সরকারি স্কুলে ভর্তি-প্রথম শ্রেণীতে শুধু লটারি বয়সসীমা সাত by অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য

রকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষে (২০১২) ভর্তির জন্য নীতিমালা জারি করেছে সরকার। এর ফলে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স শিক্ষাবর্ষের ১ জানুয়ারিতে পাঁচ থেকে সাত বছর বয়সের মধ্যে হতে হবে। বয়স নির্ধারণের জন্য ভর্তির আবেদন ফরমের সঙ্গে জন্মনিবন্ধনের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে। এ ছাড়া সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির ক্ষেত্রে লটারি হবে না। ভর্তির সর্বোচ্চ ফি রাখা হয়েছে ৭০০ টাকা।


নীতিমালায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ কোটা রাখার কথা বলা হয়। এ ছাড়া বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, স্কুল অ্যান্ড কলেজ পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে অনুরূপ আদেশ মানতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় (শাখা-১১) থেকে বেসরকারি বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ভর্তির ক্ষেত্রে এ আদেশসংবলিত একটি পরিপত্র জারি করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেছেন, আগে বেসরকারি পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটাভিত্তিক ভর্তি করা হতো না। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো নীতিমালা করা হচ্ছে। আগামী ১১ ডিসেম্বর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য খসড়া নীতিমালা নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে।
ভর্তি পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও এবার নিরাপত্তা কঠোর করা হয়েছে। উত্তরপত্রের রোল নম্বরের সিরিয়াল না করে শ্রেণীভিত্তিক ১০০টি করে বান্ডিল করা হবে। এরপর কমিটির কাছে তা জমা দেওয়া হবে। কমিটি উত্তরপত্রে কোড নম্বর দেবে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা-সংশ্লিষ্ট কোনো শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হবে না। কোড নম্বর দেওয়া শেষে কোড স্লিপ উত্তরপত্র থেকে আলাদা করে বিদ্যালয় ও শ্রেণীভিত্তিক প্যাকেট করে সিলগালা করা হবে। সিলগালা করা কোড স্লিপ কমিটির হেফাজতে থাকবে, যা শুধু ডিকোডিংয়ের সময় খোলা হবে। প্রতিটি ক্লাস্টারের মূল কেন্দ্রে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হবে। এক বিদ্যালয়ের উত্তরপত্র অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মূল্যায়ন করবেন। প্রতি গ্রুপ পরীক্ষককে টেবুলেশন শিট সরবরাহ করা হবে। টেবুলেশন শিটে কোনো ধরনের ঘষামাজা করা যাবে না। সব প্রক্রিয়া শেষ করে শিক্ষার্থীদের মেধা তালিকা ও অপেক্ষমাণ তালিকা মাউশি, জেলা প্রশাসক ও বিদ্যালয়গুলো একই সঙ্গে প্রকাশ করবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, গত বছর রাজধানীর একটি সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সময় মেধা তালিকা না টাঙিয়ে অপেক্ষমাণ তালিকাকেই মূল তালিকা হিসেবে টাঙিয়ে দেওয়া হয়। এতে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া ১২১ শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেনি। এ বছর যাতে এ রকম না হয় সে জন্য উত্তরপত্র মূল্যায়নে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তি-সংক্রান্ত নীতিমালাটি জারি করা হয়। পরে নীতিমালাটি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে সারা দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছেও নীতিমালাটি পাঠানো হয়।
নীতিমালায় দেখা গেছে, ঢাকা মহানগরীতে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে মাউশির মহাপরিচালককে প্রধান করে ১৩ সদস্যের, জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসককে প্রধান করে আট সদস্যের এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে চার সদস্যের পৃথক তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। ভর্তি কমিটির উপস্থিতিতে এ কাজ শেষ করা হবে। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে নির্বাচিত শিক্ষার্থী ভর্তি না হলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হবে। ভর্তি পরীক্ষার জন্য স্কুলগুলোকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাক্রম অনুসারে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী বাছাই-প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। দুই ঘণ্টার ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা ৩০, ইংরেজি ৩০ এবং গণিতে ৪০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে।
এ ছাড়া নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর ভর্তির ক্ষেত্রে মোট আসনের ১০ শতাংশ সংরক্ষিত থাকবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে নীতিমালায় বলা হয়েছে, 'মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা এবং পুত্র-কন্যা পাওয়া না গেলে পুত্র-কন্যার পুত্র-কন্যাদের ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ থাকবে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ২ শতাংশ কোটা বরাদ্দ থাকবে। ভর্তির আবেদন ফি রাখা হয়েছে ১০০ টাকা এবং ভর্তির ক্ষেত্রে সেশন ফিসহ সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা।'

No comments

Powered by Blogger.