মানবাধিকার সুরক্ষায় তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে-সমকালে গোলটেবিল
মানবাধিকার সুরক্ষায় তরুণদের সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বিশিষ্টজনরা। এ ক্ষেত্রে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণের জন্য নাগরিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, যুব সমাজ উদ্বুদ্ধ হলে সাধারণ মানুষের জন্য মানবাধিকার নিশ্চিত করা সহজ হবে।\'আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস' উপলক্ষে সমকাল কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আয়োজিত
গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজক ছিল ইউএসএইড, সমকাল ও প্ল্যান। বক্তারা মানবাধিকার কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার ওপর জোর দিয়ে বলেন, মানবাধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। সুশীল সমাজ ও এনজিও এ ক্ষেত্রে শুধু সহায়কের ভূমিকা পালন করতে পারে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, সাবেক আইজিপি ড. এনামুল হক, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী, 'প্ল্যান' বাংলাদেশের মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মসূচির চিফ অব পার্টি ড. শামীম আরা বেগম, 'মাল্টি সেকটরাল প্রোগ্রাম অন ভায়োলেন্স এগেইনেস্ট ওমেনের' প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল হোসেন, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইসরাত আজিম আহমেদ, সমকালের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এস এম শাহাব উদ্দিন, প্ল্যান বাংলাদেশের প্রোগ্রাম সাপোর্ট ম্যানেজার টিআইএম জাহিদ ও কমিউনিকেশন কো-অর্ডিনেটর কেএম রবিউল আলম, সমকালের সহযোগী সম্পাদক অজয় দাশগুপ্ত, মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) আবুল খায়ের চৌধুরী প্রমুখ। সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাঈদ খান। মুখ্য আলোচক ড. মিজানুর রহমান বলেন, মানবাধিকারের সুরক্ষা দেখতে চাই। পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে যখন ঝালকাঠির লিমন
অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র কাদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হন, তখন রাষ্ট্র দায় এড়াতে পারে না। কিন্তু গৃহের অভ্যন্তরে সংঘটিত অপরাধকেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে। রাষ্ট্র ঘরের কোণে নারীর ওপর অত্যাচার করতে বলেনি।
ড. মিজানুর রহমান বলেন, দেশের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ মানবাধিকার কী, সেটি আইনে স্বীকৃত কি-না_ সে সম্পর্কে কিছুই জানে না। পুরো রাষ্ট্রই যেন ধনীবান্ধব। অনেক সময় মনে হয় দরিদ্রবিরোধী।
তিনি আরও বলেন, সুনির্দিষ্ট অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ যাচাই করতে সিলেট কারাগারে গিয়েছিলাম। জানতাম, আমাকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তথাপি আমার জয় হয়েছে। কারা প্রশাসনে দুর্নীতির প্রমাণ থাকার কারণেই আমাকে কারাগারে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, '৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ব্যক্তিরাও এখন মানবাধিকারের ঢালে রক্ষা পেতে চাইছে। মানবাধিকারের শত্রু ও বন্ধু উভয়েই এটিকে ব্যবহার করে। শিক্ষক রুমানা মঞ্জুরকে নির্যাতনকারী হাসান সাঈদের মৃত্যু সম্পর্কে তিনি বলেন, যদি তার মৃত্যু অস্বাভাবিক হয়, তাহলে তা কীভাবে হয়েছে তা জানার অধিকার আমাদের রয়েছে।
যারা প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়েছেন তাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা দেশের জন্মের বিরুদ্ধাচরণ করেছে, ইতিহাসের জঘন্যতম অপরাধে লিপ্ত ছিল, তাদের পক্ষ নেওয়া সমান অপরাধ। জনগণ তাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করবে।
ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগের প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা হরতাল সমর্থন করায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষা নাগরিক আন্দোলনের সমালোচনা করে মিজানুর রহমান বলেন, এখন বলছেন আমরা হরতাল সমর্থন করি না, কিন্তু এটা করি। পরে হয়তো বলবেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সমর্থন করি, কিন্তু এ বিচার নয়। নিরপেক্ষ বা মধ্যমপন্থি বলে কিছু নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন। জনগণের পক্ষে থাকতে হবে।
সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার মানবাধিকার সুরক্ষায় নাগরিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, দুঃখজনক বাস্তবতা হলো আমরা সুস্পষ্টভাবে দ্বিধাবিভক্ত। মিডিয়াও এর বাইরে নয়।
ড. এনামুল হক বলেন, দেশে আইনের অভাব নেই। অভাব প্রয়োগের। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেকে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু এগুলো যথাযথভাবে খতিয়ে না দেখে ঢালাও মন্তব্য করা হচ্ছে। পুরো জাতি এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা হচ্ছে না।
মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ঘরে ও ঘরের বাইরে নারীর অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কমছে না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যৌন নিপীড়ন রোধের কমিটিগুলোকে আরও নারীবান্ধব করা দরকার। ২০০৯ সালে আদালত এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক রায় দিলেও পরিস্থিতি খুব একটা বদলেছে বলে মনে হয় না। অধিকার রক্ষায় ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে 'ওমেন কমিশন' গঠন করার কথা আমরা অনেক দিন ধরে বলছি। নারীর ওপর সহিংসতার ঘটনায় ভিকটিমকে সহায়তা দিতে 'ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার' তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ সিআরসি ও সিডও সনদ স্বাক্ষরকারী দেশ। এ দুটির মূলমন্ত্র অধিকারের সুরক্ষা। তিনি বলেন, বছরে একদিন মানবাধিকার দিবস পালন করা যথেষ্ট নয়। সচেতনতামূলক কাজকে নিত্যদিনের ব্যাপার হিসেবে নিতে হবে। মানবাধিকার কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা দরকার।
প্ল্যান বাংলাদেশের মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মসূচির চিফ অব পার্টি ড. শামীম আরা বেগম বলেন, প্ল্যান ইউএসএইডের সহায়তায় প্রটেক্টিং হিউম্যান রাইটস শীর্ষক ৫ বছর মেয়াদি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
প্ল্যান বাংলাদেশের কমিউনিকেশন কো-অর্ডিনেটর কেএম রবিউল আলম বলেন, রাষ্ট্র বিরাট পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। তবে ওই পাহাড় নাগরিকদের ছায়া দিচ্ছে না, বরং অধিকার অর্জনের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
সমকালের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এস এম শাহাব উদ্দিন বলেন, মানবাধিকার পরিস্থিতি উত্তরণ না হওয়ার মূল কারণ দারিদ্র্য ও শিক্ষার অভাব। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সামাজিক ন্যায়বিচার এগুলো মৌখিক আশ্বাসে সীমাবদ্ধ। বাস্তবে সেগুলো হচ্ছে না।
প্ল্যান বাংলাদেশের প্রোগ্রাম সাপোর্ট ম্যানেজার টিআইএম জাহিদ বলেন, ৫৫ শতাংশ নারী তাদের বাড়িতে কোনো না কোনোভাবে নিগৃহীত হয়। সুশিক্ষিত না হওয়ার কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে না।
মহিলা আইনজীবী সমিতির অন্যতম প্রতিনিধি মিতালী জাহান বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যদি নারীর প্রতি সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, তবে কোনোদিন তা কমবে না। রাষ্ট্র মানবাধিকার কমিশনকেও জনবল দিয়ে ও ক্ষমতায়িত করে কাজ করতে দিচ্ছে না। এখানেই নাগরিক সমাজের কাজের সুযোগ রয়েছে।
ড. আবুল হোসেন বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। মানবাধিকার রক্ষায় সুশীল সমাজকে আরও উদ্যোগ নিতে হবে। নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরে পুলিশ ভিকটিমকে ডাক্তারের কাছে পাঠায়, আবার ডাক্তার পাঠায় পুলিশের কাছে। এ মারপ্যাঁচে পড়ে ভিকটিম আরও বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সমকালের সহযোগী সম্পাদক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, গণমাধ্যম এখন মানবাধিকারের প্রশ্নে অনেক বেশি সোচ্চার। র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। সমাজ-রাষ্ট্র এসব ঘটনা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারছে না।
সমকালের মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) আবুল খায়ের চৌধুরী বলেন, মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা পূরণের দায়িত্ব সরকারের। কোনো সরকারেরই এগুলো পূরণের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই।
অধ্যাপিকা ইসরাত আজিম আহমেদ বলেন, মানবাধিকার একটি ব্যাপক ক্ষেত্র। শিশুর ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। শিশুনীতির দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, সাবেক আইজিপি ড. এনামুল হক, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী, 'প্ল্যান' বাংলাদেশের মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মসূচির চিফ অব পার্টি ড. শামীম আরা বেগম, 'মাল্টি সেকটরাল প্রোগ্রাম অন ভায়োলেন্স এগেইনেস্ট ওমেনের' প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল হোসেন, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইসরাত আজিম আহমেদ, সমকালের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এস এম শাহাব উদ্দিন, প্ল্যান বাংলাদেশের প্রোগ্রাম সাপোর্ট ম্যানেজার টিআইএম জাহিদ ও কমিউনিকেশন কো-অর্ডিনেটর কেএম রবিউল আলম, সমকালের সহযোগী সম্পাদক অজয় দাশগুপ্ত, মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) আবুল খায়ের চৌধুরী প্রমুখ। সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাঈদ খান। মুখ্য আলোচক ড. মিজানুর রহমান বলেন, মানবাধিকারের সুরক্ষা দেখতে চাই। পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে যখন ঝালকাঠির লিমন
অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র কাদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হন, তখন রাষ্ট্র দায় এড়াতে পারে না। কিন্তু গৃহের অভ্যন্তরে সংঘটিত অপরাধকেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে। রাষ্ট্র ঘরের কোণে নারীর ওপর অত্যাচার করতে বলেনি।
ড. মিজানুর রহমান বলেন, দেশের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ মানবাধিকার কী, সেটি আইনে স্বীকৃত কি-না_ সে সম্পর্কে কিছুই জানে না। পুরো রাষ্ট্রই যেন ধনীবান্ধব। অনেক সময় মনে হয় দরিদ্রবিরোধী।
তিনি আরও বলেন, সুনির্দিষ্ট অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ যাচাই করতে সিলেট কারাগারে গিয়েছিলাম। জানতাম, আমাকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তথাপি আমার জয় হয়েছে। কারা প্রশাসনে দুর্নীতির প্রমাণ থাকার কারণেই আমাকে কারাগারে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, '৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ব্যক্তিরাও এখন মানবাধিকারের ঢালে রক্ষা পেতে চাইছে। মানবাধিকারের শত্রু ও বন্ধু উভয়েই এটিকে ব্যবহার করে। শিক্ষক রুমানা মঞ্জুরকে নির্যাতনকারী হাসান সাঈদের মৃত্যু সম্পর্কে তিনি বলেন, যদি তার মৃত্যু অস্বাভাবিক হয়, তাহলে তা কীভাবে হয়েছে তা জানার অধিকার আমাদের রয়েছে।
যারা প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়েছেন তাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা দেশের জন্মের বিরুদ্ধাচরণ করেছে, ইতিহাসের জঘন্যতম অপরাধে লিপ্ত ছিল, তাদের পক্ষ নেওয়া সমান অপরাধ। জনগণ তাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করবে।
ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগের প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা হরতাল সমর্থন করায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষা নাগরিক আন্দোলনের সমালোচনা করে মিজানুর রহমান বলেন, এখন বলছেন আমরা হরতাল সমর্থন করি না, কিন্তু এটা করি। পরে হয়তো বলবেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সমর্থন করি, কিন্তু এ বিচার নয়। নিরপেক্ষ বা মধ্যমপন্থি বলে কিছু নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন। জনগণের পক্ষে থাকতে হবে।
সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার মানবাধিকার সুরক্ষায় নাগরিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, দুঃখজনক বাস্তবতা হলো আমরা সুস্পষ্টভাবে দ্বিধাবিভক্ত। মিডিয়াও এর বাইরে নয়।
ড. এনামুল হক বলেন, দেশে আইনের অভাব নেই। অভাব প্রয়োগের। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেকে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু এগুলো যথাযথভাবে খতিয়ে না দেখে ঢালাও মন্তব্য করা হচ্ছে। পুরো জাতি এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা হচ্ছে না।
মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ঘরে ও ঘরের বাইরে নারীর অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কমছে না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যৌন নিপীড়ন রোধের কমিটিগুলোকে আরও নারীবান্ধব করা দরকার। ২০০৯ সালে আদালত এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক রায় দিলেও পরিস্থিতি খুব একটা বদলেছে বলে মনে হয় না। অধিকার রক্ষায় ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে 'ওমেন কমিশন' গঠন করার কথা আমরা অনেক দিন ধরে বলছি। নারীর ওপর সহিংসতার ঘটনায় ভিকটিমকে সহায়তা দিতে 'ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার' তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ সিআরসি ও সিডও সনদ স্বাক্ষরকারী দেশ। এ দুটির মূলমন্ত্র অধিকারের সুরক্ষা। তিনি বলেন, বছরে একদিন মানবাধিকার দিবস পালন করা যথেষ্ট নয়। সচেতনতামূলক কাজকে নিত্যদিনের ব্যাপার হিসেবে নিতে হবে। মানবাধিকার কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা দরকার।
প্ল্যান বাংলাদেশের মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মসূচির চিফ অব পার্টি ড. শামীম আরা বেগম বলেন, প্ল্যান ইউএসএইডের সহায়তায় প্রটেক্টিং হিউম্যান রাইটস শীর্ষক ৫ বছর মেয়াদি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
প্ল্যান বাংলাদেশের কমিউনিকেশন কো-অর্ডিনেটর কেএম রবিউল আলম বলেন, রাষ্ট্র বিরাট পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। তবে ওই পাহাড় নাগরিকদের ছায়া দিচ্ছে না, বরং অধিকার অর্জনের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
সমকালের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এস এম শাহাব উদ্দিন বলেন, মানবাধিকার পরিস্থিতি উত্তরণ না হওয়ার মূল কারণ দারিদ্র্য ও শিক্ষার অভাব। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সামাজিক ন্যায়বিচার এগুলো মৌখিক আশ্বাসে সীমাবদ্ধ। বাস্তবে সেগুলো হচ্ছে না।
প্ল্যান বাংলাদেশের প্রোগ্রাম সাপোর্ট ম্যানেজার টিআইএম জাহিদ বলেন, ৫৫ শতাংশ নারী তাদের বাড়িতে কোনো না কোনোভাবে নিগৃহীত হয়। সুশিক্ষিত না হওয়ার কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে না।
মহিলা আইনজীবী সমিতির অন্যতম প্রতিনিধি মিতালী জাহান বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যদি নারীর প্রতি সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, তবে কোনোদিন তা কমবে না। রাষ্ট্র মানবাধিকার কমিশনকেও জনবল দিয়ে ও ক্ষমতায়িত করে কাজ করতে দিচ্ছে না। এখানেই নাগরিক সমাজের কাজের সুযোগ রয়েছে।
ড. আবুল হোসেন বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। মানবাধিকার রক্ষায় সুশীল সমাজকে আরও উদ্যোগ নিতে হবে। নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরে পুলিশ ভিকটিমকে ডাক্তারের কাছে পাঠায়, আবার ডাক্তার পাঠায় পুলিশের কাছে। এ মারপ্যাঁচে পড়ে ভিকটিম আরও বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সমকালের সহযোগী সম্পাদক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, গণমাধ্যম এখন মানবাধিকারের প্রশ্নে অনেক বেশি সোচ্চার। র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। সমাজ-রাষ্ট্র এসব ঘটনা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারছে না।
সমকালের মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) আবুল খায়ের চৌধুরী বলেন, মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা পূরণের দায়িত্ব সরকারের। কোনো সরকারেরই এগুলো পূরণের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই।
অধ্যাপিকা ইসরাত আজিম আহমেদ বলেন, মানবাধিকার একটি ব্যাপক ক্ষেত্র। শিশুর ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। শিশুনীতির দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি।
No comments