বন্ধ হোক সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতন-বিএসএফের নৃশংসতা

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কয়েকজন সদস্য এক বাংলাদেশি তরুণকে বিবস্ত্র করে নির্মমভাবে পেটানোর ভিডিওচিত্র আবারও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করল, বিএসএফ মানবাধিকার লঙ্ঘনে বেপরোয়া। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। এর আগেও বাংলাদেশি এক নাগরিককে গরু পাচারকারী সন্দেহে যৌনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বিএসএফের সদস্যদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তার প্রতিকার পাওয়া যায়নি।


ভারতের গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর যথাযথ ভূমিকা পালনের কারণেই বিএসএফ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে বিএসএফের সন্দেহভাজন নির্যাতনকারী আট সদস্যকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে এবং ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের মহাপরিদর্শক রবি পোনোঠ টেলিফোনে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ঘটনাটি যে অত্যন্ত ভয়াবহ আর লজ্জাজনক, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।’ কিন্তু এ-ও সত্য, এ ধরনের লজ্জাজনক ঘটনা বিএসএফের সদস্যরা প্রায়ই ঘটিয়ে থাকেন। ‘ট্রিগার হ্যাপি’ কথাটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের মতো অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সীমান্তে এতটা ভয়ানক কি না, আমাদের সন্দেহ।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ বাংলাদেশ বহু বছর ধরেই করে আসছে। সাম্প্রতিক কালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও বেশ সোচ্চার। নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের অভাবে অনেক সময় বিএসএফ সত্যকে আড়াল করে রাখার সুযোগ নেয়। কিন্তু এবার ভারতীয় গণমাধ্যম সত্য উদ্ঘাটনে যে ভূমিকা পালন করেছে, তা প্রশংসনীয়। ভিডিওচিত্রটি এনডিটিভি, পশ্চিমবঙ্গের একটি টিভি চ্যানেলসহ নানা মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ছবি কখনো মিথ্যে বলে না।
বিএসএফ কর্তৃপক্ষ সাধারণত যুক্তি দেখাতে অভ্যস্ত যে, ‘দুর্বৃত্তদের’ কবল থেকে বাঁচতে বিএসএফ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হয়। ফেলানী হত্যাকাণ্ডের পর দুই দেশের গণমাধ্যমে হইচই পড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বিএসএফের সংশ্লিষ্ট সদস্য বরখাস্ত হয়েছিলেন। তখনো বিএসএফের কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করেছিলেন, ফেলানী হত্যাকাণ্ডের বিচার শিগগির সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে কী অগ্রগতি হয়েছে, তা আমাদের জানা নেই।
বিএসএফ শুধু যে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করার মধ্যেই তাদের নৃশংসতা সীমাবদ্ধ রাখে, তা কিন্তু নয়; প্রতিবছর সীমান্ত এলাকার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভারতীয় নাগরিকও তাদের হাতে হতাহত হয়েছে। একটি দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এতটা বেপরোয়া হওয়ার কী কারণ থাকতে পারে?
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, ঢাকা-দিল্লি মৈত্রী জোরদার করার কথা বলা হলেও সীমান্তে হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের ঘটনা থেমে নেই। বিএসএফের কর্মকর্তারা গত ৯ ডিসেম্বরে সংঘটিত নৃশংসতার জন্য দোষী ব্যক্তিদের ‘কঠোর সাজা’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ রকম প্রতিশ্রুতি এর আগেও বহুবার উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির ইতরবিশেষ উন্নতি হয়েছে বলা যাবে না।
আমরা অনতিবিলম্বে সীমান্তে বিএসএফের এই নৃশংসতা বন্ধের দাবি জানাই। সীমান্তে উত্তেজনা জিইয়ে রেখে কিংবা নিরীহ বাংলাদেশিদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে উন্নয়ন ঘটানো যাবে না, সেই সত্য নয়াদিল্লিকে অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.