গাজীপুরে বাসচাপায় শ্রমিক নিহত-মহাসড়ক তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ ভাঙচুর, পুলিশসহ আহত ২০

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর সদর উপজেলার বড়বাড়ী এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বাসচাপায় একজন পোশাকশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম শিউলী আক্তার (২০)। তিনি ছিলেন স্থানীয় বেস্ট শার্ট কারখানার সুইং অপারেটর এবং ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানার চণ্ডীমণ্ডল গ্রামের শামসুল হকের মেয়ে। শ্রমিক নিহতের জের ধরে বিক্ষুব্ধ স্থানীয় শ্রমিকেরা প্রায় তিন ঘণ্টা ওই মহাসড়ক অবরোধ করে অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর ও দুটিতে অগ্নিসংযোগ করেন।


পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে গেলে শ্রমিকদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের আটজন সদস্যসহ কমপক্ষে ২০ জন শ্রমিক-পথচারী আহত হন।
কারখানার শ্রমিক, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সদর উপজেলার বোর্ডবাজার বড়বাড়ী এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে আটটার দিকে বেশ কিছু শ্রমিক সড়ক অতিক্রম করছিলেন। এ সময় ঢাকাগামী একটি বাসের চাপায় ঘটনাস্থলেই পোশাকশ্রমিক শিউলী আক্তারের মৃত্যু হয়।
এ খবর কারখানায় ছড়িয়ে পড়লে তাঁর সহকর্মীরা ও আশপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। পরে উত্তেজিত শ্রমিকেরা অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর এবং টায়ার ও দুটি বাসে (বলাকা সার্ভিসের বাস ঢাকা-মেট্রো-জ-১১-২৪১৬ ও স্থানীয় ভিয়েলা কারখানার স্টাফ বাস ঢাকা-মেট্রো-জ-১৪-২৫২৩) অগ্নিসংযোগ করেন।
খবর পেয়ে টঙ্গী দমকলকর্মীরা এসে বাসের আগুন নেভান। জয়দেবপুর থানার পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে তাঁদের লক্ষ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ স্থানীয় শ্রমিকেরা প্রায় তিন ঘণ্টা ওই মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় তাঁরা অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর এবং দুটি বাস ও বেশ কিছু পুরোনো টায়ারে অগ্নিসংযোগ করেন।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা শুরু করেন। এতে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল ও শটগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে। প্রায় তিন ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে ও দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় পুলিশের আট সদস্যসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হন।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিল্প পুলিশের এএসআই মনির হোসেন, কনস্টেবল ফরিদ আহমেদ, আমিরুল হক, আরিফুল ইসলাম, নিয়াজ মোর্শেদ, জামাল উদ্দিন, আবু হানিফসহ পুলিশের আটজন সদস্য এবং শ্রমিকদের মধ্যে স্থানীয় ন্যাশনাল কেমিক্যালস কারখানার শ্রমিক হুমায়ুন (১৬), ইন্টারফেব পোশাক কারখানার শ্রমিক মোমিনুল ইসলাম, শুভ আহাম্মেদ (২৫), লুৎফর রহমান (২৮), বকুল মিয়া (২৬), সৌরভ (১২) ও মানিক মিয়াসহ (২৭) অন্যদের স্থানীয় তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও টঙ্গী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম কামরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, একই স্থানে ৮ জানুয়ারি একটি বাসের চাপায় তিন কারখানা শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর থেকে শ্রমিকেরা ওই স্থানে গতিরোধক বা ফুটওভারব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.