ওয়াশিংটন টাইমসে খালেদার নিবন্ধ-বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা চাই
বাংলাদেশের 'গণতন্ত্র রক্ষায়' যুক্তরাষ্ট্রকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন টাইমসে তাঁর এক লেখায় তিনি এ আহ্বান জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন টাইমসে তাঁর এক লেখায় তিনি এ আহ্বান জানান।
গতকাল বুধবার ৩০ জানুয়ারি প্রকাশিত ওই পত্রিকার মতামত পাতার লেখাটিতে খালেদ জিয়া বলেছেন, 'গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ার পথ থেকে সরে এসে এখন কেবল একটি পরিবারের ক্ষমতার বেড়াজালে আবদ্ধ হতে চলেছে।'
খালেদা জিয়া লিখেছেন, 'যদি বাংলাদেশ একটি পরিবারের শাসনের অধীনে আটকা পড়ে যায়, তাহলে তা হবে গোটা অঞ্চলের জন্য এক পা পেছনে চলে যাওয়া।'
খালেদা জিয়া আরো বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এলে ভোটারদের সম্মানীত করা হবে- এ কথা বলে চাপ প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র ব্রিটেনের। এটি নিশ্চিত করতে তাদের কথা এবং কাজকে আরো জোরালো করতে হবে, যাতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে সরে না যায়।'
খালেদা জিয়া বলেন, 'দারিদ্র্য দূরীকরণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে ভূমিকা রেখেছেন তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস এবং ব্রিটিশ সংসদকে তাঁর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে।'
খালেদার পুরো মতামত : ২০১৩ সাল কি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের জন্য সন্ধিক্ষণ হতে যাচ্ছে? ১৫ কোটি মানুষের আমার এই দেশ ভারত আর মিয়ানমারের মাঝামাঝি অবস্থিত। সেই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় যুক্তরাষ্ট্র ছিল অন্যতম দেশ, যারা আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের বিষয়কে স্বীকৃতি দিয়েছিল। অথচ গত কয়েকটি বছরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অবশ্য আঙুল তোলা যায়। কারণ ক্রমেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ছে এবং অন্যান্য বিশ্বশক্তির দিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ঝুঁকে পড়ছে অথচ তারা তেমন কিছু করছে না।
তার অর্থ এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার, কংগ্রেস এবং তাদের সংস্থাগুলো কোনো কিছুই করেনি। ছয় মাস আগে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য প্রতিশ্রুত প্রায় ২০০ কোটি ডলার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। চার মাইল দীর্ঘ এই সেতু ৪০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। বিশ্বব্যাংক এই অর্থ প্রত্যাহারের সময় মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির তদন্তের দাবি করে।
একই সময় নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তাঁর গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে দেওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল ককাস বাংলাদেশ সরকারের, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছে। বাংলাদেশের এই ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করেছে। মুহাম্মদ ইউনূসকে সরিয়ে দেওয়ার কারণ কী? অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, 'এই নোবেল পুরস্কার ভুল লোকের হাতে পড়েছে। যদি বাংলাদেশে কেউ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য হন তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।'
বেশির ভাগ বাংলাদেশি অবশ্য হাসিনার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দাবির ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশ করবে। শুধু জিজ্ঞেস করুন প্রায় ৩০০ নিখোঁজ মানুষের পরিবারকে, যারা র্যাবের হাতে নিখোঁজ হয়েছে। অথবা চিন্তা করে দেখুন খুন হয়ে যাওয়া শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের পরিবারের কথা। আমিনুলের পক্ষ হয়ে এখন এএফএল-সিআইও প্রচারণা চালাচ্ছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য খাতে বাংলাদেশকে তার অগ্রাধিকারের তালিকা থেকে বাদ দেয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় নৃশংসতায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়েছে যেসব রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে, তাঁদের সমর্থকরাও হাসিনার নোবেল পুরস্কারের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কেবল রাজনৈতিক বিরোধীদের বিচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতও হাসিনা সরকারের সমালোচনা করেছেন। গত ডিসেম্বর মাসে ইকোনমিস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত ইমেইল এবং ফোনালাপ প্রমাণ করে, এই বিচারকাজ নিয়ে হাসিনা প্রশাসন কী ধরনের কুকর্ম করছে এবং তারা কিভাবে হাসিনার রাজনৈতিক বিরোধীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাঁয়তারা করছে।
গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ার পথ থেকে সরে এসে এখন কেবল একটি পরিবারের ক্ষমতার বেড়াজালে আবদ্ধ হতে চলেছে। সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ফেলার পদক্ষেপ নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। অথচ এই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান আনার জন্য তিনি নিজেই একসময় সহায়তা করেছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান একটি অবাধ এবং মুক্ত নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিয়ে আসছে। যদি ভোটাররা নতুন কোনো সরকারের জন্য ভোট দেয় তাহলে ক্ষমতার হাতবদল অবশ্যই হতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের পর লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানালেও হাসিনা তাঁর অবস্থানে অটল রয়েছেন। তাঁর ধারণা, মানুষের সমর্থন না থাকলেও এভাবে তিনি ক্ষমতায় আবারও আসতে পারবেন।
পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার সফর করেছেন, যা দেশটিকে নির্বাসন থেকে ফিরিয়ে এনেছে। ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রিক দেশ হিসেবে তার উত্থান অব্যাহত রেখেছে। যদি বাংলাদেশ একটি পরিবারের শাসনের অধীনে আটকা পড়ে, তাহলে তা হবে গোটা অঞ্চলের জন্য এক পা পেছনে চলে যাওয়া। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নিয়ে এখন আশা বাড়ছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলের স্বাধীনতাকে সমর্থন দিয়েছে। বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকলে মানুষের সুযোগ হবে ব্যালটের মাধ্যমে তাদের মতকে স্বাধীনভাবে প্রকাশ করার।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে ভোটারদের সম্মানিত করা হবে, এ কথা বলে চাপ প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র বৃটেনের। এটি নিশ্চিত করার জন্য তাদের কথা এবং কাজকে আরো জোরালো করতে হবে, যাতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে সরে না যায়। দারিদ্র্য দূরীকরণে মুহাম্মদ ইউনূস যে ভূমিকা রেখেছেন তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস এবং ব্রিটিশ সংসদকে তার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে। যদিও শেখ হাসিনা এ ধরনের স্বীকৃতি পেতে আগ্রহী।
শেখ হাসিনার কাছে তাদের পরিষ্কার করতে হবে, শ্রমিক সংগঠনগুলো এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের মত প্রকাশের সুযোগ না দিলে বাণিজ্য খাতে অগ্রাধিকার প্রত্যাহার করা হবে। সরকারের যেসব লোক গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারকে তোয়াক্কা করছে না তাদের চলাফেরার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। তাদের এসব প্রকাশ্যেই বলা উচিত, যাতে করে সবাই তা দেখতে এবং শুনতে পায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র অব্যাহত রাখার যে মিশন নিয়েছে এ পদ্ধতির মাধ্যমে তারা সেই মিশনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
কথায় আছে, আইনের আদালতের চেয়েও বড় হচ্ছে বিবেকের আদালত। শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, বিচার এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ নিরাপদ- বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে এ কথা বলা অসম্ভব। বরং সেগুলো এখন ভীষণ বিপদের মধ্যে রয়েছে। এখন সময় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্ববাসীর এগিয়ে আসার, যাতে করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নিরাপদ থাকে।
খালেদা জিয়া লিখেছেন, 'যদি বাংলাদেশ একটি পরিবারের শাসনের অধীনে আটকা পড়ে যায়, তাহলে তা হবে গোটা অঞ্চলের জন্য এক পা পেছনে চলে যাওয়া।'
খালেদা জিয়া আরো বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এলে ভোটারদের সম্মানীত করা হবে- এ কথা বলে চাপ প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র ব্রিটেনের। এটি নিশ্চিত করতে তাদের কথা এবং কাজকে আরো জোরালো করতে হবে, যাতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে সরে না যায়।'
খালেদা জিয়া বলেন, 'দারিদ্র্য দূরীকরণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে ভূমিকা রেখেছেন তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস এবং ব্রিটিশ সংসদকে তাঁর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে।'
খালেদার পুরো মতামত : ২০১৩ সাল কি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের জন্য সন্ধিক্ষণ হতে যাচ্ছে? ১৫ কোটি মানুষের আমার এই দেশ ভারত আর মিয়ানমারের মাঝামাঝি অবস্থিত। সেই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় যুক্তরাষ্ট্র ছিল অন্যতম দেশ, যারা আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের বিষয়কে স্বীকৃতি দিয়েছিল। অথচ গত কয়েকটি বছরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অবশ্য আঙুল তোলা যায়। কারণ ক্রমেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ছে এবং অন্যান্য বিশ্বশক্তির দিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ঝুঁকে পড়ছে অথচ তারা তেমন কিছু করছে না।
তার অর্থ এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার, কংগ্রেস এবং তাদের সংস্থাগুলো কোনো কিছুই করেনি। ছয় মাস আগে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য প্রতিশ্রুত প্রায় ২০০ কোটি ডলার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। চার মাইল দীর্ঘ এই সেতু ৪০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। বিশ্বব্যাংক এই অর্থ প্রত্যাহারের সময় মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির তদন্তের দাবি করে।
একই সময় নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তাঁর গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে দেওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল ককাস বাংলাদেশ সরকারের, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছে। বাংলাদেশের এই ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করেছে। মুহাম্মদ ইউনূসকে সরিয়ে দেওয়ার কারণ কী? অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, 'এই নোবেল পুরস্কার ভুল লোকের হাতে পড়েছে। যদি বাংলাদেশে কেউ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য হন তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।'
বেশির ভাগ বাংলাদেশি অবশ্য হাসিনার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দাবির ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশ করবে। শুধু জিজ্ঞেস করুন প্রায় ৩০০ নিখোঁজ মানুষের পরিবারকে, যারা র্যাবের হাতে নিখোঁজ হয়েছে। অথবা চিন্তা করে দেখুন খুন হয়ে যাওয়া শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের পরিবারের কথা। আমিনুলের পক্ষ হয়ে এখন এএফএল-সিআইও প্রচারণা চালাচ্ছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য খাতে বাংলাদেশকে তার অগ্রাধিকারের তালিকা থেকে বাদ দেয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় নৃশংসতায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়েছে যেসব রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে, তাঁদের সমর্থকরাও হাসিনার নোবেল পুরস্কারের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কেবল রাজনৈতিক বিরোধীদের বিচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতও হাসিনা সরকারের সমালোচনা করেছেন। গত ডিসেম্বর মাসে ইকোনমিস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত ইমেইল এবং ফোনালাপ প্রমাণ করে, এই বিচারকাজ নিয়ে হাসিনা প্রশাসন কী ধরনের কুকর্ম করছে এবং তারা কিভাবে হাসিনার রাজনৈতিক বিরোধীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাঁয়তারা করছে।
গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ার পথ থেকে সরে এসে এখন কেবল একটি পরিবারের ক্ষমতার বেড়াজালে আবদ্ধ হতে চলেছে। সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ফেলার পদক্ষেপ নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। অথচ এই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান আনার জন্য তিনি নিজেই একসময় সহায়তা করেছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান একটি অবাধ এবং মুক্ত নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিয়ে আসছে। যদি ভোটাররা নতুন কোনো সরকারের জন্য ভোট দেয় তাহলে ক্ষমতার হাতবদল অবশ্যই হতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের পর লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানালেও হাসিনা তাঁর অবস্থানে অটল রয়েছেন। তাঁর ধারণা, মানুষের সমর্থন না থাকলেও এভাবে তিনি ক্ষমতায় আবারও আসতে পারবেন।
পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার সফর করেছেন, যা দেশটিকে নির্বাসন থেকে ফিরিয়ে এনেছে। ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রিক দেশ হিসেবে তার উত্থান অব্যাহত রেখেছে। যদি বাংলাদেশ একটি পরিবারের শাসনের অধীনে আটকা পড়ে, তাহলে তা হবে গোটা অঞ্চলের জন্য এক পা পেছনে চলে যাওয়া। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নিয়ে এখন আশা বাড়ছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলের স্বাধীনতাকে সমর্থন দিয়েছে। বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকলে মানুষের সুযোগ হবে ব্যালটের মাধ্যমে তাদের মতকে স্বাধীনভাবে প্রকাশ করার।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে ভোটারদের সম্মানিত করা হবে, এ কথা বলে চাপ প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র বৃটেনের। এটি নিশ্চিত করার জন্য তাদের কথা এবং কাজকে আরো জোরালো করতে হবে, যাতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে সরে না যায়। দারিদ্র্য দূরীকরণে মুহাম্মদ ইউনূস যে ভূমিকা রেখেছেন তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস এবং ব্রিটিশ সংসদকে তার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে। যদিও শেখ হাসিনা এ ধরনের স্বীকৃতি পেতে আগ্রহী।
শেখ হাসিনার কাছে তাদের পরিষ্কার করতে হবে, শ্রমিক সংগঠনগুলো এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের মত প্রকাশের সুযোগ না দিলে বাণিজ্য খাতে অগ্রাধিকার প্রত্যাহার করা হবে। সরকারের যেসব লোক গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারকে তোয়াক্কা করছে না তাদের চলাফেরার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। তাদের এসব প্রকাশ্যেই বলা উচিত, যাতে করে সবাই তা দেখতে এবং শুনতে পায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র অব্যাহত রাখার যে মিশন নিয়েছে এ পদ্ধতির মাধ্যমে তারা সেই মিশনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
কথায় আছে, আইনের আদালতের চেয়েও বড় হচ্ছে বিবেকের আদালত। শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, বিচার এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ নিরাপদ- বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে এ কথা বলা অসম্ভব। বরং সেগুলো এখন ভীষণ বিপদের মধ্যে রয়েছে। এখন সময় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিশ্ববাসীর এগিয়ে আসার, যাতে করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নিরাপদ থাকে।
No comments