একাত্তরের যুদ্ধাপরাধঃ আর্চার ব্লাড বনাম স্টিফেন র্যাপ by মোহাম্মদ আলী বোখারী
সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক মার্কিন অ্যাম্বাসাডর-অ্যাট্-লার্জ স্টিফেন জে. র্যাপ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইবুনাল নিয়ে কিছু অযাচিত মন্তব্য ও অনাকাক্সিক্ষত প্রস্তাব রেখেছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিচারের স্বচ্ছতার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক কমিউনিটির নির্দেশনা ও প্রস্তাবসহ যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন।
ইতিহাস পর্যালোচনায় আজ সেই মন্তব্য, প্রস্তাব ও সহযোগিতা ধারণ কতোটা যৌক্তিক সেটা নির্ধারণে গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে একাত্তরে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেল আর্চার ক্যান্ট ব্লাডের ভূমিকা। একাত্তরে বাংলাদেশে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধকে যুক্তরাষ্ট্রের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে সে বছরের ২ আগস্ট বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ‘পাকিস্তান রেভেজিং অব গোল্ডেন বেঙ্গল’ অর্থাৎ ‘সোনার বাংলা ধ্বংসে পাকিস্তান’ নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘পোল্যান্ডে নাৎসি শাসনের পর এটি ছিল অবিশ্বাস্য ও হিসেবি ঘটনা’। সামগ্রিকভাবে এই ‘অবিশ্বাস্য ও হিসেবি’ ঘটনাটিই বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের পর সারাবিশ্বের মানুষ বহুলভাবে জেনেছে। জেনেছে কতটা নারকীয় পাশবিকতায় স্বাধীনতাকামী ত্রিশ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, দু’লাখ নারীকে তার সম্ভ্রম দিতে হয়েছে এবং এক কোটি মানুষকে প্রাণভয়ে শরণার্থী হয়ে প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছে।
এই সংখ্যাগত হিসেবটি পাকিস্তানের হামুদুর রহমান কমিশন কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে ইংরেজিতে প্রকাশিত বেশ কিছু গ্রন্থে বিতর্কিতভাবে উপস্থাপিত হলেও বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের ভূখন্ডে কতটা আত্মত্যাগে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতার লাল-সবুজ পতাকা। অভিযোগ রয়েছে এই নির্বিচার হত্যাযজ্ঞে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হয়েছিল জামায়াতে ইসলামীপুষ্ঠ রাজাকার, আল-শামস এবং আল-বদর সদস্যরা। স্থানীয়ভাবে এই তিন দলের সদস্যরাও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্দেশে নিজের দেশের মানুষকে হত্যায় মেতে ওঠে। এখনও সেই হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী গণকবরের সন্ধান মিলছে দেশের আনাচে-কানাচে। সর্বশেষ মিলেছে, ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে ঢাকার অবাঙ্গালী এলাকার এক মসজিদ সংলগ্ন পুরনো কূপে।
২০০৮ সালের জুনে বিবিসি’র সংবাদদাতা মার্ক ডামেটকে সেই গণহত্যার আবর্তে নিখোঁজ নিজের মুক্তিযোদ্ধা ভাই সেলিমকে ঢাকার উত্তরপ্রান্তে খুঁজতে যাবার অভিজ্ঞতায় একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ তথ্য উদঘাটন কমিটির সভাপতি ডাঃ এম এ হাসান এক মর্মস্পর্শী বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘সেইদিন, ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি আমি দেখেছি কয়েক শত মানুষের মৃতদেহ, কর্তিত মৃতদেহ পুরো জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে আছে। প্রতিটা মৃতদেহের গায়ে নির্যাতনের ছাপ, নখ উপড়ে ফেলা হয়েছে, চোখ উৎপাটিত এবং হৃদপিন্ড উপড়ে ফেলা হয়েছে। তাদের কিছুসংখ্যক নারী, তাদের বক্ষ ব্যবচ্ছেদিত, যৌনাঙ্গ কর্তিত। আমাকে সেই মৃতদেহ সরিয়ে পথ করতে হয়েছে। তারা সকলেই ছিল নিরপরাধ সাধারণ মানুষ।’
১৯৭২ সালে প্রকাশিত রবার্ট পেইন রচিত ‘ম্যাসাকার’ গ্রন্থে উলে¬খ আছে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্বাঞ্চলে ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করে। এর ফলে ১৯৭১ সালের ২২ ফেব্র“য়ারি পশ্চিম পাকিস্তানের জেনারেলরা আওয়ামী লীগ ও তার সমর্থকদের নিস্তব্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম থেকেই ধরে ন্ওেয়া হয় এই আতঙ্ক রুখতে একটি গণহত্যার প্রয়োজন হতে পারে: ‘তাদের ত্রিশ লক্ষ মানুষ হত্যা করো’ বললেন ফেব্র“য়ারির ওই বৈঠকে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া, ‘বাকীরা এমনিতেই আমাদের হাতে সোজা হবে’ (পৃষ্ঠা ৫০)। সেই গণহত্যার শুরু হয় ২৫ মার্চের কালো রাতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হানা দিয়ে শত শত ছাত্রকে হত্যা করা হয়। একই রাতে ঢাকা শহরে ৭ হাজার মানুষ হত্যা করে ঘাতকের দল। সেটাই ছিল শুরু, এক সপ্তাহে ঢাকার অর্ধেক মানুষ পালিয়ে যায়, কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ হত্যা করা হয়। চট্রগ্রামেও অনুরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, মানুষ অর্ধেকে নেমে আসে। অনুমান করা হয়, এপ্রিল মাস নাগাদ তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানে ৩ কোটি মানুষ মিলিটারির ভয়ে সর্বত্র পালিয়ে বেড়ায়।
ইতিহাস বলে একাত্তরে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেল আর্চার ক্যান্ট ব্ল¬াড পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সেই হত্যাযজ্ঞের সংবাদটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রশাসনকে জানান তীব্র ক্ষোভপূর্ণ প্রতিক্রিয়ায়, পরে তা আখ্যায়িত হয় ‘ব্লাড টেলিগ্রাম’ হিসেবে। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র কনসুলেট থেকে প্রেরিত প্রথম টেলিগ্রামটিতে ‘সিলেক্টিভ জেনোসাইড’ বা ‘বাছাই করে গণহত্যা’ শিরোনামে জানানো হয়: ‘এখানে ঢাকায় আমরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসী রাজত্বে বাক-বিমূঢ় ও আতঙ্কিত। প্রমাণ মিলেছে যে, এমএলএ (মার্শাল ল’ অথরিটি) কর্তৃপক্ষ আওয়ামী সমর্থকদের তালিকাভুক্ত করে পর্যায়ক্রমিক তাদের বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করছে। উচ্চ পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের বাইরেও যাদের নিধন করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছে ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। দ্বিতীয় তালিকাভুক্তদের মধ্যে আমাদের কাছে খবর পৌঁছেছে যে দর্শন বিভাগের প্রধান ফজলুর রহমানসহ একজন হিন্দু এবং ইতিহাস বিভাগের প্রধান এম. আবেদিনকে হত্যা করা হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের রাজ্জাক নিহত হয়েছেন বলেও গুজব রয়েছে। উপরন্তু নিহতদের তালিকার অধিকাংশই হচ্ছেন নির্বাচিত এমএনএ এবং এমপিএ। এছাড়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মদদে অবাঙ্গালী মুসলমানরাও পর্যায়ক্রমিক দরিদ্র মানুষের ওপর আক্রমণ করছে এবং বাঙ্গালী ও হিন্দু হত্যা করছে। ঢাকার রাস্তা হিন্দু কর্তৃক এবং ঢাকাত্যাগী মানুষে পরিপূর্ণ। অনেক বাঙ্গালীই আমেরিকানদের বাড়িতে আশ্রয় চেয়েছে, তাদের অনেকেই সে আশ্রয় দিয়েছেন। মনে হচ্ছে পাক মিলিটারির তল্ল¬াশি ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে আজ কড়া কার্ফ্যু আরোপ করা হয়েছে (আজ দুপুরে তা পুন:বলবৎ করা হয়েছে)। মিলিটারির বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি। পাক মিলিটারির নৃশংসতার পূর্ণাঙ্গ রূপটি আগে বা পরে বেরিয়ে আসবে। সে কারণে আমি বর্তমান যুক্তরাষ্ট্র সরকারের (ইউএসজি) মিথ্যা আশ্বাস ও অস্বীকারোক্তিকে প্রশ্ন করছি, যেহেতু এই অফিস পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণাঙ্গ ঘটনাপ্রবাহকে তুলে ধরেছে। পাক মিলিটারির নিজ দেশের মানুষের ওপর এই সন্ত্রাস প্রবাহ পরিচালনার জন্য আমাদের দুঃখ প্রকাশ করা উচিত, অন্ততঃ সরকারের কাছে (জিওপি) সংগোপনে। আমি অবশ্যই তথ্যের উৎস হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করতে চাই এবং ধরে নিচ্ছি সরকার আমাকে পরিত্যাগ করতে বলবেন। আমি বিশ্বাস করি না ঘটনার আবর্তে আমেরিকান কমিউনিটির নিরাপত্তা ভীতিপূর্ণ হবে, কিন্তু আমাদের যোগাযোগের সামর্থ্য আপোসপ্রবণ হবে। ব্লাাড।’
তবে এই ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরার বাইরেও ‘ব্লাড টেলিগ্রাম’-এর সাহসী পরিচিতি অন্যত্র। ১৯৭১ সালের ৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন বরাবরে প্রেরিত তার টেলিগ্রামটি ছিল তীব্র প্রতিবাদী, যা দেশটির পররাষ্ট্র বিভাগে এক বিরল মতদ্বৈততার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত। ২০ জন মার্কিন কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত ওই টেলিগ্রাম ‘ডিসেন্ট ফ্রম ইউএস পলিসি টুয়ার্ড ইস্ট পাকিস্তান: জয়েন্ট স্টেট/এইড/ইউএসআইএস মেসেজ’-এ বলা হয়: ‘গণতন্ত্রের নিষ্পেষনে আমাদের সরকার নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। নৃশংসতার প্রতি নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে আমাদের সরকার। আমাদের সরকার তার নিজের নাগরিকদের নিরাপত্তা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে, যখন একই সময়ে বাঞ্ছিত নেতিবাচক সরকারী সম্পর্কের প্রভাবকে লঘুতর করে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের কাছে অবনত হয়ে দূরে সরে গিয়ে তাদেরই আশ্বস্ত করেছে। আমাদের সরকার প্রমাণ করেছে, যা অনেকের কাছেই নৈতিকতার স্খলন হিসেবে বিবেচিত হবে, সশে¬সে একই সময়ে গণতন্ত্র রক্ষায় ইউএসএসআর (সোভিয়েত ইউনিয়ন) প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে বার্তা পাঠিয়েছে, সংখ্যাগরিষ্ঠদলের নেতাকে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছে (ঘটনাক্রমে তিনি ‘প্রো-ওয়েস্ট’ অর্থাৎ পশ্চিমা-ঘেঁষা), সংঘাত ও রক্তক্ষয় বন্ধের আহবান জানিয়েছে। পাকিস্তানের জন্য আমাদের সাম্প্রতিক কর্মপন্থা হচ্ছে কৌশলগত দিকের চাইতে মানবিক। কিন্তু আমরা বেছে নিয়েছি কোনোপ্রকার সম্পৃক্ত না হতে, এমনকি নৈতিকভাবে, যেখানে আওয়ামী সংঘাত বিদ্যমান, যেখানে দুঃখজনকভাবে বিস্তৃত অর্থে গণহত্যার শর্তাবলী প্রযোজ্য, যা বাস্তবিকই একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সাধারণ আমেরিকানরা নিদারুণ বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। আমরা, পেশাজীবী সরকারী কর্মচারী হিসেবে বর্তমান নীতির প্রতি মতদ্বৈততা প্রকাশ করছি এবং আশা করছি এখানে আমাদের প্রকৃত ও দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ নিরূপিত হতে পারে এবং মুক্ত বিশ্বে আমাদের জাতির নৈতিক নেতৃত্বের অবস্থানটি পুনরুদ্ধারে নীতিমালার পরিবর্তন ঘটবে। আমাদের নীতিমালার সুনির্দিষ্ট মতদ্বৈততা এবং প্রস্তাবিত নীতিমালা ‘ সেপটেল’-এ জানানো হবে। স্বাক্ষর করেছেন: ব্রায়েন বেল, রবার্ট এল. বরকোয়েন, ডবি¬উ. স্কট বুচার, এরিক গ্রিফেল, জাকারি এম. হান, জেইক হার্সবার্গার, রবার্ট এ. জ্যাকসন, লয়েন্স কুগেল, জোসেফ এল. মালপেলি, উইলিয়াম ডি. ম্যাকলিয়ারি, ডিসেইক্স মায়ার, জন এল. নেসভিগ, উইলিয়াম গ্রান্ট পার, রবার্ট কার্স, রিচার্ড এল. সিম্পসন, রবার্ট সি. সিম্পসন, রিচার্ড ই. সাটোর, ওয়েন এ. সুইডেনগার্ঘ, রিচার্ড এল. উইলসন, স্যানোন ডব্লিউ. উইলসন। আমি উল্লে¬খিত কর্মকর্তাদের মতদ্বৈততার অধিকার ও কন্ঠকে সমর্থন করি। কেননা তারা তাদের মতদ্বৈততার প্রকাশ ঘটিয়েছেন এবং যেহেতু আমাদের যোগাযোগের কোনো মাধ্যম নেই টেলিগ্রাফ ব্যতিরেকে, এই জন্য আমি টেলিগ্রামের অনুমতি দিয়েছি। আমি এই সকল কর্মকর্তার অভিমত বিশ্বাস করি, যারা পূর্ব পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত আছেন, যেখানে বিশাল আমেরিকান কমিউনিটি সাধারণ ও কর্মজীবী উভয়েরই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত। যদিও আমি তাদের দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে ঐকমত্য পোষণ করি, তবু মনে করি সেই বক্তব্য স্বাক্ষর করা অনুচিত, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি এখানে প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছি। তাদের ঐক্যবদ্ধতার প্রতি আমার সমর্থন ভিন্নমাত্রা পরিগ্রহ করেছে। যেহেতু পরবর্তী রিপোর্টিংয়ের আশা রয়েছে, আমি বিশ্বাস করি পূর্ব পাকিস্তানে যে সংগ্রাম দানা বেঁধেছে তার যথার্থ পরিণতিতে আছে বাঙ্গালীর বিজয় এবং স্বাধীন ‘বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠায়। এই মুহূর্তে আমরা আওয়ামী লীগের সম্প্রীতি ধারণ করে আছি। এটা হবে বোকার ভাবনা তুল্য যদি আমরা তা পরিত্যাগ করি এবং একপেশে হয়ে পরাজিতের পাশে দাঁড়াই। ব্লাড।’
তাই এটা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, একাত্তরে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেল আর্চার ক্যান্ট ব্লাড ছিলেন আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টাদের কাতারে অতি সাহসী একজন, যিনি নিজে পরবর্তী কূটনীতিক জীবনে প্রায় কোনঠাসা হয়ে ৮১ বছর বয়সে ২০০৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলোরাডোর ফোর্ট কলিন্স হাসপাতালে আর্টারি সিরোসিসে মারা যান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটে তার স্মৃতিরোমন্থনপূর্ণ লেখা বইয়ের নাম: ‘এ ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ: মেমোয়র্স অফ অ্যান আমেরিকান ডিপ্লে¬াম্যাট’। অবশেষে ২০০৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস তাদের আমেরিকান সেন্টার লাইব্রেরিটির নামকরণ করে ‘আর্চার কে ব্লাড আমেরিকান সেন্টার লাইব্রেরি’।
আর্চার ক্যান্ট ব্লাডের এই গুরুত্ববহ ভূমিকাটির পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় গত ২৮ নভেম্বর ঢাকা সফররত যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক মার্কিন অ্যাম্বাসাডর-অ্যাট্-লার্জ স্টিফেন জে. র্যাপ বাংলাদেশের মানুষের অতি প্রতীক্ষিত দাবির ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর সাথে মতবিনিময় করেছেন এবং পরদিন যা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার বরাতে ‘নো পলিটিক্যাল মোটিভ বিহাইন্ড ওয়ার ট্রায়াল: পিএম’ শিরোনামে ডেইলি স্টারে ছাপা হয়েছে, তা রীতিমতো ধৃষ্টতার সামিল। যদি র্যাপের কোনো বক্তব্য, মতামত বা প্রস্তব প্রকৃত অর্থেই বিবেচনায় নিতে হয়, তবে অবশ্যই তাকে পাকিস্তানি মিলিটারির সেই নৃশংস গণহত্যার বিচারের দাবিটি তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নির্লিপ্ত অক্ষমতার যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে উত্থাপণ ও বিচার বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই বিচারের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের সুবাদে ভূয়সী প্রশংসা করে বলতে পারেন না যে, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাই’। কেননা বাংলাদেশের গণহত্যা সম্পর্কিত ১৯৭৩ সালের ক্রাইম ট্রাইবুনাল অ্যাক্ট নুরেমবার্গ, যুগোস্লোভিয়া, এমনকি রুয়ান্ডার গণহত্যা সম্পর্কিত ট্রাইবুনাল অ্যাক্টের সমকক্ষ ও সম্পূরক এ কথাটি জানিয়েছেন বেলজিয়ামস্থ বাংলাদেশ জেনোসাইড স্টাডিজের আন্তজার্তিক আইন বিষয়ক অধ্যাপক ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
ই-মেইল: bukhari.toronto@gmail.com
No comments