গ্রুপ থেকে বিদায় ম্যানইউর, পারল না সিটিও
গত সেপ্টেম্বরে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন অ্যাশলে ইয়ং। নিজেদের মাঠে এফসি বাসেলের বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়ে থাকার পর স্যার অ্যালেঙ্ ফার্গুসনের ভাষায় 'অমার্জনীয় সব ভুলের' খেসারত দিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড পিছিয়ে ৩-২ গোলে। শেষ মুহূর্তে গোল করে ১৭ মাস ঘরের মাঠে অপরাজিত থাকার মানসম্মানটা বাঁচিয়েছিলেন ইয়ং। কিন্তু এবার আর পারলেন না। বাসেলের কাছে ২-১ গোলে হেরে ছয় বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়
নিয়েছে ম্যানইউ, হারের ক্ষতটা আরো জ্বালাময় কারণ গত আসরেই যে ফাইনাল খেলেছিল 'রেড ডেভিল'রা। কপাল মন্দ ম্যানচেস্টারের আরেক দল ম্যানসিটির। সমীকরণটা ছিল তাদের হারাতে হবে বায়ার্ন মিউনিখকে, অন্যদিকে নাপোলির পয়েন্ট খোয়াতে হবে ভিলারিয়ালের কাছে। নিজেদের কাজটা ঠিকই করেছে ম্যানসিটি, কিন্তু ভাগ্য সদয় হয়নি। কারণ অন্যদিকে নাপোলি যে ২-০ গোলের গোলায় ডুবিয়ে দিয়েছে 'হলুদ সাবমেরিন'।
বুধবার রাতের স্কোর কার্ড হয়তো বলবে, এফসি বাসেলের কাছে ২-১ গোলে হেরে চলতি মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ছিটকে পড়েছে ম্যানইউ। কিন্তু বাসেলের কাছে হার ছিল আসলে অন্ত্যেষ্টিক্রীয়া, মরণ তো হয়েছে অনেক আগেই! সি গ্রুপে ম্যানইউ জিতেছে মাত্র দুটি ম্যাচ, রোমানিয়ার অখ্যাত ক্লাব ওতেলুল গালাতির বিপক্ষে। এ ছাড়া গ্রুপের দুই প্রতিপক্ষ, পর্তুগালের বেনফিকা কিংবা সুইজারল্যান্ডের বাসেল, কারো সঙ্গেই জয়ের মুখ দেখা হয়নি ম্যানইউর। তার চেয়ে বড় কথা, ভোঁতা হয়ে গেছে ম্যানইউর আক্রমণভাগ। সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলে টানা ৪ ম্যাচ ধরে ১টির বেশি গোল করতে পারেননি ওয়েইন রুনিরা। শুধুই প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ হিসাব করলে সেই সংখ্যাটা হবে ৭। ছয় বছর আগের একই দিনে, বেনফিকার কাছে হেরে বড়দিনের আগেই চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ছিটকে পড়েছিল ম্যানইউ। সেই দলের রুনি-রোনালদোদের সঙ্গে ছিলেন রয় কিনও, ম্যানইউর হারের পর তার কথায় ম্যানইউর আক্রমণভাগের ব্যর্থতাই স্পষ্ট, '(ম্যানচেস্টার) ইউনাইটেড আসলে যথেষ্ট গোল করতে পারেনি, তারা বাসেল বা বেনফিকার কাউকেই হারাতে পারেনি। আমার মনে হয় তারা সত্যিকারে যা, ফলে তাই প্রতিফলিত হয়েছে।' বাঁ প্রান্ত থেকে শাকিরির ক্রসে স্টিলারের জোরালো শটে ম্যাচের নবম মিনিটেই এগিয়ে যায় স্বাগতিক বাসেল, সেই সঙ্গে ঝাপসা হতে থাকে ম্যানইউর রাউন্ড অব সিঙ্টিনে খেলার সম্ভাবনা। এরপর ম্যানইউর ক্রমাগত ব্যর্থতায় ম্যাচ গড়ায় শেষ অঙ্কে, স্বপ্ন তখন শেষ সময়ে অলৌকিক কোনো গোলের। গোল হলো, তবে বাসেলের। আলেঙ্ান্ডার ফ্রেই, যিনি ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেও ম্যানইউর জালে দুবার বল পাঠিয়েছিলেন, তিনি সেইন্ট জ্যাকব পার্কেও দেখা দিলেন ঘাতকের ভূমিকায়। নিখুঁত নিশানায় হেড করে বল পাঠালেন জালে, সেই সঙ্গে নিভে গেল শেষ দেউটি। ৮৭ মিনিটে তাঁকে যখন মাঠ থেকে উঠিয়ে নিচ্ছেন কোচ, পুরো মাঠ দাঁড়িয়ে তাঁকে দেখাল বীরের সম্মান। ৮৮ মিনিটে ফিল জোনস একটা গোল শোধ করে খেলায় কিছুটা উত্তেজনা ফিরিয়ে এনেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ব্যবধান কমানোর সান্ত্বনা হয়েই স্কোর কার্ডে বসল।
জয়ের পরে শোকের আবহ সিটি অব ম্যানচেস্টার স্টেডিয়ামেও, ডেভিড সিলভাও ইয়া ইয়া তুরের গোলও যে তাদের পেঁৗছে দিতে পারেনি শেষ ষোলোয়। শুধু বায়ার্নের বিপক্ষে জয় নয়, বৈতরণী পার হতে দরকার ছিল ভিলারিয়ালের সঙ্গে নাপোলির জয় ছাড়া অন্য কোনো ফল। কিন্তু ইনলার ও হামসিকের গোল ভেঙে দিয়েছে 'সিটিজেন'দের সেই স্বপ্ন। প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ দুই দল যখন ইউরোপের সেরা ক্লাব প্রতিযোগিতায় প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেয়, তখন কোচদের আর কি-ই বা বলার থাকে। দীর্ঘ কোচিং জীবনে অনেক উত্থান-পতন দেখা স্যার অ্যালেঙ্ ফার্গুসন যেমন শোনাচ্ছেন ধ্বংসস্তূপ থেকে মাথা তোলার আশার বাণী, 'আমরা হতাশ, এই সময় অন্য কোনো অনুভূতি নিশ্চয়ই পাব না! কিন্তু এটাই ফুটবল, হতাশার সঙ্গে লড়াই চলবেই। অতীতে হতাশাকেই অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে এই ক্লাব অনেকবারই ঘুরে দাঁড়িয়েছে।' অন্যদিকে রবার্তো মানচিনি দোষ দিচ্ছেন ভাগ্যকে, 'সাধারণত ১০ পয়েন্ট নিয়ে সব দলই পার হয়ে যায়, শতকরা ৯৯ ভাগ সময়ই এমনটা হয়। কিন্তু এই গ্রুপটা অদ্ভুত, বেশ কঠিন।' অন্যদিকে ডিয়েগো ম্যারাডোনা-যুগের পর ২১ বছর পর আবারও চ্যাম্পিয়নস লিগের নক আউট পর্বে জায়গা করে নিয়েছে নাপোলি। আর খুশিতে ডগমগ বাসেল কোচ হেইকো ভোগেল তো বলেই দিয়েছেন, 'অদ্ভুত রোমাঞ্চ হচ্ছে। রোজ রোজ তো ম্যানইউকে হারানো হয় না!' তবে বুধবার রাতের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটা উপহার দিয়েছে অলিম্পিক লিওঁ। শেষ ষোলোয় উঠতে তাদের শুধু ডায়নামো জাগরেবের বিপক্ষে জিতলেই চলত না, বাড়াতে হতো গোল ব্যবধান। ৭-১ গোলের জয়ে তাই আয়াঙ্কে পেছনে ফেলে তারাই গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে। আয়াঙ্কে ৩-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলোতে পা রেখেছে রিয়াল মাদ্রিদ। এএফপি/এপি/রয়টার্স
No comments