ইস্টবেঙ্গল আজও ভোলেনি মুন্নাকে by সনৎ বাবলা

হালের বাংলাদেশ দিল্লিতে লজ্জায় ডুবিয়ে গেলেও গর্বে ভরিয়ে দিলেন মোনেম মুন্না। এ কীর্তিমান ফিরে এসেছেন সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের গল্পে। কলকাতা ইস্টবেঙ্গলের গল্পে-স্মৃতিতে এখনো অম্লান প্রয়াত এ ডিফেন্ডার।
একদা বাংলার ফুটবল দাপটের সুবাদে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনে বাঙালি কর্তাদের আধিপত্য। সেখানেই গতকাল দেখা মিলল কলকাতা ইস্টবেঙ্গলের কর্তা দেবব্রত সরকারের। ফুটবলাঙ্গনে তাঁর পরিচিতি অবশ্য নিতু সরকার


নামেই। ক্লাবের কাজেই এসেছিলেন দিল্লিতে। গল্পে গল্পেই তিনি ফিরে যান ইতিহাসের সোনালি দিনগুলোতে, যেখানে মোনেম মুন্না জ্বলজ্বল করছেন, 'মুন্নার কথা এখনো কানে বাজে। সে বলত, এই জার্সিটা পরলে অন্য রকম শক্তি পাই নিজের মধ্যে। সে খুব ভালোবাসত এ ক্লাবটিকে, খেলতও সে রকম।' দেশের মাঠেও এ ডিফেন্ডার ছিলেন আবাহনীর প্রাচীর হয়ে। যখন ক্যারিয়ারের তুঙ্গে সেই ৯১-৯২-তে তিনি কলকাতা মাতিয়ে গেছেন ফুটবল খেলে। সুবাদে এই বঙ্গে তাঁর বিশাল ভক্তকুলও আছে। তখন প্রতি ম্যাচের জন্য পেতেন ১০ হাজার রুপি করে। মাঠে অসাধারণ খেলে তাঁর পুরোটাই পুষিয়ে দিতেন মুন্না। তাই তো ২০ বছর আগের স্মৃতি এখনো ঝাপসা হয় না ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্মকর্তা নিতু সরকারের চোখে, 'মোহনবাগানের সঙ্গে ম্যাচ, হাফ টাইমে খেলা গোলশূন্য। আমি মুন্নাকে বললাম, এখনো একটা গোল হলো না আমাদের। সে জবাব দিল, চিন্তা করো না, ১০ মিনিটের মধ্যেই হয়ে যাবে। ঠিকই তাই হলো। সব সময় আত্মবিশ্বাসে যেন ভরপুর থাকত এই ফুটবলার।' সুবাদে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা হয়েছিল তাঁর এই বঙ্গে।
পরে আরেকবারও '৯৮-এ এই ক্লাবে খেলতে এসে অবশ্য আগের সেই পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি। তাতে কী, ওই যে আত্মীয়তা হয়েছে তা এখনো অটুট। তাই তো কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ইস্টবেঙ্গল কর্তারাও ছুটে গেয়েছিলেন তাঁর নারায়ণগঞ্জের বাড়ি পর্যন্ত। ভারতে এসেই কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল তাঁর, তারপর বেশ কিছুদিন ঠিকঠাক চললেও শেষপর্যন্ত ধরে রাখা যায়নি তাঁকে। ১৯৯৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৩৯ বছর বয়সে এ ডিফেন্ডার চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। তবে রেখে গেছেন অনেক ফুটবল-কীর্তি, যা এখনো ইস্টবেঙ্গল কর্তা নিতু সরকারের মনকে দোলা দিয়ে যায়, 'কলকাতায় সে থাকত পিয়ারলেস হোটেলে, প্রায় প্রতিদিনই মুন্নার কোনো না কোনো নেমন্তন্ন থাকত। এসব ভালোবাসা তার খেলা দিয়ে জয় করা। এমন ফুটবলার আর উপমহাদেশে জন্মাবে কি না বলা মুশকিল।'
মুন্নার সঙ্গে কলকাতা এসেছিলেন আসলাম-রুমিরাও। তারা ওভাবে সমর্থকদের মনে দাগ কাটতে না পারলেও একটা ব্যাপারে নাকি খুব সিরিয়াস_'মোহনবাগানবিদ্বেষী'। সে তো হবেই, ওপার বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি অনেকখানি যে খুঁজে পাওয়া যায় কলকাতা ইস্টবেঙ্গলে, অধুনা যেটি কিংফিশার ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। ক্লাবটি আধুনিক হচ্ছে, অনেক সংস্কার করে হালের পেশাদার ফুটবল ক্লাবের মতো হতে চাইছে। আধুনিক হলেও সে তার অতীতকে ভোলেনি, ভোলেনি মুন্নাকে।

No comments

Powered by Blogger.