ডারবান সম্মেলন শেষ আজ-সমঝোতার পথে নেতারা :১০০ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড হচ্ছে by আলতাব হোসেন

দীর্ঘ ১১ দিন আলোচনার পর দক্ষিণ আফ্রিকার বন্দর নগরী ডারবানে ১৯৫ দেশের প্রতিনিধিরা একটি সমঝোতার কাছাকাছি পেঁৗছেছেন। শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য বহুল প্রত্যাশিত ১০০ বিলিয়ন ডলারের গ্রিন ফান্ড চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে। তবে ফান্ড চূড়ান্ত হলেও এর অর্থের উৎস সম্পর্কে কোনো নির্দেশনা থাকছে না এবং মিটিগেশন খাতে ফান্ডের বেশি অর্থ বরাদ্দ রাখার কথা বলা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেসরকারি খাত থেকে গ্রিন


ফান্ডের অর্থায়নের কথা বলেছে। একই সঙ্গে মৃত্যুর প্রহর গোনা কিয়োটো প্রটোকলকে 'লাইফ সাপোর্ট'-এ বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নিয়েছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। জলবায়ু সম্মেলনের মূল দাবি কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে শিল্পোন্নত দেশগুলোর ওপর শেষ পর্যন্ত কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা থাকছে না। আজ শুক্রবার সম্মেলন শেষ হবে। ডারবান থেকে কী ঘোষণা আসে তার দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ব। গতকাল বৃহস্পতিবার ডারবান রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য একটি খসড়া প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবটি সব মহল কমবেশি গ্রহণযোগ্য মনে করছে। কয়েকটি দেশ প্রস্তাবের কিছু সমালোচনা করেছে। তবে সমঝোতা প্রস্তাবটি পাসের ক্ষেত্রে তারা ভেটো দেবে কি-না সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানায়নি। সম্মেলনে বিরোধপূর্ণ অবস্থানে থাকা চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, রাশিয়া, জাপান, সৌদি আরব, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও ওই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। সম্মেলনে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট অ্যানেক্স-১, উদীয়মান অর্থনীতির জোট বেসিক ও স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর জোট এলডিসি, ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর জোট এওসিস ও আফ্রিকান ইউনিয়নের সম্মিলিত জোটও খসড়া নিয়ে তেমন দ্বিমত করেনি।
এদিকে ডারবান সম্মেলন থেকেই কার্বন নিঃসরণ কমাতে আইনি চুক্তির রূপরেখা
তৈরি এবং ২০১৩ সাল থেকে জলবায়ু তহবিলের অর্থ ছাড় করা শুরু করতে হবে। মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় এ দাবি করেছেন বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ডারবান সম্মেলন সফল না হলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মতো উন্নত দেশগুলোর টাইটানিক জাহাজের মতো অবস্থা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্বের মানুষ তাকিয়ে আছে এ সম্মেলনের দিকে। ফলে কিয়োটো প্রটোকলের মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় বাড়াতে হবে বলে দাবি তোলেন তিনি। বাংলাদেশ তার আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ৩০০ মিলিয়নের বেশি অর্থ অভিযোজন খাতে বরাদ্দ করেছে বলে জানান তিনি। সুইজারল্যান্ডের পরিবেশমন্ত্রী ডিরস লিউথার্ড বলেন, কিয়েটো প্রটোকলের মেয়াদ বাড়াবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কার্বন নিঃসরণকারী বড় দেশগুলোকেই আইনি চুক্তির আওতায় আনা দরকার বলে জোর দেন তিনি। একই অবস্থান ব্যক্ত করেছে ইতালি। গতকাল বৃহস্পতিবার ৮৯ মন্ত্রী নিজ নিজ দেশের অবস্থান তুলে ধরেন। পরে বাংলাদেশ এক সংবাদ সম্মেলনেও একই অবস্থান তুলে ধরে। বাংলাদেশের প্রতিনিধি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ডারবান সম্মেলন পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে না।
সম্মেলনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতিসংঘের বিশেষ উদ্যোগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকার করার ব্যাপারে একমত হয়েছে। খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে অন্য দেশগুলোর মধ্যে যারা রাজি থাকবে তারা একইভাবে নিঃসরণ কমাবে। ২০১৫ সালে গিয়ে মূল্যায়ন করা হবে, কে কতটুকু কমাল। ২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বের সব রাষ্ট্র মিলে একটি নতুন চুক্তি হবে। তবে পরিবেশবাদীরা বলছেন, এতে বিপদ আরও বাড়বে। কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনার চুক্তিতে পেঁৗছানোর আহ্বান জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ মানুষের বসবাসের উপযোগী থাকবে না পৃথিবী। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনও অংশগ্রহণকারী দেশের প্রতিনিধিদের প্রতি কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে একটি চুক্তিতে পেঁৗছানোর আহ্বান জানান। জাতিসংঘের আন্তঃসরকার জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যানেলের (আইপিসিসি) সভাপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ পাচুরি বলেন, কার্বন নিঃসরণের বর্তমান ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে চলতি শতাব্দীর মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা আড়াই থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। এতে এ গ্রহ আরও উত্তপ্ত হয়ে দুর্যোগ ও দুর্ভোগের পরিমাণ বাড়াবে।
২০১২ সালে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া কিয়োটো প্রটোকল চুক্তির সম্প্রসারণ বা এর আদলে নতুন একটি চুক্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শুরুতে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও ব্রাজিলের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে মতৈক্যে পেঁৗছানোর জন্য জোর চেষ্টার পর একমত হয়েছেন নেতারা।
জলবায়ু উদ্বাস্তুদের দায়িত্ব ধনী দেশগুলোকে নিতে হবে : ডারবানের কোয়ান জুলু নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে গ্রিন পিসের নির্বাহী পরিচালক কুমি নাইডু, রাজা দেবাশীষ রায় বলেছেন, জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সম্পূর্ণ দায়িত্ব ধনী দেশগুলোকে নিতে হবে। বাপা, বিপনেটসিসিবিডি, সিসিডিএফ, সিএসআরএল, জুবিলি সাউথ, ইক্যুইটিবিডি, এনসিসিবি সেমিনারের আয়োজন করে। ইক্যুইটিবিডির রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএসআরএলের ড. আহসান উদ্দিন।

No comments

Powered by Blogger.