আশা ইউনিভার্সিটির সেমিনারে বক্তারা- নিয়োগ দুর্নীতি বন্ধে প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার: শিক্ষকদের মধ্যে নৈতিকতাবোধ জাগ্রতা করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। রাজনৈতিক নিয়োগের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিকতা বিলুপ্ত হচ্ছে। শক্তিশালী রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। শিক্ষকতা কেবল একটা পেশা নয়। এটা তার শিক্ষার্থীদের কাছে একটা অনুকরণীয় আদর্শ। গতকাল শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আশা ইউনিভার্সিটির অ্যাপ্লায়িড সোশিওলজি বিভাগ আয়োজিত ‘শিক্ষকসময়: নীতি-অনীতি-উত্তরণপন্থা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। তারা আরও বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা জমিদার, শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণীর জমিদার। সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রজার ভূমিকায় থাকেন। সুন্দর জাতি গঠনে শিক্ষাঙ্গনকে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে। আশা ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. মো. মইনউদ্দিন খান তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাচ্চাদের স্কুলগুলোয় এসে ঠেকেছে। বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করার জন্য রণকৌশলে অবতীর্ণ হতে হয়। উন্নয়ন ফির নামে দ্বিতীয়, তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩০-৪০ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। এটাই প্রমাণ করে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় গলদ আছে। গ্রামের স্কুল-কলেজগুলোয় শিক্ষক সঙ্কট প্রকট। যারা আছেন তারাও সবাই মান সম্পন্ন নন। এ ক্ষেত্রে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভাল শিক্ষক সরবরাহ করতে হবে। ঢাবি’র দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ধর্ম বিশ্বাস থেকে মুক্ত হলেই নৈতিকতা থেকে মুক্ত হওয়া যায় না। নৈতিকতা বজায় রেখেই শিক্ষকদের সমাজ পরিবর্তনে কাজ করে যেতে হবে। নায়েমের মহাপরিচালক ড. শামসুর রহমান বলেন, নৈতিকতার ব্যাপারে অতীত ও বর্তমান শিক্ষকদের মধ্যে অনেক ব্যবধান আছে। আগের শিক্ষকদের কাছ থেকে নৈতিকতা সম্পর্কে অনেক কিছু শেখার আছে। শিক্ষকদের নৈতিক চরিত্রকে উন্নত করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা অনুসরণ করতে পারে। ঢা.বি অধ্যাপক খলিলুর রহমান বলেন, বর্তমান শিক্ষা অনেকাংশেই কোচিংনির্ভর হয়ে পড়েছে। সরকার কোচিং ব্যবসা বন্ধে নেয়া ব্যবস্থা প্রশংসার দাবি রাখে। অধ্যাপক এম আমানুল্লাহ বলেন, সরকার ইংরেজি ও গণিতে অতিরিক্ত ক্লাস নিতে বলছে। প্রায় ৭০ ভাগ স্কুল সে নিয়ম মানছে না। রাষ্ট্রীয়ভাবে এ সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে হবে। ঢা.বি’র আইন বিভাগের শিক্ষক হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, কোন মানুষ যদি ব্যক্তিগতভাবে অসৎ হন, তাহলে তা প্রতিকারের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা থাকতে হবে। নৈতিকতার জায়গাটি বর্তমানে ভেঙে পড়েছে। বাস্তবমুখী পদক্ষেপের ফলে এ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ঢা.বি’র সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রুবায়েত ফেরদৌস বলেন, নৈতিকতার ক্ষেত্রে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। সরকারকেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। সাড়ে তিন কোটি শিশুর হাতে সাড়ে তেইশ কোটি বই পৌঁছে দিয়ে সরকার যুগান্তকারী ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন অনেক বেশি। বাংলাদেশের শিক্ষকদের তা অনেক কম। অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটির সভাপতি ও অ্যাপ্লায়িড সোশিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হেলাল মহিউদ্দিন বলেন, রেজিস্টার্ড প্রাইমারি শিক্ষকরা চাকরি জাতীয়করণের জন্য আন্দোলন করছেন। কাফনের কাপড় পরে আত্মাহুতির হুমকি দিচ্ছেন। অথচ সরকার তাদের অনেক আগেই বলেছে, তাদের একটি যোগ্যতার পরীক্ষায় অবতীর্র্ণ হতে। তারা এতে রাজি নন। তাহলে কোন নৈতিকতার ভিত্তিতে এসব শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করবে। মানবিক বিবেচনায় নিয়োগের কথা বললেও ন্যূনতম একটা যোগ্যতা থাকা দরকার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাবি শিক্ষক রুবায়েত ফেরদৌস ও আশা ইউনিভার্সিটির অ্যাপ্লায়িড সোশিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হেলাল মহিউদ্দিন।
No comments