পাকিস্তান-মার্কিন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী? by শহিদুল ইসলাম

ক. ২৬ নভেম্বর শনিবার ২০১১ আফগান সীমান্তবর্তী পাখতুন খোয়া অঞ্চলে একটি তল্লাশি শিবিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর হামলায় উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ২৮ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। এই ঘটনায় পাকিস্তান সৃষ্টির পর সারা দেশে যে তীব্র মার্কিনবিরোধী মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে, ইতিপূর্বে তেমনটি আর হয়নি।


পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ মার্কিন বিরোধিতায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং মার্কিন পতাকায় আগুন ধরিয়ে দেয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'কাউকে আমাদের দেশে হামলা চালাতে দেওয়া হবে না। কেউ হামলা চালালে তা বরদাশত করা হবে না।' পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার হিলারি ক্লিনটনকে ফোনে বলেছেন, 'এর ফলে দুদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হবে। এই হামলা প্রমাণ করে, ন্যাটোর কাছে পাকিস্তানিদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। এ ঘটনায় পাকিস্তানজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে।' ওই ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সরকার পাকিস্তান হয়ে ন্যাটোর সব রসদ সরবরাহের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। ক্ষুব্ধ পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রকে ১৫ দিনের মধ্যে শামসি বিমান ঘাঁটি ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। ১১ ডিসেম্বর সে ১৫ দিন শেষ হবে। প্রতিরক্ষা কমিটির এক জরুরি বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও আফগানিস্তানে মোতায়েন ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাসিসট্যান্স ফোর্সের (আইএসএএফ) সঙ্গে কূটনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতাসহ সব ধরনের সহযোগিতা কার্যক্রম পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত হয়। জার্মানিতে অনুষ্ঠিতব্য আফগানিস্তান বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পাকিস্তান অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে ঘটনাটি 'অনভিপ্রেত।' পেন্টাগণ ঘটনা তদন্তে পাকিস্তানকে সহযোগিতার আহ্বান জানালে পাকিস্তান তা প্রত্যাখ্যান করেছে। শুধু তা-ই নয়, পুনরায় আক্রমণের শিকার হলে কোনো অনুমতি ছাড়াই পাল্টা আক্রমণ চালানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে। সে ক্ষেত্রে ওপর মহলের কোনো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। আরেকবার হামলা হলে এবং তাতে যদি কোনো পাকিস্তানি মারা যায়, তাহলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের' অন্যতম প্রধান বন্ধু পাকিস্তান সে যুদ্ধ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকি দেয়। 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে' গত ১০ বছরে ৩৫ হাজার পাকিস্তানি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে তিন হাজারেরও বেশি সেনাসদস্য। অর্থাৎ 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে' গত ১০ বছরে ৩২ হাজারেরও বেশি বেসামরিক সাধারণ মানুষ মারা গেছে। প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি বলেছেন, 'পাকিস্তান-মার্কিন সম্পর্কের কোনো কিছু আর আগের মতো থাকবে না।' ন্যাটো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী বলেছে, 'তা গ্রহণযোগ্য নয়'। কিন্তু ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে যে ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য তারা ক্ষমা চাইবে না। ওবামা নিজেই বলেছেন 'ক্ষমা' চাওয়া হবে না। কিওডাসিটি মার্কিনিদের।
দুই. পাঠকের কাছে ওপরের সব কিছুই আজ জানা। ৫ ডিসেম্বরে জানা গেল যে কড়া গোপনীয়তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র শামসি বিমানবন্দর থেকে তাদের যুদ্ধবিমানগুলো সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে উভয় সরকার কোনো কথা বলছে না। এদিকে পাকিস্তানের 'স্বাধীনতা' ও 'সার্বভৌমত্ব' এবং তার ভৌগোলিক সীমানা লঙ্ঘন করে যুক্তরাষ্ট্র যে জাতিসংঘ সনদের ২(৪) ধারা লঙ্ঘন করে জাতিসংঘের অস্তিত্বের প্রতি বুড়ো আঙুল দেখাল, জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের মধ্যে আমার জানামতে কেবল চীন তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। চীন বলেছে, 'ন্যাটোর বিমান হামলায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত।' চীন মনে করে, 'পাকিস্তানের স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ডের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো উচিত।' (সমকাল ২৯.১১.২০১১)। যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোর ২১টি দেশ এই অপরাধে অপরাধী। জাতিসংঘ যে নীতির ওপর গড়ে উঠেছিল, তা প্রথমেই উচ্চারিত হয়েছে এই বলে �The Organisation is based on the principle of the sovereigin equality of all its Members.� অর্থাৎ জাতিসংঘ গড়ে উঠেছিল এই নীতির ভিত্তিতে যে ছোট-বড়-মাঝারি সব রাষ্ট্রই সমান। অনেকটা রুশোর 'সোশ্যাল কন্ট্রাক্টের প্রথম বাক্যের মতো সব শিশু সমান হয়ে জন্মগ্রহণ করে; কিন্তু সমাজ পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি করে।' অষ্টাদশ শতকে যখন সামন্ততান্ত্রিক অমানবিকতার বিরুদ্ধে বুর্জোয়া-মানবতাবাদ লড়াই করছে, সে সময় রুশোর ওই বক্তব্য ছিল সত্যিই বিপ্লবাত্মক। কিন্তু আজ যখন পুঁজিবাদ বা বুর্জোয়া সভ্যতা তার নখ-দাঁত নিয়ে মানবতাবাদকে ছিন্নভিন্ন করছে, তখন রুশোর সেই কথাটি বিপ্লবাত্মক মনে হয় না। মনে হয়, আজ রুশো নয় আমাদের সুকান্ত ভট্টাচার্য অনেক বেশি সঠিক যখন বলেন, 'অবাক পৃথিবী। এ দেশে জন্মে পদাঘাতই শুধু পেলাম।' মানুষ যেমন সমান হয়ে নয়, একটি শ্রেণীতে জন্মগ্রহণ করে, জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্র সমান_এটাও তেমনি ভুল কথা। যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগী আরো ২৭টি রাষ্ট্রের সেনারা বিনা উসকানিতে বারবার পাকিস্তানের 'স্বাধীনতা', 'সার্বভৌমত্ব' ও ভৌগোলিক সীমানা লঙ্ঘন করে সেই সত্যটিই প্রমাণ করল। বুঝলাম, পাকিস্তান সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের ফসল এবং জন্মের পর সাম্রাজ্যবাদী দোলনায় পরম সুখে দোল খেতে চেয়েছিল। ১৯৫৪ সালের ২ এপ্রিল পাকিস্তান ও তুরস্ক পারস্পরিক দেশ রক্ষা চুক্তিতে সই করে এবং ১৯৫৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ আরো কয়েকটি দেশের সঙ্গে 'সিয়াটো' নামের সামরিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। সেই চুক্তির অন্যতম প্রধান শর্তই ছিল কোনো দেশ পাকিস্তান আক্রমণ করলে চুক্তিভুক্ত দেশগুলো পাকিস্তানের পাশে এসে দাঁড়াবে। পাকিস্তানকে অস্ত্রসজ্জায় সজ্জিত করবে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে বলা যায় মার্কিন সেনাবাহিনীরই বর্ধিত অংশ। ইসরায়েলের মতো বিলিয়নস অব ডলার ঋণ ও সাহায্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বাদামি রঙের মার্কিন সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছে। বিগত ১০ বছরে 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে' যুক্তরাষ্ট্র যে কতবার পাকিস্তান সীমানা লঙ্ঘন করে বেসামরিক শিশু, নারী ও বৃদ্ধ হত্যা করেছে, তার হিসাব দেওয়া আজ সম্ভব নয়। প্রতিবারই পাকিস্তান সরকার মিঠে-কড়া ভাষায় তার প্রতিবাদ জানিয়েছে, 'স্বাধীনতা' ও 'সার্বভৌমত্বের' কথা উল্লেখ করেছে। প্রতিবারই যুক্তরাষ্ট্র 'দুঃখ প্রকাশ' করে বলেছে, ঘটনাটি 'অনভিপ্রেত'। তদন্ত করা হবে। তারপর সব চুপচাপ। আবার যখন সব কিছু ভুলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা করেছে, আবারও একই নাটক অভিনীত হয়েছে। সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী গিলানি বলেছেন, 'যুক্তরাষ্ট্র যত দিন পর্যন্ত পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের প্রতি পুরোপুরি শ্রদ্ধা দেখাবে না, তত দিন পাকিস্তান-মার্কিন সম্পর্ক আর আগের মতো থাকবে না।' পাকিস্তান সরকারের অনুমতি ব্যতিরেকে পাকিস্তানের ভৌগোলিক সীমাকে লঙ্ঘন করে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র সেদিন পাকিস্তানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি বড় ধরনের অবমাননা করেছিল, তখনো পাকিস্তান-মার্কিন সম্পর্ক কিছু দিন উত্তপ্ত ছিল। সেদিনও মার্কিনিদের পাকিস্তানি বিমানবন্দর ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উভয় পক্ষের সমঝোতা হওয়ায় পাকিস্তানকে সে অপমান হজম করতে হয়েছিল।
তিন. এবারে এত বড় ঘটনার পর কী হবে? এর ওপর কদিন আগে সমকালে বদরুদ্দীন উমর একটি সুন্দর বিশ্লেষণমূলক লেখা লিখেছিলেন। লেখাটি হাতের কাছে থাকলে সেখান থেকে কিছু কথার উদ্ধৃতি দিতে পারতাম। তার মূল কথা ছিল এই যে পাকিস্তান যতই হম্বিতম্বি করুক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের এই দ্বন্দ্ব বেশি দিন স্থায়ী হবে না। তার অনেক কারণ উল্লেখ করেছেন উমর। তার অন্যতম প্রধান কারণ দেশটি 'সাম্রাজ্যবাদী সাহায্যের জালে' আটকা পড়েছে। সে দেশে কোনো গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্ম না হওয়ায় সে দেশে সেনাবাহিনী ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রই সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল বলে অনেকেই মনে করেন। সে দেশ অর্থনীতি, সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্রের দখলে। এবং সেই আমলাতন্ত্র পুরোটাই নয়া-সাম্রাজ্যবাদী 'সাহায্যে' গড়ে উঠেছে। কায়ানি বর্তমান সেনাপ্রধান, বর্তমানে পৃথিবীর প্রথম ১০ জন ধনীর একজন বলে কদিন আগে খবর বেরিয়েছে। ইমরান খান বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'বিদেশি, বিশেষ করে মার্কিনি সাহায্যেই সে দেশের ধনিক শ্রেণীর জন্ম।' তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি তার 'সাহায্যের' অস্ত্রটি কিছুটা টাইট করে, তাহলে পাকিস্তানি শাসকশ্রেণীর ত্রাহি ডাক শুরু হয়ে যাবে। লাদেন হত্যার পর যখন পাকিস্তান-মার্কিন সম্পর্ক কিছুটা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র ৭০০ বিলিয়ন ডলারের সাহায্য দিয়ে তা মেরামত করে। ইমরানের ভাষায়, 'সে টাকাটা সবই জেনারেল সাহেবদের পকেটে গেছে। জনগণের কোনো লাভ হয়নি। পাকিস্তানে যদি বাংলাদেশের মতো একটি শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্ম হতো, তাহলে সে দেশে বুর্জোয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটা সম্ভাবনা থাকত। কাজেই বর্তমানে সে দেশের মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ত মার্কিনবিদ্বেষ, ক্রোধ, তাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা পাকিস্তান সরকারের পক্ষে কঠিন নয়। বিদেশি সাহায্য ও ঋণ ছাড়া পাকিস্তান টিকতে পারবে না। তাই উমর সাহেব পাকিস্তানিদের বর্তমান মার্কিন বিরোধিতায় খুব একটা আশাবাদী নন। আমার মনে হয়, তাঁর এই বিশ্লেষণ সঠিক।
চার. তবে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেদিকে কেউ তেমন একটা দৃষ্টি দিচ্ছে বলে মনে হয় না। সেটা আন্তর্জাতিক সমাজ ও জাতিসংঘ। একমাত্র চীন ছাড়া অন্য কোনো রাষ্ট্র ওই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। অথচ যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী জাতিসংঘের ২(৪) ধারার উলঙ্গ লঙ্ঘন করেছে। অথচ জাতিসংঘের মহাসচিব (মার্কিনি ভাঁড়) এবং অন্য সদস্য রাষ্ট্র মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। পাকিস্তানও তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর এত বড় আক্রমণ হলো, বিষয়টি নিয়ে কোনো কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষ করা গেল না। বিষয়টি জাতিসংঘে নিয়ে যাওয়ার তৎপরতা চালানো উচিত বলে মনে হয়। ১৯৫৫ সালে বাজুং সম্মেলনের মাধ্যমে যে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সে সময় জাতিসংঘ অনেকটাই সঠিক ভূমিকা পালন করেছিল। করতে পেরেছিল। পেরেছিল বলেই সত্তর-আশির দশকে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের ওপর মহা খেপা ছিল। ইউনেসকো থেকে সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ২০ বছর যুক্তরাষ্ট্র ইউনেসকোর বাইরে ছিল। বর্তমানে এককেন্দ্রিক বিশ্বে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়েছে। কিন্ত এর পরিবর্তে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী অন্য কোনো জোট গড়ে ওঠেনি। গত ৪ ডিসেম্বর কাগজে প্রকাশ, 'লাতিন আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রবিহীন জোট আত্মপ্রকাশ।' ৩৩টি দেশের সমন্বয়ে একটি নতুন আঞ্চলিক জোট গঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাকে বাদ দিয়ে। এ জোট যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী, এখনই এশিয়া ও আফ্রিকায় আঞ্চলিক সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জোট গড়ে ওঠা দরকার। পরে তিন মহাদেশের আঞ্চলিক জোটগুলো একত্রে একটি বৃহত্তর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জোট গড়ে উঠতে পারে। এমনকি এমনও কথা শোনা যাচ্ছে যে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার প্রাক্তন উপনিবেশগুলোর সমন্বয়ে একটি আলাদা জাতিসংঘ গড়ে উঠতে পারে। পাকিস্তানসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর শিক্ষা নেওয়ার সময় এসেছে নিজেদের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার। জনগণের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে শক্তিশালী করেই পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশ বর্তমানের সাম্রাজ্যবাদের 'সাহায্যের' ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফকে লাতিন আমেরিকা থেকে বহিষ্কারে মোটামুটি সেখানকার সব দেশই ঐকমত্যে পেঁৗছেছে। সেখানকার তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো গরিব দেশগুলোকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
২৬ নভেম্বর ২০১১ এই ঘটনায় উত্তপ্ত পাকিস্তানে সব দল যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে বলে প্রকাশ। কিন্তু সেখানে সব কিছু নির্ভর করে সামরিক বাহিনীর ওপর। ট্রিলিয়নিয়ার সেনাপ্রধান কায়ানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সব বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে স্বস্তি বোধ করবে। কিন্তু আপাতত সব যুব সেনা ও জুনিয়র অফিসারদের ক্রোধকে সামাল দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু সময়ই মহৌষধ। একদিন তাঁদের সে ক্ষোভ ও ক্রোধ ঝিমিয়ে পড়বে। কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সে ক্রোধ বা ক্ষোভের পেছনে না থাকাই সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। ১০-২০ বিলিয়ন ডলার সাহায্যের ঝাঁপি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আবারও শামসি বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারে। পাকিস্তান আবার সব অপমান হজম করে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতম মিত্র হিসেবে 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে' অংশগ্রহণ করবে। এমনটি না হলেই আমরা খুশি হব।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও সমাজ বিশ্লেষক

No comments

Powered by Blogger.