১০ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করেছে বেশিরভাগ ব্যাংক by ওবায়দুল্লাহ রনি

প্রত্যেক ব্যাংকের তার ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের কমপক্ষে ১০ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থ মূলধন হিসেবে সংরক্ষণের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তাতে সক্ষম হয়েছে বেশিরভাগ ব্যাংক। সেপ্টেম্বরভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর গড় মূলধন সংরক্ষণের হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। চলতি বছরের জুলাই থেকে ব্যাসেল-২ নামে পরিচিত মূলধন পর্যাপ্ততার আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনের আলোকে নূ্যনতম মূলধন সংরক্ষণের এই ধাপ


শুরু হয়। সরকারি মালিকানাধীন পাঁচটি ও বেসরকারি খাতের ৩টি ছাড়া অন্যসব ব্যাংক এ সময়ে মূলধন সংরক্ষণে সক্ষম হয়েছে। ব্যাসেল-২ এর আলোকে প্রস্তুতকৃত বাংলাদেশ ব্যাংকের সেপ্টেম্বরভিত্তিক প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্যাংকগুলোকে প্রতি তিনমাস অন্তর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে মূলধন সংরক্ষণের বিবরণী পাঠানোর নিয়ম রয়েছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এ বিষয়ে গেল সেপ্টেম্বরভিত্তিক তথ্য আছে। সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী মোট ৮টি ব্যাংকের (১০ শতাংশ বিবেচনায়) মূলধন ঘাটতি রয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো_ জনতা ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, অগ্রণী ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ, বেসিক ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ২৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ৯ দশমিক ০১ শতাংশ, আইসিবি ইসলামী ৩৫ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং ট্রাস্ট ব্যাংক ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। মূলধন সংরক্ষণে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে আইসিবি ইসলামী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এসব ব্যাংককে ইতিমধ্যে মূলধন বাড়ানোর পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ব্যাংকের ভবিষ্যৎ ঝুঁকি মোকাবেলায় নূ্যনতম মাত্রার চেয়ে বেশি করে মূলধন সংরক্ষণ করা উচিত। কেননা ঝুঁকি মোকাবেলায় যে কোনো ব্যাংকের উচ্চ মূলধন থাকা জরুরি। সেপ্টেম্বরভিত্তিতে ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ মূলধন সংরক্ষণ করেছে তা আগের তুলনায় ভালো। কেননা এর আগে শুধু ঋণ ঝুঁকির বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করতে বলা হতো। বর্তমানে ঋণ, বাজার ও পরিচালনা ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। তাই সামগ্রিকভাবে ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণের বিষয়টি ইতিবাচক বলে তিনি মনে করেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ব্যাসেল-২ বাস্তবায়ন করতে ব্যাংকগুলোকে তার ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অংশ হিসেবে ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৮ শতাংশ, ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত ৯ শতাংশ এবং ২০১১ সালের জুলাই থেকে ১০ শতাংশ হারে নূ্যনতম মূলধন সংরক্ষণ করার নির্দেশনা রয়েছে। ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অংশ হিসেবে নূ্যনতম মূলধন সংরক্ষণের পাশাপাশি ব্যাংক কোম্পানি আইনে একটি সুনির্দিষ্ট পরিমাণ মূলধন সংরক্ষণের বিধান রয়েছে।
ব্যাংক কোম্পানি আইনে নির্ধারিত পরিমাণ এবং ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অংশের মধ্যে যেটি বেশি সেটিই ব্যাংকগুলোকে নূ্যনতম মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে।
বর্তমানে আইন অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যাংকের নূ্যনতম মূলধন ৪০০ কোটি টাকা। কোটি টাকা নূ্যনতম মূলধনের মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বর্তমানে কোনো ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অর্থের পরিমাণ যদি ৩৫০ কোটি টাকা হয় তাহলে তার জন্য নূ্যনতম মূলধন ৪০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অর্থের পরিমাণ যদি ৪৫০ কোটি টাকা হয় তাহলে তার জন্য নূ্যনতম মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে ৪৫০ কোটি টাকা। বর্তমানে রূপালী ব্যাংকের ১৩৭ কোটি ৫০ লাখ ও কমার্স ব্যাংকের ১৯৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। এ ছাড়া অন্যসব ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ২০০ কোটি বা তার ওপরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.