পাবলো নেরুদা-এখানে নাজিম হিকমত by রাজু আলাউদ্দিন

নূদিত কবিতাটি সম্পর্কে দুটি জরুরি কথা পাঠকদের আগেই জানিয়ে রাখি। ইংরেজিতে অনূদিত নেরুদার কবিতার যে বইগুলো সহজলভ্য তাতে এ কবিতাটি আমি খুঁজে পাইনি। তবে ইন্টারনেটের বদৌলতে এটি স্প্যানিশ ভাষায় পাওয়া যায়। আমার উৎস এ ইন্টারনেট।


এর দু-একটি ইংরেজি অনুবাদও আছে এ কবিতাটির নেরুদার অনুরাগী পাঠকদের কোনো কোনো ওয়েবসাইটে। তবে আমি নির্ভর করেছি স্প্যানিশ সংস্করণটিতেই। আরেকটি জরুরি কথা হলো এই যে হাতের কাছে নেরুদার স্প্যানিশ রচনাসমগ্র বা কবিতাসমগ্র না থাকায় এ মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলতে পারছি না কবিতাটির রচনা বা প্রকাশকাল। সম্ভবত ১৯৫১ সালে মস্কোতে পরস্পরের সাক্ষাতের পর রচিত।

সদ্য মুক্তি পাওয়া
বন্দীদের একজন নাজিম হিকমত
তার কবিতার মতো
লাল রং সোনার সুতায়
বোনা জামা উপহার দিয়েছে আমায়।

তুর্কি লহুর সুতাগুলো
তার পদাবলি।
প্রাচীন প্রত্যয়ে গড়া,
—বাঁকা বা সরল—
সত্যিকার গল্পগুলো
ভোজালি বা তরবারির মতো।
গোপন কবিতাগুলো তার
আলোকিত দুপুরের
মুখোমুখি হবে বলে তৈরি হয়েছিল;
আজ তারা লুকায়িত আয়ুধের মতো,
জ্বলজ্বল করছে তারা মেঝের নিচে,
কুয়ার ভেতরে তারা অপেক্ষমাণ,
তার জনতার কালো চক্ষুযুগলের
দুর্গম আঁধারের নিচে।
বন্দিশিবির থেকে সে এল আমার
ভাই হতে আর
আমরা হেঁটেছি একসাথে
বরফে মোড়ানো স্তেপে;
রাত ছিল প্রজ্বলিত
আমাদের নিজস্ব আলোয়।

দেহের গড়ন তার ভুলব না বলে
আমি তার প্রতিকৃতি আঁকছি এখানে:

পুষ্পময় ভূখণ্ডের শান্তিতে উত্থিত
টাওয়ারের মতো
লম্বা সে
এবং ওপরে
তুর্কি আলোয় ভরা চক্ষুযুগল
দুটি বাতায়ন।

আমরা দুই ভবঘুরে
পেয়েছি শক্ত ভূমি আমাদের
পায়ের তলায়
বীর আর কবিদের
বিজিত ভুবন,
মস্কোর রাস্তায়, দেয়ালে দেয়ালে
পুষ্পিত হতে থাকে
পূর্ণিমার চাঁদ,
রমণীর প্রতি প্রেম
আনন্দ আর
প্রণয়ের প্রতি অনুরাগ
আমাদের একমাত্র গোত্র-পরিচয়।
সমগ্র বাসনাকে ভাগ করে নেওয়া,
সর্বোপরি, জনতার সংগ্রামের এক একটি ফোঁটা,
মানবসমুদ্রের ফোঁটাগুলো
তার আর আমার কবিতা।

কিন্তু
হিকমতের আমোদের অন্তরালে
অন্য এক নির্মাণ,
নির্মাণ ছুতারের মতো
কিংবা দরদালানের ভিত্তির মতো।

বহু বছরের নীরবতা
আর কারাবাস।
এসব বছর
বসাতে পারেনি দাঁত,
কিংবা পারেনি খেতে, গিলে ফেলতে
বীরোচিত যৌবনেরে তার।

আমাকে সে বলেছিল
দশ বছরের বেশি
বিজলিবাতির আলো
রাখত জ্বালিয়ে ওরা সমস্ত রাত
আজ সে গিয়েছে ভুলে সেই সব রাত
ভ্রুক্ষেপ নেই তার বিদ্যুতালোকে।
ডোবার ফুলের মতো
তার আমোদের
কালো রং শিকড়-বাকড়
প্রোথিত স্বদেশে;
আর তাই
যখন সে হাসে,
মানে নাজিম,
মানে নাজিম হিকমত
তখন সে হাসি নয় তোমার মতন;
তার হাসি অনেক সফেদ,
তার সে হাসিতে হাসে চাঁদ
নক্ষত্র,
শরাব,
মৃত্যুহীন মৃত্তিকা,
তাবৎ সোনালি ধান জানায় সম্ভাষণ
তার হাসি দিয়ে।
তার কণ্ঠে গান গায় মাতৃভূমি তার।

No comments

Powered by Blogger.