৫ দিনের লম্বা চ্যালেঞ্জ by সঞ্জয় সাহা পিয়াল

কুসংস্কার! হতে পারে। ম্যাচের আগের দিন কখনোই কাছে গিয়ে হাঁটু মুড়িয়ে বসে উইকেট দেখেন না ইলিয়াস সানি। এতে নাকি তার পারফরম্যান্স ভালো হয়। গতকাল মুশফিকদের কেউ কেউ মাঠের মধ্যে খোলা বুকের উইকেট দেখে এলেও সানি সে দলে শরিক হলেন না। তামিমেরও এমন একটি ব্যাপার আছে। চট্টগ্রামে খেলা থাকলেও মাকে বাড়ি থেকে আসতে বলেন না মাঠে। ওয়ানডে সিরিজে বিধ্বস্ত মুখগুলো এভাবেই নিজেদের মতো করে বিশ্বাসগুলো মেনে


চলেছেন; কিন্তু যে বিশ্বাসটি গত কয়েকদিন বটমূলের মতো সবার মধ্যে গেঁথে গেছে, 'ওদের (পাকিস্তানের) বোলিং বেশি শক্তিশালী', সে মূল কীভাবে শিকড়সহ তুলে ফেলতে পারবেন কোচ স্টুয়ার্ট ল? আশরাফুল-নাজিমউদ্দিনের মতো স্কোয়াডে নতুনরা এসেছেন বটে, কিন্তু তারাও তো ড্রেসিংরুমে গিয়ে হাফিজের দুর্ধর্ষ বোলিংয়ের গন্ধ শুনেছেন সতীর্থদের কাছে।
শহিদ আফ্রিদি, উমর আকমল, সোহেল তানভিরের মতো ভারী ভারী নামগুলো নেই টেস্টে। তারপরও চট্টগ্রাম টেস্টের আয়ুষ্কাল নিয়ে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকছে। টানাহেঁচড়া করে এ টেস্ট পাঁচ দিনে নিয়ে যাওয়া যাবে তো? প্রশ্নকর্তার দিকে একবার তাকিয়ে যে হাসিটি দিয়েছিলেন স্টুয়ার্ট ল, সেটার উত্তর ধরে নেওয়া যেতে পারে এভাবে_ 'আমাকে কেন, তোমাদের ক্রিকেটারদের জিজ্ঞেস কর। মাঠে গিয়ে তো তারাই খেলবে।' যে টেস্টের ম্যানুফেকচার ডেটই বসেনি, সেই টেস্টের এক্সপেয়ার ডেটের কথা শুনে শাহরিয়ার নাফীসও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন প্রথমে। পরে সামলে উঠে যা বলেছিলেন, তা প্রতিটি ম্যাচের আগেই বলে থাকেন বাংলাদেশের ড্রেসিংরুম থেকে আসা কোনো মুখপাত্র। 'অবশ্যই এ টেস্ট শেষ দিন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সম্ভব। জিম্বাবুয়ে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ যে টেস্টগুলো খেলেছি আমরা, এর সবই পাঁচ দিনের লম্বা ছিল। আমরা ব্যাটসম্যানরা যদি দুই ইনিংসে বড় স্কোর করতে পারি, তাহলে অবশ্যই সম্ভব।'
তবে পরিসংখ্যান কিন্তু বলে অন্য কথা, এ পর্যন্ত পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬ টেস্টের কেবল একটিতে বাংলাদেশ শেষ দিন পর্যন্ত যেতে পেরেছিল। করাচিতে ২০০৩ সালের আগস্টে ওই ম্যাচে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে হেরেছিল শেষ দিনে গিয়ে। যদিও সাত বছর পর খেলতে নেমে ধুলোঝাড়া অতীতকে উদাহরণ দাঁড় করানো ঠিক না। তারপরও অতীতই ভরসা বাংলাদেশের। 'যখন আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল করতে পারি না। দেয়ালে একেবারে পিঠ ঠেকে যায় তখনই আমরা ঘুরে দাঁড়াই। সেটাকেই প্রেরণা হিসেবে নিয়ে টেস্টেও ব্যাটসম্যানদের কিছু করতে হবে।'
এই 'করতে হবে' শব্দটি যথেচ্ছার ব্যবহারে অনেকটাই মূল্য হারিয়েছে। সেটা জেনেই আশরাফুল চুপ থাকলেন। 'বলে কী হবে, আগে মাঠে গিয়ে কিছু করি।' দলে নতুন আসা নাজিমউদ্দিনও 'কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী' দলের একজন সদস্য বলে নিজেকে পরিচয় দিলেন। 'অনেক দিন পর দলে ফিরে ভালো লাগছে; কিন্তু এই ভালো লাগাটা তখনই মানাবে, যখন দলের হয়ে নিজে কিছু করতে পারব।' গতকাল অনুশীলনে আসা বাংলাদেশ দলের প্রতিটি মুখের ছবিই ছিল_ মাঠে কিছু করতে হবে। 'আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন চার দিনেই টেস্টের রেজাল্ট হয়ে যায়। তাই আমাদেরও চ্যালেঞ্জ থাকবে টেস্টকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার।' গতকাল টেস্ট শুরুর আগে নাফীসের বলা এ কথাটি একটু পুরনো মনে হয়েছিল। ওয়ানডে সিরিজের আগে এমনই বলেছিলেন মুশফিকুর রহিমও। তাই আর কথা নয়, কাজ চায় সমর্থকরা। চট্টগ্রাম টেস্টে নূ্যনতম একটা প্রতিরোধ দেখতে চায় সবাই।

No comments

Powered by Blogger.