টেস্ট তো আরো বেশি ভয়ের by মাসুদ পারভেজ

ট্টগ্রাম টেস্টের আগে যেন হারানো দিনের গানই বেজে চলেছে কেবল!\এ ধরনের গান সাধারণত মানুষকে নস্টালজিক করে তোলে। ব্যস্ত করে তোলে স্মৃতি রোমন্থনে। কিন্তু বাংলাদেশ দলকে তা আকৃষ্ট করতে পারছে না কিছুতেই। এটা তাদের জন্য বিতৃষ্ণারই। আর তা হবেই বা না কেন? এটা যে টেস্টে বাংলাদেশের হারানো দিনের গান! যে গানের ছন্দ-তাল-লয় কেটে যেত খুব দ্রুতই। একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশের টেস্ট মানেই ছিল বড়জোর


তিন-সাড়ে তিন দিনের মামলা! এবারও তা-ই হয়ে যায় কি না সেই ভয়!\চট্টগ্রামে আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া টেস্ট সিরিজের আগে তেমন সম্ভাবনার উঁকিঝুঁকি দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই। সেটি ওয়ানডে সিরিজে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্সের ফল। তার ওপর প্রতিপক্ষ পাকিস্তান বলে কথা। যাঁরা শত বিতর্কের মাঝেও ঠিকই পরাক্রমশালী দল হয়ে উঠতে জানে। জানে বলেই একদিকে স্পট ফিঙ্ংিয়ে জড়িত থাকা ক্রিকেটাররা জেলে গেলেও অন্যদিকে মাঠের পারফরম্যান্সে দলটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সেটি কী টেস্ট কী ওয়ানডেতে। ওয়ানডেতে টানা ছয়টি সিরিজ জেতার রেকর্ড গড়া দলটা সর্বশেষ চারটি টেস্ট সিরিজের একটাতেই কেবল জেতেনি। তাই বলে হারেওনি। নিউজিল্যান্ডের মতো বিরুদ্ধ কন্ডিশনে যেমন জিতে এসেছে তেমনি সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রীলঙ্কাকেও হারিয়ে এসেছে। আর বাংলাদেশও গত কয়েক বছরে টেস্টের আয়ুষ্কাল আগের মতো অতটা
কমিয়ে ফেলেনি ঠিক, তাই বলে এমন কোনো হাতি-ঘোড়াও হয়ে যায়নি। সেই তারা যখন ব্যাটসম্যানদের সৌজন্যে ওয়ানডেতে গড়াগড়ি খায় এবং বাগে পেয়েও পাকিস্তানকে হারাতে পারে না, তখন টেস্ট সিরিজে তাদের সম্ভাবনা নিয়ে বাজি ধরায় ঝুঁকি থাকেই। ওয়ানডে সিরিজেই যেভাবে পাকিস্তানের স্পিনারদের সামলাতে গিয়ে ব্যর্থতায় ডুবেছিলেন ব্যাটসম্যানরা, সেখানে টেস্টে খাবি খাওয়ার সম্ভাবনা আরো বেশি। এখানে তো আর বোলারদের কোটা শেষ হয়ে যাওয়ার ব্যাপার নেই। কাজেই টেস্টে তাঁরা কত তাড়াতাড়ি গুটিয়ে যাবেন, সে বিষয়ক আলোচনায় কিনা ইউনিস খানকেও টেনে আনা হলো কাল।
দুপুরে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুশীলনে নামার আগে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হতে আসা এ সাবেক অধিনায়ককে এ জাতীয় একাধিক প্রশ্ন করা হলো। বাংলাদেশ এ টেস্টকে কত দূর টেনে নিয়ে যেতে পারবেন বলে আশা করছেন? এমন এক প্রশ্নের জবাব হাসতে হাসতে দিলেন এভাবে, 'আল্লাহই জানেন।' ওয়ানডে সিরিজে যেমন দেখেছেন তার ভিত্তিতে নিশ্চিত করে তো বলার উপায় নেই যে বাংলাদেশ শেষদিন পর্যন্ত নিয়ে যাবে। আবার প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে না দেওয়ার ক্রিকেটীয় ভদ্রতাও কথায় থাকতে হয়। দুয়ে মিলে এমন এক উপসংহারেই পেঁৗছাতে পারলেন শুধু, 'আমার মনে হয় তারা যদি পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলতে পারে, তাহলে ম্যাচ পঞ্চম দিন পর্যন্ত যেতে পারে।'
যেতে পারে যদি ব্যাটসম্যানরা ওয়ানডের ব্যর্থতা টেস্টে ঝেড়ে ফেলতে পারেন। শাহরিয়ার নাফীস সে আশার কথা শুনিয়েও গেলেন। কিন্তু হতাশা থেকে বেরুনোর জন্য টোটকার আশ্রয়ও তো নিতে দেখা গেল তাঁকে, 'ধরে নিতে চাই যে যা-ই হয়েছে, ভালোর জন্যই হয়েছে।' কিন্তু এসব সংস্কারে তো আর কিছু হয়ে যায় না। টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করতে হলে নিজেদের সামর্থ্য মেলে ধরতে হয়। এবার আবার উইকেটও বাংলাদেশের জন্য বাড়তি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে উল্টো পাকিস্তানের স্পিনাররা ফায়দা লুটে নিচ্ছেন। চট্টগ্রামের উইকেটও বরাবরই স্পিনসহায়ক। ওয়ানডের অভিজ্ঞতায় টেস্টে সেটিকে ব্যাটিংসহায়ক করে তোলার নির্দেশনা থাকলেও এত অল্প সময়ের নোটিশে তো আর সেটি করে ফেলা যায় না। কাজেই মোহাম্মদ হাফিজ ও সাঈদ আজমলদের বিষাক্ত স্পিনে আবারও নীল হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
সেটি সত্যি হলে দ্রুত টেস্ট শেষ হওয়ার সম্ভাবনা। যে সম্ভাবনাকে খারিজ করে দেওয়ার জন্য এমন আশার বাণী শোনালেন নাফীস, 'অবশ্যই এ বিশ্বাস আমাদের আছে যে টেস্ট পঞ্চম দিনে যাবে। এ বছর জিম্বাবুয়ে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে টেস্ট পঞ্চম দিনে গেছে। তবে ইদানীং টেস্ট ম্যাচের ফল কিন্তু চার দিনেই হয়ে যাচ্ছে। তবে চতুর্থ বা পঞ্চম দিনে যাবে কি যাবে না, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমরা দুটো ইনিংস ব্যাটিং পাব এবং দুই ইনিংসেই বড় স্কোর করতে হবে। যাতে বোলারদের জন্য যথেষ্ট সুযোগ করে দেওয়া যায়। ভালো করতে পারলে কেন পাঁচ দিনে যাবে না? এটা আমরা আগেও করেছি এবং আবারও করতে পারি।'
সেই সঙ্গে আরেকবার এ দৃশ্যের পুনরাভিনয়ও দেখতে চান, 'ওরাও কিন্তু যথেষ্ট সংগ্রাম করেছে রান করতে গিয়ে। তাই শুধু যে আমরাই ভালো ব্যাটিং করতে পারিনি তা নয়, পাকিস্তান দলেরও ব্যাটিং করতে কষ্ট হয়েছে।' কিন্তু নিজেদের কষ্ট যাতে আবার বেশি না হয়ে যায়, সে জন্য অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান এনে দল ভারী করেছেন নির্বাচকরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট স্কোয়াড থেকে বাদ দেওয়ার সময় তারা একরকম পণই করেছিলেন যে বছরখানেকের মধ্যে আর মোহাম্মদ আশরাফুলের কথা ভাববেন না। তিনিও জাতীয় লিগে রানে থাকায় এবং ব্যাটসম্যানরা রান করতে ভুলে যাওয়ায় এক সিরিজের মধ্যেই আবার আশরাফুলের শরণাপন্ন হলেন তাঁরা। আর ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দুর্ভাগ্যে খুলে যাওয়া সৌভাগ্যের দরজা দিয়ে আজ টেস্ট ক্রিকেটের কঠিন জগতে প্রথমবারের মতো ঢুকে পড়ছেন নাজিমউদ্দিনও। আজ বাংলাদেশের ৬৪তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট অভিষেকেই তাঁকে তামিম ইকবালের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করার গুরুদায়িত্ব নিতে হচ্ছে। তিনে নাফীস, চার-পাঁচ-ছয়-সাতে আশরাফুল-মুশফিক-সাকিব-মাহমুদ উল্লাহ। এরপরে নাসির হোসেন আর ইলিয়াস সানি। দ্বিতীয় পেসার হিসেবে রুবেল হোসেনের সঙ্গী হওয়ার কথা শাহাদাত হোসেনেরই। যদিও সেটা আজ সকালে ফিটনেস টেস্টে পাস করা সাপেক্ষে।
ওয়ানডে সিরিজ থেকে বোলাররা ভালো করছেন ঠিক কিন্তু বিপর্যয় এড়াতে এবার ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে রান চাই-ই চাই। সেটা হলে হারানো দিনের গান থামিয়ে বর্তমানে ফেরা যায়! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যে বর্তমান মাসখানেক আগেই দেখেছেন নাফীসরা!

No comments

Powered by Blogger.