এই বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশ
পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে এমনই দুর্বোধ্য আর রহস্যময় এক দল হয়ে আছে যে গত প্রায় এক দশক এদের বিপক্ষে কোনো সাফল্যই নেই। সেই কবে ১৯৯৯ সালে নর্দাম্পটনে বিশ্বকাপ ম্যাচে এসেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র ওয়ানডে জয়টি। পরের এক যুগে সে সাফল্যের পুনরাবৃত্তির হাহাকার সদ্যসমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজে রীতিমতো আর্তনাদেই রূপ নিয়েছে। নর্দাম্পটন রূপকথা যদি হয় দূর অতীত, তাহলে ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরের মুলতান টেস্টকে
ধরতে হবে বাংলাদেশের নিকট অতীত! আট বছর আগের ঘটনা হলেও সেটাকেই কাছের ধরতে হচ্ছে, কারণ পাকিস্তানের সঙ্গে সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স ওটাই। কিন্তু এবার টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে ওয়ানডের ব্যর্থতা সে স্মৃতিকেও যেন বিবর্ণ করে দিচ্ছে!
তার ওপর চলতি হোম সিরিজে যা পারফরম্যান্স তাতে কোনো সাফল্যের সম্ভাবনাকে আপাতত দূরতম কল্পনা বলেও তো মনে হচ্ছে। তবুও আশায় বসতি গড়তে হয়। অতীতের ছিটেফোঁটা সাফল্য থেকে খুঁজতে হয় ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা। কাল দুপুরে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সংবাদমাধ্যমের জটলা থেকে তাই কেউ একজন শাহরিয়ার নাফীসকে মুলতানে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেন। জানতে চাইলেন গত আট বছরে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা সর্বশেষ সেই টেস্ট থেকে তাঁরা কেউ প্রেরণার সন্ধান করছেন কি না? নাহ্, অত পেছনে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে নাফীসকে খুব একটা আগ্রহী মনে হলো না। কারণ, 'ওটা তো আট বছর আগের ঘটনা। এ সময়ের মধ্যে ক্রিকেটেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমরাও পাল্টেছি। অত পেছনে না গিয়েও তো আমাদের অনুপ্রাণিত হওয়ার মতো পারফরম্যান্স আছে।'
তা হয়তো আছে। কিন্তু এবার টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে ওয়ানডে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে বাংলাদেশের বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ খেলার সামর্থ্য নিয়েই যে প্রশ্ন উঠছে বেশি। চট্টগ্রাম টেস্টটা পঞ্চম দিনে যাবে কি না কিংবা এ টেস্টের আয়ু আসলে কত দিন, বাংলাদেশ দলের জন্য এমন সব বিব্রতকর প্রশ্নই কাল উড়ে বেড়াল কালকের চট্টগ্রামে। যে শহর বাংলাদেশের সৌভাগ্য বয়ে আনে বলেই একটা বিশ্বাস ছিল। সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে সেই বিশ্বাসও চুরমার করে দিয়ে গেছে। পাকিস্তানকে ১৭৭ রানে অল আউট করে দেওয়ার পর মাত্র ১১৯ রানে গুটিয়ে যাওয়া এ বাংলাদেশ দলকেই নিতে হচ্ছে সে দায়ভার। একের পর এক দৃষ্টিকটু হারে বিপর্যস্ত আর পর্যুদস্ত দলটি এখন এমন এক সময়ের সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখান থেকে আট বছর আগের দলকেই মনে হচ্ছে শ্রেয়তর।
তখন টেস্ট ক্রিকেটে তিন বছরও পুরো পার করেনি বাংলাদেশ। তখন বাংলাদেশের টেস্ট মানেই সেটি দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তির সম্ভাবনা জাগিয়ে শুরু হতো। অথচ ২০০৩ সালে পাকিস্তানে তিন টেস্টের সিরিজ খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ দেখা দিয়েছিল অন্য রূপে। করাচিতে সিরিজের প্রথম টেস্ট ৭ উইকেটে হারলেও সেটি পঞ্চম দিনে টেনে নেওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছিল। পেশোয়ারে পরের টেস্টে চার দিন খেলে ৯ উইকেটের হার। তবে মুলতানে তৃতীয় ও শেষ টেস্টে উল্টো পাকিস্তানকে হারের চৌকাঠে নিয়ে দাঁড় করিয়েছিল খালেদ মাহমুদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। সেই টেস্ট খেলা একমাত্র মোহাম্মদ আশরাফুলই এখনো দলে আছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট স্কোয়াড থেকে বাদ পড়া এ সাবেক অধিনায়ক ঘটনাচক্রে দলে ফিরলেন সেই পাকিস্তানের বিপক্ষেই। ইনজামাম-উল হকের এক অতিমানবীয় ইনিংসে সেবার অল্পের জন্য জয়ের তীর থেকে ফিরতে হয়েছিল। ১ উইকেটের হারে যেটি হয়ে আছে বাংলাদেশের কান্নাভেজা টেস্টও।
পরের আট বছরে পাকিস্তানের সঙ্গে আর টেস্টই খেলা হয়নি। এবার এত দিন পর যখন হচ্ছে তখন দেখা যাচ্ছে টেস্টে বাংলাদেশের স্বল্পস্থায়িত্ব নিয়ে আলোচনা। যা আপাতত নাফীসের এ দাবিকেও খারিজ করে দিচ্ছে, 'আট বছরে আমরাও পাল্টেছি।' খুব বেশি পাল্টালে তো আর আগেভাগে চট্টগ্রাম টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়া নিয়ে এত কথা হয় না! এক ওয়ানডে সিরিজের পারফরম্যান্স বাংলাদেশকে কী এক সমস্যার মধ্যেই না ফেলে দিয়েছে!
No comments