র ঙ বে র ঙ-অদ্ভুত শিল্পবোধ...

ক্ষিণ আফ্রিকার মালিতে বাস করে দোগোন নামে এক আদিবাসী গোষ্ঠী। জাতি হিসেবে তারা যেমন অদ্ভুত, তাদের কাজকর্মও তেমনি বিস্ময়কর। এরা দীর্ঘদিন ধরে শিল্পচর্চা করে আসছে। বলা যায়, তা চলছে বংশানুক্রমে। এ জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীরা কখনও ঘটা করে তাদের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী করে না। কারও কাছ থেকে বাহবাও চায় না। বরং শিল্পকর্মগুলো লুকিয়ে রাখে সযত্নে। দক্ষিণ আফ্রিকার এ জাতিগোষ্ঠী শিল্প আর সংস্কৃতির জন্য বিশ্ববাসীর কাছে


ব্যতিক্রম জাতি হিসেবে পরিচিত। দোগোনদের শিল্পচর্চা বহু যুগের অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। ভাস্কর্য শিল্পে তারা অনন্য। কাঠ, পাথর এবং কখনও কখনও ধাতব পদার্থ দিয়ে তারা ভাস্কর্যগুলো তৈরি করে থাকে। শিল্পকর্ম তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ আর ধর্মীয় কাজে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মুখোশ তৈরিতে তারা অত্যন্ত পারদর্শী। এ ছাড়া তাদের আছে ঐতিহ্যবাহী নাচ। দোগোনরা তাদের বংশানুক্রম সংরক্ষণ করে বিশেষ পদ্ধতিতে। সবচেয়ে বয়স্করাই পরিবার প্রধান হয়ে থাকে। মজার ব্যাপার হলো দোগোনদের মধ্যে বহু বিবাহের রীতি না থাকলেও পুরুষরা চারটি বিয়ে করতে পারে।
দোগোনদের গ্রাম বেশ সুন্দর। বাড়িঘরগুলোও শৈল্পিক। তারা মোটামুটি চার ধরনের ঘর বানায়। এর একটিতে রাখে শস্য। যার বাড়ির শস্যভাণ্ডার যত বড়, তাকে তত ধনী হিসেবে গণ্য করা হয়।
নারীদের জন্যও বিশেষ ঘর বানানো হয়। সেই ঘরে পুরুষদের ঢোকা সম্পূর্ণ নিষেধ! এমনকি কোনো নারীর স্বামীও প্রবেশের অধিকার রাখে না। এ ঘরে সংরক্ষিত থাকে নারীর পোশাক-আশাক, গয়না, অর্থসহ নারীদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। দোগোন নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়। আছে পুরুষদের ঘরও। এ ঘরে আবার নারীদের প্রবেশ নিষেধ। এটি ব্যবহৃত হয় দরবার ও বিশ্রামের জন্য।
গ্রামের বাইরে আরেক ধরনের বিশেষ ঘর থাকে। এ ঘরগুলোও শুধু নারীদের জন্য। তৈরি করে তারাই। মাসের একটা বিশেষ সময়, মানে ঋতুকালীন সময়ে নারীরা এ ঘরে অবস্থান করে। এ সময় তারা একা একাই বসবাস করে। তবে শিশু সন্তান থাকলে তাকে সঙ্গে নেয়। দোগোনরা নিজেদের ভাষায় কথা বলে। আচার-অনুষ্ঠানের জন্য আছে আলাদা ভাষা। সেই ভাষা কেবল পুরুষরাই জানে। নারীদের জানতে মানা।
অদ্ভুত এ জাতিগোষ্ঠীর বিশ্বাস_ বস্তুমাত্রই প্রাণের অধিকারী। তাই তারা পূজা করে প্রকৃতির। কারণ, প্রকৃতির মাঝেই সবাইকে বিলীন হতে হবে। জেগে উঠলে প্রকৃতির মাঝেই উঠতে হবে।
সোহাগ আহমেদ

No comments

Powered by Blogger.