাফল্য মিলেছে। বগুড়া, রংপুর, পাবনা, নীলফামারীর সৈয়দপুর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ও দিনাজপুরে সব শিল্প প্লট বরাদ্দ হয়ে গেছে। নতুন উদ্যোক্তাদের জায়গা দিতে এখন প্রয়োজন শিল্পনগরীর সম্প্রসারণ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই দাবি মাথা কুটে মরছে শিল্প মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনে। অথচ সেই ২০০৫ সালেই সারাদেশে ১৫টি শিল্পনগরী সম্প্রসারণে ১৩৪ কোটি টাকার প্রকল্প গৃহীত হয়েছিল। পরের বছর বিসিক থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলেও চার বছর তা ঝুলে ছিল। গত বছরের মার্চে একনেক সভায় প্রকল্পটি উত্থাপিত হলেও অনুমোদিত হয়নি। নতুন প্রকল্প গ্রহণের জন্য বিসিকে ফেরত পাঠানো হয়। অস্বীকার করা যাবে না যে, প্রকল্প প্রস্তাব একনেকে প্রত্যাখ্যাত বা পর্যালোচিত হতেই পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রকল্প প্রস্তাব করার ক্ষেত্রে বিসিক কি প্রয়োজনীয় সব শর্ত দক্ষতার সঙ্গে পূরণ করেছিল? বিষয়টি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাই আমরা। আবার পরিকল্পনা কমিশনেও কেন চার বছর ঝুলে থাকল, তারও কারণ খোঁজা জরুরি। বিলম্বের কারণেই প্রকল্পটি পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন হয়েছে কি-না দেখা দরকার। দাফতরিক দীর্ঘসূত্রতার ফাঁদে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আটকে থাকবে_ এটি মেনে নেওয়া যায় না। প্লট না পাওয়ায় ইতিমধ্যে উদ্যোক্তারা যদি হতোদ্যম হয়ে থাকে কিংবা আবাসিক এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠা করে থাকে, তার দায় প্রতিষ্ঠান দুটি এড়াতে পারে কি? এই দেশে উদ্যোক্তাদের এমনিতেই নানা গোদের কারণে পদে পদে হোঁচট খেতে হয়; তার ওপর যদি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার বিষফোঁড়া থাকে, কৃষিপ্রধান এই দেশে বহুল প্রয়োজনীয় শিল্প সম্প্রসারণ হবে কীভাবে?
No comments