ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা-মন্ত্রণালয়গুলোকে ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ

লতি অর্থবছর থেকে শুরু হওয়া পাঁচ বছরমেয়াদি (২০১১-১৫) ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। প্রতিবেদন তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবকে সভাপতি করে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করতে হবে। মন্ত্রণালয়গুলোর তৈরি করা এ প্রতিবেদন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগে (জিইডি) পাঠাতে হবে। জিইডি এসব প্রতিবেদন মূল্যায়ন করবে।


গতকাল ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন-পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন সম্পর্কিত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির প্রথম সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।\পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকারের সভাপতিত্বে স্টিয়ারিং কমিটির সভায় অন্যদের মধ্যে জিইডির সদস্য ড. শামসুল আলম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ইকবাল মাহমুদ, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সচিব মোজাম্মেল হক খান, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। গত ২০ নভেম্বর ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অগ্রগতি ও মূল্যায়ন সার্বিকভাবে তদারকির জন্য পরিকল্পনামন্ত্রীকে সভাপতি করে ৩০ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়। গতকাল ছিল এ কমিটির প্রথম বৈঠক।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জিইডি সদস্য ড. শামসুল আলম জানান, মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে পাঠানো প্রতিবেদন মূল্যায়ন করে জিইডি আগামী এপ্রিলে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রকাশ করবে। গতকালের সভায় বৈদেশিক ঋণের অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্প দ্রুত শেষ করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'চলতি অর্থবছরের চার মাসে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ অনুমোদন হয়েছে। অথচ আলোচ্য সময়ে অর্থ ছাড় হয়েছে মাত্র আড়াই হাজার কোটি টাকা।' এ ছাড়া বৈঠকে এখন থেকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে প্রকল্প গ্রহণ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অগ্রগতি মূল্যায়ন ও তদারকি করতে গঠিত স্টিয়ারিং কমিটি একটি কার্যকরী পরিবীক্ষণ কাঠামো তৈরি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে : পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় খরচ হওয়া অর্থ গতানুগতিক ধারায় পরিবীক্ষণ করা হবে না। তা ছাড়া শুধু অর্থ ব্যয় করাই একমাত্র লক্ষ্য হবে না। চলতি বছর থেকে জিইডি ও আইএমইডি সম্মিলিতভাবে পরিকল্পনা দলিল নিয়মিত মূল্যায়ন করবে। পরিকল্পনার আওতায় গৃহীত প্রকল্পগুলো মূল্যায়ন করবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়গুলোর সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। পরিকল্পনামন্ত্রীর নেতৃত্বে জিইডি নিয়মিতভাবে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতগুলোর মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। প্রতিবেদনগুলো মন্ত্রিসভা, সংসদীয় উপকমিটি ও পরিকল্পনা কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
গতকালের স্টিয়ারিং কমিটিতে জানানো হয়, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দলিলে কয়েকটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দারিদ্র্য নিরসন ও বৈষম্য হ্রাস, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট উত্তরণ, মানব সম্পদ উন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ওপর জোর দেওয়া, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, নারী-পুরুষের সমতা, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও সুশাসন।
বৈঠকে আরো জানানো হয়, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে রাজস্ব আয় জিডিপির ১২.৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ২০১৫ সালের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা, বার্ষিক রেমিট্যান্স আয় ১৮ বিলিয়ন উন্নীত, বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২৫ শতাংশে উন্নীত করা, রপ্তানি আয় ২৪ শতাংশে উন্নীত করা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে খরচ ৩ শতাংশ উন্নীত, দারিদ্র্য সাড়ে ২২ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.