পথচারীর মৃত্যু, দায় কার by মাসুম মিজান
রাস্তার ফুটপাত ধরে হাঁটছেন? ওপর থেকে পড়তে পারে ইট। ঘটতে পারে ভয়ঙ্কর কোনো দুর্ঘটনা! প্রতি মুহূর্তে এমন আতঙ্কেই পথ চলতে হয় রাজধানীর অলিগলিতে। নির্মাণাধীন ভবন থেকে ইট-পাথর অথবা ভারী কাঠ পড়ে হতাহতের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। অথচ এসব দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্টদের কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে পার পেয়ে যায়।
\এ বিষয়ে আইনের প্রয়োগ নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) মধ্যে রয়েছে সমন্বয়হীনতা। কোনো অঘটন ঘটলেই সংস্থা দুটি একে অপরের ওপর দায় চাপাতে চেষ্টা করে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, 'ডিএমপি কমিশনারের রেগুলেশন্স বিধিমালা প্রণয়ন করার ক্ষমতা'_ আইনের ১-এর (ড) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো দালান, প্লাটফর্ম বা অন্য কোনো কাঠামো নির্মাণ, মেরামত বা ভেঙে ফেলার সময় যদি পথচারী, প্রতিবেশী বা জনসাধারণের বিপদ ঘটার আশঙ্কা থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে দৈহিক বা সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আইনের পরিধি অনুযায়ী ক্ষয়ক্ষতির ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া পুলিশের এখতিয়ার। এ ক্ষেত্রে অপরাধের ধরন দেখে ফৌজদারি কার্যবিধিও প্রয়োগ করা যাবে। অপরদিকে রাজউকের ইমারত নির্মাণ আইনে বলা হয়েছে, প্রতিটি নির্মাণাধীন ভবনের চারপাশে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা বাধ্যতামূলক, যাতে কোনো নির্মাণসামগ্রী ওপর থেকে নিচে পড়তে না পারে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃতভাবে এসব বিধান লঙ্ঘন করলে যদি দুর্ঘটনা ঘটে, এর দায়ভার ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর বর্তায়। এ ক্ষেত্রে হত্যা মামলাও দায়ের করা যেতে পারে। তবে রাজউকের বিধানে ইমারত বিধিমালা না মেনে ভবন নির্মাণের অপরাধে ৭ বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং উভয় দণ্ড দেওয়া যায়।
বেসরকারি আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের এক প্রকৌশলী জানান, মূলত ভবন নির্মাণ ব্যয় কমানোর জন্যই বেষ্টনীসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। অথচ বিধান মানা হলে শ্রমিক মৃত্যুর হার ও ইট পড়ে পথচারী মৃত্যুর ঘটনা রোধ করা সম্ভব হতো।
রাজধানীর পান্থপথে চলতি বছর নির্মাণাধীন বহুতল ভবন থেকে ইট মাথায় পড়ে কলেজছাত্র হাবিবুর রহমান মুন্নার মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত রায়ে সাগুফতা গ্রুপকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন। বেইলি রোডে ইট মাথায় পড়ে সাহাবুদ্দিন নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কয়েক দিনের মধ্যেই মামলার বাদীর সঙ্গে অভিযুক্তদের সমঝোতা হয়ে গেলে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।
এ ব্যাপারে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রোকন-উদ-দৌলা বলেন, ভবন নির্মাণ বিধিমালা মানেন না অধিকাংশ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। তাই বিল্ডিং কোড বা নির্মাণ বিধিমালার বিষয়ে রাজউক কাজ করে যাচ্ছে। গোটা রাজধানীর নির্মাণাধীন ভবন রাজউকের সীমিত জনবল দিয়ে মনিটর করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, নির্মাণাধীন ভবন ঘিরে হতাহতের ঘটনা ঘটলে তা তদারকির দায়িত্ব পুলিশের।
বিল্ডিং কোড লঙ্ঘনের কারণে হতাহতের ঘটনা সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেন, রাজধানীজুড়ে পরিচালিত হচ্ছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ভবন নির্মাণ কাজ। তবে অধিকাংশ নির্মাতাই নিয়ম মেনে কাজ করছেন না। এটা ভবন থেকে নির্মাণসামগ্রী পড়ে হতাহতের ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সম্প্রতি বেশ কিছু আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজধানীর প্রতিটি ফুটপাত পথচারীদের জন্য আরও নিরাপদ করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি সভা শিগগির অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
No comments