লোডশেডিং বেড়েছে by রুবেল খান

তীব্র দাবদাহে নগরবাসীর এখন ত্রাহি অবস্থা। দুঃসহ এ গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই যেন বাড়ছে লোডশেডিং। প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে ঘন ঘন লোডশেডিং বিষিয়ে তুলছে নগরজীবন। বর্তমানে চট্টগ্রামে চাহিদার তুলনায় স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক কম। চট্টগ্রামের মতো অভিন্ন অবস্থা পুরো দেশের। আশুগঞ্জসহ কয়েকটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় জাতীয় গ্রিড থেকেও পাওয়া যাচ্ছে না আগের মতো বিদ্যুৎ। এসব কারণে চট্টগ্রামে এখন বিদ্যুতের ঘাটতি


অনেক বেশি। প্রতিদিন দুই শতাধিক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি হচ্ছে চট্টগ্রামে। এ কারণে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের খৰ নেমে আসছে নগরবাসীর ওপর। সংশিল্গষ্ট সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে বর্তমানে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের মধ্যে শিকলবাহা পিকিং পাওয়ার প্লান্ট এবং রাউজান তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ২ নম্বর ইউনিটটি বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে শিকলবাহা পিকিং পাওয়ার প্লান্ট গ্যাসের অভাবে বন্ধ থাকলেও রাউজান বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২ নম্বর ইউনিট বন্ধ রয়েছে যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য। গত ২৬ মার্চ ওই ইউনিটে বয়লার বিস্টেম্ফারণ হয়। এর পর থেকেই সেটি বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ওই ইউনিটের মেরামতকাজ চলছে। এ ছাড়া কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে একটি ইউনিট যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রামের অন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো বর্তমানে সচল রয়েছে। এর মধ্যে রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিট থেকে প্রতিদিন ১০০ মেগাওয়াট, কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারটি ইউনিট থেকে ১৪০ মেগাওয়াট, শিকলবাহা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৩৫ মেগাওয়াট, শিকলবাহা রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২৫ মেগাওয়াট, সীতাকুণ্ড রিজেন্ট পাওয়ার প্লান্ট থেকে ২০ মেগাওয়াট এবং মালঞ্চ পাওয়ার প্লান্ট থেকে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ ঘাটতি কমাতে জাতীয় গ্রিড থেকে প্রতিদিন সরবরাহ করা হচ্ছে ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সব মিলিয়ে এখন চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে ৪৫০ মেগাওয়াট। প্রসঙ্গত, বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে চট্টগ্রাম পিডিবি প্রতিদিন বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত শিকলবাহা রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, সীতাকুণ্ড রিজেন্ট পাওয়ার প্লান্ট এবং নগরীর ইপিজেডের মালঞ্চ পাওয়ার পল্গান্টে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনে নিচ্ছে। এর পরও চট্টগ্রামে প্রতিদিন প্রচুর বিদ্যুৎ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৬৫০ মেগাওয়াট। সেখানে প্রতিদিন সরবরাহ করা হচ্ছে ৪৫০ মেগাওয়াট। এতে প্রতিদিন ঘাটতি থাকছে ২শ' মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিছুদিন আগেও চট্টগ্রামে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল। এখন জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে যাওয়ায় চট্টগ্রামে বিদ্যুতের ঘাটতি বেড়ে গেছে। এ কারণে বেড়ে গেছে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণাও। সূত্রমতে, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পেলে চট্টগ্রাম পিডিবি স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন আরও বাড়াতে পারত। চট্টগ্রাম পিডিবির গ্যাসনির্ভর সব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চালু রাখতে হলে প্রতিদিন প্রয়োজন ১৩৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। কিন্তু বর্তমানে এর অর্ধেক গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। গ্যাস সংকটের কারণে বর্তমানে শিকলবাহা পিকিং পাওয়ার প্লান্ট সচল রাখা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ ঘাটতি একটু বেড়েছে স্বীকার করে চট্টগ্রাম পিডিবির সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোঃ মনিরুজ্জামান সমকালকে বলেন, 'চট্টগ্রামে বর্তমানে বিদ্যুৎ ঘাটতি একটু বেড়েছে। এখন প্রতিদিন দুইশ' মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুতের ঘাটতি হচ্ছে। দেশের অন্যান্য স্থানের কয়েকটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় এখন জাতীয় গ্রিড থেকেও আমরা কম বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছি। কিছুদিন আগেও আমরা জাতীয় গ্রিড থেকে প্রতিদিন দুই শতাধিক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতাম, আর এখন পাচ্ছি গড়ে ১২০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় লোডশেডিংও কিছুটা বেড়েছে।'
 

No comments

Powered by Blogger.